নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা না মেনে শিশুদের নির্বাচনী প্রচারে শামিল করার অভিযোগ উঠল বিজেপি-র বিরুদ্ধে। বিরোধীদের দাবি, 'ম্যায় ভি চৌকিদার' লেখা প্ল্যাকার্ড-সহ একদল শিশুর ভিডিও ইউটিউব এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে প্রচার করছে কেন্দ্রের শাসকদল। এমনকি, ওই ভিডিওতে সামরিক বাহিনীর পোশাকও ভোটপ্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাবের দ্বারস্থ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। কিন্তু দেড় সপ্তাহ কেটে গেলেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন সেই চিঠির উত্তর দেওয়া দূরের কথা, প্রাপ্তিস্বীকার পর্যন্ত করে নি বলে অভিযোগ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের।
নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচন চলাকালীন ভোটের প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি ভিডিও তৈরি করেছে বিজেপি। সেগুলির প্রায় প্রতিটিতেই শিশুদের ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও তারা হাতে 'ম্যায় ভি চৌকিদার' লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে রয়েছে, কোথাও প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছে। কোথাও "ঘরে ঢুকে মারার" কথাও প্ল্যাকার্ডে লিখে প্রদর্শন করছে শিশুরা।
একটি ভিডিওতে একজন শিশুকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "শিশুরা ভোট দিতে পারে না, কিন্তু অবশ্যই কাউকে সমর্থন করতে পারে। আমার দেশই আমার ধর্ম, দেশই আমার বাবা-মা। যে এই দেশকে সম্মান করবে, আমি তাকেই সমর্থন করব। আমি এখনও ভোট দিতে পারি না ঠিকই, কিন্তু অবশ্যই সমর্থন করতে পারি।"
রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ''২০১৫ সালের জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট অনুযায়ী এই ঘটনা নিশ্চিতভাবে শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ। আমরা মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে চিঠি দিয়ে বলেছি, এই শিশুদের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার করার জন্য শিখিয়ে-পড়িয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।'' তাঁর কথায়, ''আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, প্রায় দেড় সপ্তাহ হয়ে গেল, ওঁরা চিঠির উত্তর দেওয়া তো দূরস্থান, প্রাপ্তিস্বীকারটুকুও করলেন না। আমরা ফের চিঠি দেব।''
বিষয়টি নিয়ে বিজেপি-কে বিঁধেছে বিরোধীরাও। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ''ওদের সংস্কৃতিটাই এমন। ভোটে জেতার জন্য ফুলের মতো শিশুদের ব্যবহার করতেও বাধে না!'' সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কথায়, ''যারা রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র হাতে শিশুদের হাঁটায়, তাদের কাছে এমনটাই প্রত্যাশিত। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও দুর্ভাগ্যজনক। তাঁরা নিরপেক্ষ হলে ব্যবস্থা নিতেন।''
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ''আমাদের হারাতে সকলেই একজোট। নিশ্চিত পরাজয় বুঝে তৃণমূল-সিপিএম ভুল বকছে।''