সিপিআইএম মানেই চুলে পাক ধরা নেতাদের সমারোহ,পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে কৌট ঝাঁকিয়ে পয়সা তোলা। এমন একটা ধারণা দীর্ঘ দু-তিন দশক ধরে তৈরি হয়ে আছে বাংলার জনগনের মনে। এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে গিয়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের সিপিআইএম নেতারা যা করে বসলেন তা কার্যত নজিরবিহীন। একদল শিশু ও নাবালককে সিপিএমের পদযাত্রার প্রথম সারিতে হাঁটতে দেখা গেল। শুধু হাঁটলই না, লাল ঝাণ্ডা কাঁধে পদযাত্রায় বড়দের সঙ্গেই গলা ফাটিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান তুলল শিশু ও নাবালকের দল।
পঞ্চায়েত ভোটর আগে সিপিআইএম পার্টির হয়ে শিশু ও নাবালকরা এমন অতি সক্রিয় হয়ে ওঠায় দলের নেতারাও যেন বেশ উৎফুল্ল। যদিও তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছে, এখন সিপিএম যে সাংগঠনিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়়েছে তা এ দিনেপ পদযাত্রাই প্রমাণ করল।
বছর ঘুরলেই এই রাজ্যে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ’চলো গ্রামে যাই’ এই কর্মসূচি নিয়েছে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস। এর পাল্টা, সদস্য সংগ্রহ অভিযান শেষ করেই সিপিআইএম 'গ্রাম জাগাও- বাংলা বাঁচাও' কর্মসূচি নিয়ে পথে নেমে পড়ছে। সিপিআইএমের যুব সংগঠনের (DYFI) জামালপুর ১ আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক সন্দীপ সাঁতরা তাঁদের সেইসব কর্মসূচির বেশকিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। এমনকী তিনি সেই পোস্টটি সিপিআইএমের জামালপুর ১ আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র সহ ৫৬ জনের ফেসবুক প্রোফাইলে ট্যাগও করেছেন।
সেই ভিডিওগুলিতে দেখা যাাচ্ছে, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে স্লোগান দিতে দিতে সিপিআইএমের পদযাত্রা গ্রামের রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে। সেই পদযাত্রার একেবারে প্রথম সারিতে থেকে লাল ঝান্ডা কাঁধে নিয়ে একদল শিশু ও নাবালক গলা ফাটিয়ে স্লোগান দিতে দিতে হাঁটছে। ভিডিও-তে শোনা যাচ্ছে, পদযাত্রায় থাকা দলের বয়স্ক কেউ ওই কচিকাচাদের আরও জোরে স্লোগান দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।
শুধু পদযাত্রার এই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করাই নয়, মিছিলে অংশ নেওয়া শিশু ও নাবালকদের বাম প্রীতির তারিফও করেছেন ডিওয়াইএফআই (DYFI)নেতা সন্দীপ সাঁতরা। এই বিষয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, 'এ এক নতুন ভোরের লড়াই। ছোটো ছোটো কুঁড়িদের ফোটবার সংগ্রাম চলছে চলবে। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াই লড়তে হবে, এ লড়াই জিততে হবে।'
কিন্তু যে খুদেদের পড়াশুনায় মগ্ন থাকার কথা, স্কুলে ও খেলার মাঠে থাকার কথা, তাঁদের রাজনীতির ময়দানে নামিয়ে সিপিআইএম কী ঠিক কাজ করেছে? জবাবে সন্দীপ সাঁতরা বলেন, 'দিন কয়েক আগে জামালপুরের রামনাথপুর থেকে জ্যোৎশ্রীরাম ও পাঁচড়া থেকে চৌবেড়িয়া পর্যন্ত তাঁদের দলের পদযাত্রা হয়। এই দুই পৃথক পদযাত্রায় শিশু ও নাবালকরা সামিল হয়। তবে দলের কোন নেতৃত্ব ওই শিশু ও নাবালকদের উৎসাহিত করে পদযাত্রায় সামিল করায়নি। ওইসব শিশুদের বাবা মায়েরা পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন। তা দেখে তাঁদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও পদযাত্রায় পা মেলায়।' সেই কারণেই নাকি দলীয় নেতৃত্বের কেউ তাঁদের ওই পদযাত্রা থেকে সরিয়ে দেননি বলে সন্দীপ সাঁতরার দাবি।
বিষয়টি নিয়ে সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেনও একই সাফাই দিয়েছেন।
তবে সিপিআইএম নেতৃত্বের এই সাফাই মানতে চাননি তৃণমূল ও বিজেপি নেতারা। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যর মুখপত্র দেবু টুডু বলেন, 'বাংলার মানুষ আর সিপিআইএম পার্টির পাশে নেই। তাই সাংগঠনিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়া দলের নেতারা এখন শিশু ও নাবালকদের কাঁধে ভর দিয়েই অস্তিত্ব জানান দেবার চেষ্টা চালাচ্ছে।'
জেলা বিজেপির সহ সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'শিশু ও নাবালকরা কেউ ভোটার নয়। তাঁরা রাজনীতির কিছু বোঝেও না। তা জেনেও সিপিআইএম নেতারা তাঁদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সামিল করিয়ে গর্হিত অপরাধ করেছে। সাংগঠিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়াতেই সিপিআইএম খড়কুটোর মতো যাকে পারছে তাকেই আঁকড়ে ধরছে।'
চাইল্ড লাইনের পূর্ব বর্ধমান জেলা কোঅর্ডিনেটর অভিজিৎ চৌবে এই প্রসঙ্গে বলেন, 'শিশুদের হাতে পার্টির ঝান্ডা ধরিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সামিল করানোটা একেবারেই অনুচিত কাজ হয়েছে। এমনটা চলতে থাকলে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাবে। বাচ্চাদের স্কুলমুখী করে তাঁদের হাতে পেন,বই, খাতা তুলে দিয়ে শিক্ষার আলো দেখানোটাই কাম্য হওয়া উচিৎ। তাতেই সমাজেরও ভালো হবে।'