Advertisment

জটিল রহস্য-ভেদ, মাত্র পাঁচ ঘন্টায় পাচার হওয়া কোলের শিশুকে ফিরে পেলেন মা

হার মানাবে যেকোনও থ্রিলারকে।

IE Bangla Web Desk এবং Rajit Das
New Update
chinsurah police rescued the trafficked child in just five hours , জটিল রহস্য-ভেদ, মাত্র পাঁচ ঘন্টায় পাচার হওয়া কোলের শিশুকে ফিরে পেলেন মা

অভিযুক্তদের কোর্টে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসে শিশুপুত্রকে হারিয়ে ছিলেন মা। পুলিশি তৎপরতায় পাওয়া গেল সেই শিশুকে। না হারিয়ে যায়নি। শিশুটিকে লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে বেচে দেওয়া হয়েছিল। ধরা পড়েছে ৫ জন। বৃহস্পতিবার রাতে চুঁচুড়া বড়বাজার অঞ্চলের এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। শুক্রবার ধৃতদের আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। এই পাচার চক্রের সঙ্গে আর কেউ যুক্ত রয়েছে কিনা তার তদন্ত করছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতরা হলেন রমেন দেবনাথ, কাকলি চক্রবর্তী, পিঙ্কি গুপ্তা, বেবি অধিকারী এবং সংগীতা বিশ্বাস।

Advertisment

এই ঘটনার পেছনে রয়েছে একটি রুদ্ধশ্বাস কাহিনী। বৃহস্পতিবার বিকেলে চুঁচুড়া থানা এলাকার বাসিন্দা মামনি ওঁরাও নামে এক গৃহবধূ অভিযোগ করেন তাঁর ৬ মাসের শিশুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা স্বামী, স্ত্রী বাচ্চাকে নিয়ে চুচুড়ার বড়বাজারে পূর্ব পরিচিত পিঙ্কি দেবীর বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে আসেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সুরা পানের আসর বসেছিল। সেই সময় মামনি ঘুমিয়ে পড়ে ছিলেন। উঠে দেখেন তাঁর শিশুটি গায়েব!

কোথায় গেল ৬ মাসের শিশুটি? মামনির দাবি, তাঁকে পিঙ্কি ও তাঁদের বাড়ির লোকজনেরা বলেছিলেন যে স্বামী সন্তানকে নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। কিন্তু মামনি বাড়ি গিয়ে সন্তানকে আর পাননি। তাঁর স্বামীও জানায় সে একাই বাড়ি ফিরেছে। গতকাল বিকেলে এই অভিযোগ পেয়েই চুঁচুড়া থানার আইসি অনুপম চক্রবর্তী তৎপর হয়ে ওঠেন শিশুটিকে খুঁজে বার করতে। বাছাই করা কিছু অফিসার নিয়ে স্পেশাল টিম তৈরি হয়। সেই টিম কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে তদন্তে নামে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান হয়।

মিসিং লিঙ্ক মেলে সংশ্লিষ্ট এলাকার একটি সিসি টিভির ফুটেজ থেকে। সেখানে দেখা যায় পিঙ্কির নাবালক ছেলে মায়ের স্কুটি চালাচ্ছে, আর পিছনের আসনে শিশু কোলে মায়ের বান্ধবী সঙ্গীতা বসে রয়েছেন। আটক করা হয় পিঙ্কি এবং সঙ্গীতাকে। লাগাতার পুলিশি জেরায় পিঙ্কি স্বীকার করেন যে তাঁরাই শিশুটিকে চুরি করে চন্দননগরে একজনকে বিক্রি করে দিয়েছেন।

এরপর যত রাত বাড়তে থাকে রহস্যের জটও খুলতে থাকে। চন্দননগর পুলিশের সহযোগিতায় চন্দননগর বিবির হাটের বাসিন্দা একটি ক্লিনিকের কর্ণধার রমেন দেবনাথের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় শিশুটি। গ্রেফতার হয় রমেন। রমেন দাবি করেন দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ওই শিশুটিকে তিনি বৈধ উপায়ে দত্তক নিয়েছেন। কারণ তাঁর পুত্র সন্তান চাই।

কিন্তু কীভাবে মামনির বাচ্চা রমেনের কাছে গেল? তারও এক কাহিনী আছে। এর যোগসূত্র ওই ক্লিনিকের একজন মহিলা কর্মচারী কাকলি চক্রবর্তী। রমেন এর কন্যাসন্তান আছে, কিন্তু পুত্র নেই। তাই তাঁর একটা পুত্র সন্তানের দরকার ছিল। কাকলিকে তাই রমেন বলেছিলেন যে, যেভাবেই হোক একটি পুত্র সন্তান তাঁকে জোগাড় করে দিতে হবে। কাকলি সঙ্গে পরিচয় ছিল সঙ্গীতার। সঙ্গীতা আবার পিঙ্কির বন্ধু। পিঙ্কি জানতো মামনিরা খুব গরিব। ঠিক মতো সন্তান প্রতিপালন করতে পারেন না। তাই ফন্দি আটে তাঁর শিশুটিকে চুরি করার। তাই নিমন্ত্রনের নাম করে তাদের বাড়িতে ডাকেন। এরপর খাওয়া-দাওয়া শেষে নেশার জিনিসও খাওয়ানো হয় মামনি দের। মামনিরা বেহুঁশ হয়ে পড়লে বাচ্চাটিকে চুরি করা হয়। আর এই কাজে সঙ্গ দেন পিঙ্কির দুই সহচরী সঙ্গীতা আর বেবি।

পুলিশ জানিয়েছে কাকলি বাচ্চা এনে দেবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রমেন এর কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেয়। এরপর নিজে এক লাখ কুড়ি হাজার রেখে বাকি ৩০ হাজার সঙ্গীতাকে দেয় বাচ্চাটিকে এনে দেওয়ার জন্য। এদিন চন্দননগর কমিশনারেটের ডিসি ভিদিতরাজ বুন্দেশ বলেন, 'অভিযোগ পাওয়ার ঘন্টা চারেকের মধ্যে পুলিশের এই ডিটেকশন চন্দননগর কমিশনারেটকে গর্বিত করল।'

Hooghly Chinsurah Chandannagar
Advertisment