পঞ্চমীর রাতেই উদ্বোধনের কথা ছিল পুজা মণ্ডপের। কিন্তু তার আগেই অগ্নিকাণ্ডে সব কিছুই যেন শেষ হয়ে গিয়েছিল। পুজো কমিটির কর্মকর্তারা হতাশ হলেও ভেঙে পড়েননি। আবারও নতুন করে শুরু হয় পুজো মণ্ডপ তৈরির কাজ। হবিবপুর থেকে নিয়ে আনা হচ্ছে রেডিমেড দুর্গা প্রতিমা। মালদার ইংরেজবাজারের ২ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রভবন সংলগ্ন এলাকার "আমরা সবাই" ক্লাবে এখন অসংখ্য শ্রমিক দিয়ে চলছে পুজো মণ্ডপ তৈরির কাজ।
বৃহস্পতিবার রাতে আচমকা আগুন লেগে পুড়ে যায় মালদার ইরেজবাজারের এই পুজো মণ্ডপটি। অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত করেছেন পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব। ঘটনাস্থলে এসে তদারকি করে গিয়েছেন জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া, ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলার সুমলা আগারওয়ালরা। প্রশাসনের কর্তা থেকে পাড়া-প্রতিবেশীরা পুজো উদ্যোক্তাদের মনোবল বাড়াতে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আর তারপরেই রাত পেরিয়ে শুক্রবার মহাষষ্ঠীর সকাল থেকেই শুরু হয়েছে নতুন করে পুজোর প্রস্তুতি।
এদিকে পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে শর্ট সার্কিট থেকে কোনওভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। মণ্ডপে থাকা তুলো, শোলা সহ বিভিন্ন শুষ্ক সামগ্রী থেকে আগুন ধরে যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুজোমণ্ডপকে রক্ষা করা যায় নি।
ইংরেজবাজারের রবীন্দ্রভবন এলাকার "আমরা সবাই" পুজো কমিটির সম্পাদক বিপুল দাস বলেন, "গত ১০ বছর ধরে সাধারণভাবেই আমাদের দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। এই বছরই প্রথম প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করে পুজোর থিম করা হয়েছিল "স্বর্গ"। যেখানে ব্রহ্মা-বিষ্ণু, মহেশ্বর থেকে শুরু করে নানা দেবদেবী তৈরি করা হয়েছিল। পুজো মণ্ডপে দেবী দুর্গার সঙ্গে ছিলেন অন্য দেবতারাও। তুলো-সহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়েই তৈরি হয়েছিল মণ্ডপ।"
বৃহস্পতিবার রাতে আচমকা অগ্নিকাণ্ডে দেবী প্রতিমা সহ পুরো মণ্ডপটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে দমকলের দুটি ইঞ্জিন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুজো কমিটির সম্পাদকের কথায়, "কীভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটল কিছুই বুঝতে পারলাম না। এরপরই ঘট পুজো নিয়েই ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল আমাদের মধ্যে। কিন্তু পুলিশ, প্রশাসন, পুরসভা সকলের সহযোগিতা পেয়ে আবার নতুন করেই পুজো শুরু করছি।"
আরও পড়ুন- তাকলাগানো প্রতিভা! ঠাকুর তৈরিতে হাতেখড়িই হয়নি, এহেন খুদের দারুণ কীর্তি চর্চায়!
শুক্রবার সকাল থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় মণ্ডপ গড়ার। ষষ্ঠীর রাতের মধ্যেই পুজোর মণ্ডপ তৈরির কাজ শেষ করতে অসংখ্য শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। পুজো কমিটির সম্পাদক বলেন, "অদ্ভুতভাবে হবিবপুরের এক মৃৎশিল্পীর কাছে রেডিমেড বানানো দেবী দুর্গার খোঁজ পেয়ে গিয়েছি। সেই প্রতিমা এবারে পুজো মণ্ডপে বসানো হবে। তবে যাই হোক না কেন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা হতাশ হলেও ভেঙে পড়েননি। তাঁরাই এখন নতুন ভাবে পুজো করতে চলেছেন।"
এলাকার কাউন্সিলর তথা ইংরেজবাজার পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুমলা আগারওয়ালা বলেন, "এই ক্লাবটি প্রতি বছরই খুব সুন্দরভাবে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে থাকে। হঠাৎ একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সব নয় ছয় হয়ে গিয়েছিল। আমরা চাই ওই ক্লাবে নতুন ভাবেই মূর্তি তুলে পুজো হোক। আর সেটাই সংশ্লিষ্ট ক্লাবের কর্মকর্তারা করে দেখাচ্ছেন। আমরা তাঁদের সব রকমভাবে সহযোগিতা করছি।"