একদিকে মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ধরে হবু ডাক্তারদের 'শেম, শেম' চিৎকার। অন্যদিকে একাধিক কাউন্সিলরের নেতৃত্বে কয়েকশো তৃণমূলকর্মীর হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়া, জুনিয়র ডাক্তারদের 'দেখে নেওয়ার' হুমকি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝটিকা সফরকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবারের এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল যেন কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হল।
এদিন সকাল থেকেই এসএসকেএম-এর এমারজেন্সির সামনে ভিড় করেছিলেন কয়েকশো জুনিয়র জাক্তার। এনআরএস হাসপাতাল কাণ্ডের প্রেক্ষিতে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ইন্টার্ন ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা। বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের ঘিরে ব্যারিকেড তৈরি করেছিল পুলিশ। দুপুর ১২টা নাগাদ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং বিধায়ক নির্মল মাজিকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে ঢোকার পর উত্তেজনা চরমে ওঠে। আন্দোলনকারীদের স্লোগানের অভিমুখ ঘুরে যায় রাজ্য সরকারের বিরোধিতায়। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে 'হায়, হায়' ও 'শেম শেম' ধ্বনি দিতে থাকেন তাঁরা। এক পর্যায়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত ঘেরাও করে ফেলেন আন্দোলনকারীরা। তার মধ্যেই পুলিশের সহায়তা নিয়ে এমারজেন্সিতে ঢুকে পড়েন মমতা। সেখানে এক রোগীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন তিনি। ইতিমধ্যেই এমারজেন্সির বাইরে বিক্ষোভরত জুনিয়র ডাক্তারের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন: এনআরএসকাণ্ডে তৃণমূলের জন্য ‘লজ্জিত’ ববি কন্যা
মিনিট দশেক পর মুখ্যমন্ত্রী এমারজেন্সি থেকে বেরিয়ে এসে পোর্টেবল হ্যান্ড-মাইকে অপেক্ষারত রোগীর আত্মীয়দের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে শুরু করেন। মমতার গলার আওয়াজ ছাপিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় তাঁদের। তার মধ্যেই আন্দোলনকারীদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে ভাষণ শেষ করে মমতা সুপারের ঘরের দিকে চলে যান। প্রায় ঘন্টা দুয়েক সেখানেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন তিনি।
এই সময় কিছুক্ষণের জন্য এমারজেন্সির বাইরের চত্বর সম্পূর্ণভাবে আন্দোলনকারীদের দখলে চলে যায়। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর দেড়টা নাগাদ ছবিটা বদলাতে শুরু করে। একের পর এক ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল কর্মীরা এসএসকেএম-এ আসতে থাকেন। প্রথমে অনুগামীদের নিয়ে উপস্থিত হন পুরসভার ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসীম বসু। এরপর ৭২, ৭৩, ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কয়েকশো তৃণমূল কর্মী এমারজেন্সির সামনে চলে আসেন। তাঁদের দেখে আন্দোলনরত চিকিৎসকেরাও পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন। দৃশ্যতই আগ্রাসী তৃণমূলকর্মীরা জুনিয়র ডাক্তারদের "দেখে নেওয়ার" হুমকি দেন। এই পর্যায়ে অরূপ বিশ্বাস বেরিয়ে এসে দলীয় কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। পুলিশকর্তাদের একাংশও বিক্ষোভরত ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ পুলিশ জোর করে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান তুলে দেয়। আন্দোলনকারীরা পিছু হটে অ্যাকাডেমিক ভবনের দিকে চলে যান।
দুপুর দুটো নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী ফের এমারজেন্সির সামনে চলে আসেন। সেখানে তখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত। মমতা এমারজেন্সির ভিতরের অবস্থা পরিদর্শন করে হাসপাতাল ছাড়েন।
আন্দোলনকারীদের অন্যতম ওঙ্কার দে হাজরা বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে আমাদের হুমকি দিলেন, তা রাজ্যের ভাবমূর্তির পক্ষে লজ্জাজনক। ওঁর উপস্থিতিতেই তৃণমূল কর্মীরা আমাদের হুমকি দিলেন, পুলিশ গায়ের জোরে অবস্থান তুলে দিল। এই আচরণ চরম স্বৈরাচারের নিদর্শন।"