গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রেশন দুর্নীতি মামলায় মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি গোয়েন্দারা। সেদিন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে ওই তল্লাশির প্রতিবাদ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। হুমকির সুরে বলেছিলেন, 'জ্যোতিপ্রিয়র স্বাস্থ্য খারাপ। সুগার আছে। যদি মারা যায় তবে বিজেপি এবং ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর করব।' কিন্তু তাতে মন্ত্রীর গ্রেফতারি আটকায়নি। হাসপাতাল থেকে মুক্তির পর গতকাল থেকে জ্যোতিপ্রিয়কে জেরা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এই অবস্থায় বুধবার ফের রেশন দুর্নীতি প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। বামেদের ঘাড়েই দায় ঠেলেছেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়েছেন ধৃত মন্ত্রীর।
কেন দায়ী বামেরা?
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'আজ সিপিএম বড় বড় কথা বলছে। আদালত, ইডি বা সিবিআই-কে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত রয়েছে। কিন্তু সেই নিয়ে কিছু বলব না আমি। কিন্তু বলে রাখছি, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম, ১ কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড ছিল। ১ কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড থাকার অর্থ, সেই রেশন কেউ না কেই তুলতেন! সেই টাকা কোথায় যেত? আজ পর্যন্ত তদন্ত হয়েছে?'
'আমরাই দুর্নীতি ধরেছি'
রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পরই রেশন কার্ড ডিজিটালকরণের কাজ শুরু হয় বলে দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেছেন, 'আমরা রেশন কার্ড ডিজিটালকরণ শুরু করি। সেই কাজে সাত-আট বছর সময় লেগেছে। ১ কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করেছি আমরা। মানুষের প্রাপ্য রেশন নিয়ে বিক্রি করে দিত দালালরা। আমরাই ধরেছি। গ্রেফতার হয়েছে। রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ ছিল। অনেক রেশন দোকান বাতিল করতে চেয়েছিলান। কিন্তু পারিনি। কারণ কোর্টের নির্দেশ মানতে হয়েছে। বার বার কোর্টে ছুটতে হয়েছে। বিচারপতিদের নিয়ে কিছু বলব না। কিন্তু বার বার দৌড়নো, বার বার স্থগিতাদেশের ফলে দুই-তিন বছর মরিয়া লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু কোভিডে একজন মানুষও অনাহারে মারা যাননি। বরং ওই সময় বেশি চাল দিয়েছি। একটি পরিবারও বলতে পারবেন না যে রেশন পাননি।'
জ্যোতিপ্রিয় পাশে মমতা
'দোষ প্রমাণের আগেই অ্যারেস্ট করে নিচ্ছে। একটা লোককে কিছু প্রমাণ হওয়ার আগেই চোর বলে দেগে দিচ্ছে। একবারও ভেবে দেখেছ, তাঁর ফ্যামিলির উপর দিয়ে কী যাচ্ছে। তাঁর সতীর্থদের কী হচ্ছে। আজ তুমি ক্ষমতায় আছ। দম্ভে অনেক কাজ করবে। একদিন তুমি ক্ষমতায় থাকবে না। সব ধরা পড়বে। সব বেরিয়ে পড়বে। কেঁচো খুঁড়লে কিন্তু সাবধান।'
কেন্দ্রের প্রশংসা রাজ্যকে
রেশন কার্ড ১০০ শতাংশ ডিজিটালকরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের প্রশংসা করেছে বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। তাও কেন এই দুর্নীতি রোখা গেল না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, 'গত দুই-তিন বছরে সব পরিষ্কার হয়েছে। ৩৪ বছরের উত্তরাধিকার কাটিয়ে উঠতে সময় লেগছে। এখনও বামফ্রন্টের অনেক লোক পদে রয়েছে। কারও চাকরি খাননি আমরা। সেই চাকরি কী করে হল কেউ জানে না। একজনের জায়গায় আর একজন চাকরি করছেন। কিন্তু এখন যত দোষ,নন্দ ঘোষ। যত দোষ, নন্দ ঘোষ। কত চিটফান্ড তৈরি হয়েছে বাম আমলে। একটারও বিচার হয়েছে?'