নয়া ঠিকানা পেতে চলেছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী কফি হাউজ। কলেজস্ট্রিট, যাদবপুর এবং শ্রীরামপুরের পর এবার ‘স্মৃতিমাখা কফিহাউজ’ ডায়মন্ড হারবারেও। মিলবে নানা ধরণের কফির পাশাপাশি জিভে জল আনা চিকেন স্যান্ডুইজ, ফিস কবিরাজি, চিকেন কাটলেট, সহ হরেক পদ।
বই পাড়ার মাঝে আজও একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন ইতিহাস। যুগ বদলেছে, বদলেছে মানুষের পছন্দও। কিন্তু কফি হাউসের প্রতি বাঙালির সেই অনন্ত প্রেম যেন আজও অমলিন। অ্যালবার্ট হল থেকে অধুনা কফি হাউজ জার্নিটা ছিল চমকে দেওয়ার মতই। সেই সময়ের অ্যালবার্ট হল হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের গর্ভগৃহ। রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্মস্থান, ঐতিহ্যবাহী কফি হাউসের প্রত্যেক টেবিল সাক্ষী থেকেছে নীরব বিপ্লবের। কলকাতার বুদ্ধিজীবী থেকে কবি সাহিত্যিক, শিল্পী এবং কলেজ-পড়ুয়াদের আড্ডায় আজও গমগম করে ঐতিহ্যের এই কফিহাউস। রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র থেকে সত্যজিৎ ঋত্বিক মৃণাল, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় সহ অমর্ত্য সেন সকলের পদধূলিধন্য এই কফিহাউস।
শুরুতে কফি হাউসের অভিভাবক ইণ্ডিয়ান কফি বোর্ড থাকলেও পরে ১৯৫৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর হস্তক্ষেপে মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের সহযোগীতায় কফি হাউস পরিচালনার ভার নেয় কর্মচারী সমবায়। সেই থেকে আজ অবধি একই ভাবে হাল ধ'রে রেখেছেন তাঁরাই।
কোভিডের ঝড়-ঝাপ্টা সামলে সকলের প্রিয় কফিহাউস এখনও স্বমহিমায় মাথা উঁচু করেই রয়েছে। উত্তরের মত এবার ইনফিউশনের স্বাদ পেতে চলেছে ডায়মণ্ড হারবার। কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের মতই কফির গন্ধ বুদ্ধিজীবীদের নস্টালজিয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ৩৫০০ বর্গফুটের আধুনিক ধাঁচের এই কফি হাউসে এসি এবং ননএসি দুইয়েরই ব্যাবস্থা থাকছে। কলকাতা কফি হাউসের মতই সাদা পাগড়ি পরা ওয়েটারদের একইরকম ভাবে খাবার পরিবেশন করতে দেখা যাবে এখানেও। স্যান্ডউইচ থেকে মোগলাই, ফিশ ফ্রাই থেকে চিকেন ওমলেট সবই মিলবে এখানে।
৬ই জুলাই ডায়মন্ড হারবারে এই কফি হাউসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে মানুষের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতই। নতুন পথ চলার সাক্ষী থাকতে হাজির ছিলেন বিশিষ্ট লেখক অমর মিত্র, প্রখ্যাত কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সুদেষ্ণা রায়, অধ্যাপিকা অনন্যা চক্রবর্তী, বিশিষ্ট লেখক ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়, নাট্যকার দেবপ্রসাদ মন্ডল, কবি ও সমাজকর্মী প্রসূন ভৌমিক, ও আরও অনেকে।
কবি, সমাজকর্মী এবং কফি হাউস সমবায় সমিতির উপদেষ্টা প্রসূন ভৌমিক বলেন, "বিস্তৃত হলঘর, চারপাশে কলরব, সাদায় পাগড়ি আর জামায় মোড়া ওয়েটার এবং গরম কফি কলকাতার ঐতিহাসিক কফি হাউসের সেই আমেজ টা এখানে নিয়ে আসবে। আসলে কলেজস্ট্রিটের কফি হাউস আমাদের স্মৃতি, আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ছাত্রজীবন থেকেই কফি হাউসের প্রেমে পড়া। আমাদের লিটল ম্যাগাজিন 'বিজল্প'র জন্মস্থানও এই কফিহাউস।
তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, আইকনিক কফি হাউসের পদাঙ্ক প্রসারিত করার সিদ্ধান্তটি খুবই বিচক্ষণ। কফি সংস্কৃতি যখন শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আমাদের নিজস্ব কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের উচিত ছিল এই সংস্কৃতিকে সারা বাংলায় ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবা। ডায়মন্ড হারবার একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। গঙ্গার তীরে নতুন কফি হাউজ রাজ্যের পর্যটনকে বাড়িয়ে তুলবে। আমি আশা করি নতুন আউটলেটটি ঐতিহাসিক কফি হাউসের মতোই পর্যটকদের আচ্ছন্ন করতে পারবে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ এবং বুদ্ধিজীবীদের আকৃষ্ট করবে। ডায়মন্ড হারবারে ঐতিহাসিক কফি হাউজের স্বাদ পেতে নিয়মিত কবি, লেখক এবং বুদ্ধিজীবীদের এখানে নানান অধিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানাব।"