পরিকল্পনা করে এক মেধাবী কলেজ পড়ুয়াকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠল প্রতিবেশী পরিবারের বিরুদ্ধে। মৃত ছাত্রের নাম সুরজ মল্লিক (২০)। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার দুপুর থেকে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার বোকড়ার বিদ্যানিদি গ্রামে। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রামে পৌঁছে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনে।
ছাত্রের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে না-পেরে প্রতিবাদে সোচ্চার হন গ্রামবাসীরা। তাঁরা অভিযুক্ত পরিবারের সকল সদস্য ও গ্রামের ভিলেজ পুলিশ তন্ময় সামন্তর শাস্তির দাবিতে সরব হন। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা এদিন বিকেলে শ্যামসুন্দর-জামালপুর সড়ক অবরোধ করেন। পরে অবরোধ তুলে নিলেও গ্রামবাসীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন এদিন রাতের মধ্যে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার না-করলে সোমবার তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মৃত ছাত্রের বাবা নজরুল মল্লিক জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে সুরজ অত্যন্ত মেধাবী ছিল। রায়নার শ্যামসুন্দর কলেজে বিএ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিল। সুরজ উচ্চশিক্ষিত হচ্ছিল দেখে ঈর্ষান্বিত হন গ্রামের কিশোরী সোহানা মির্জা, তাঁর বাবা মোস্তাক মির্জা ও তাঁর স্ত্রী। তাই তাঁরা সুরজকে হত্যার পরিকল্পনা করে। নজরুল মল্লিক বলেন, 'পরিকল্পনামাফিক ইলেকট্রিক লাইন ঠিক করে দেওয়ার অজুহাতে তারা গত ১৬ আগষ্ট রাতে ফোন করে সুরজকে তাদের বাড়িতে ডেকে নেয়। তারপর সুরজকে ঘরে আটকে রেখে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করে। জখম অবস্থায় সুরজ জল চাইলে অভিযুক্তরা সুরজের মুখে ফিনাইল ঢেলে দেয়। সুরজ অচৈতন্য হয়ে পড়লে অভিযুক্তরা সুরজকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যায়।'
সুরজের মা প্রভা আসরফ বেগম বলেন, 'পরদিন সকালে আমি গ্রামের কলতলায় ছেলেকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। ছেলেকে প্রথম রায়না হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু, প্রাণে বাঁচানো যায়নি।' রবিবার সকালে তাঁর ছেলে সুরজের মৃত্যু হয়। সুরজের এই মৃত্যুর জন্য তাঁর পরিবার-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা মোস্তাক মির্জা ও তাঁর পরিবারের সব সদস্য এবং গ্রামের ভিলেজ পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
মৃত ছাত্রের বোন সুমনা খাতুন ও তাঁদের প্রতিবেশী সেখ আব্বাসউদ্দিন জানান, সুরজকে এমন নির্মমভাবে মারধর করে জখম করার কথা জানার পরেই তাঁরা গ্রামের রায়না থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। থানার টেবিলে থাকা পুলিশ অফিসার ওই দিন উলটে তাঁদেরই বলেন, 'সুরজকে কে মেরেছে তার কোনও প্রমাণ আছে, কোন সাক্ষী আছে, কেউ দেখেছে কি?' কোনও কেস না-নিয়ে টেবিলে বসে থাকা পুলিশ অফিসার ওইদিন তাঁদের ফিরিয়ে দেন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন- এবার কি অনুদান বাড়াবে নবান্ন? সোমে পুজো প্রস্তুতির বৈঠকে বড় ঘোষণা করতে পারেন মমতা
ইতিমধ্যেই সুরজ মারা গেছে জানতে পারার পরে অভিযুক্ত মোস্তাক মির্জা তাঁর পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। সুমনা বলেন, 'দোষী বলেই মোস্তাক মির্জা গা ঢাকা দিয়েছে।' পাশাপাশি তিনি অভিযোগে এ-ও বলেন, সুরজকে মারার পরিকল্পনায় তাঁদের এলাকার ভিলেজ পুলিশ তন্ময় সামন্ত অন্যতম নাটের গুরু। মৃতের পরিবার ও গ্রামবাসীরা অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
বর্ধমান দক্ষিণ থানার এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, 'দুঃখজনক ঘটনা। সোমবার ছাত্রের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই ছাত্রের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে। তার ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেউ দোষী হলে তাঁকে সাজা পেতেই হবে।'