সর্বভারতীয় স্তরে জোটসঙ্গী তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই দুর্গাপুরে 'কালা দিবস' পালন করল কংগ্রেস। গণতন্ত্রের বিদেহী আত্মার মুক্তির জন্য শ্রাদ্ধশান্তি করে তারা এবার অভিনব উপায়ে কালা দিবস পালন করল। দুর্গাপুরের আশিস মার্কেটে এই শ্রাদ্ধ শান্তি এবং ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। পুরোহিত রীতিমতো মন্ত্রপাঠ করে গণতন্ত্রের বিদেহী আত্মার শ্রাদ্ধ দেন। কর্মসূচিতে জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী গণতন্ত্রের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। লুচি-মিষ্টি সহযোগে সারা হয় ভোজ।
২০১৭ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ৪৩-০ এ দুর্গাপুর নগর নিগম জিতেছিল। বিরোধীরা অভিযোগ এনেছিল, ভোট লুঠ করে জয় পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সময় দুর্গাপুরের তথা পশ্চিম বর্ধমানের পর্যবেক্ষক ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। জেলা তৃণমূল সভাপতি ছিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিল, মন্ত্রী এবং জেলা সভাপতির নেতৃত্বে বহিরাগতদের দিয়ে ভোট লুঠ করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। কয়েকদিন আগে কল্পতরু ময়দানে শুভেন্দু অধিকারীর সভায় বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি স্বীকার করেন যে ২০১৭ সালে দলের নির্দেশে তিনি ভোট লুঠ করিয়েছিলেন। এজন্য তিনি সেই সভায় ক্ষমাও চান। তারপর থেকে প্রতিবছর ১৩ আগস্ট দুর্গাপুরে সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেস 'কালা দিবস' পালন করে। কংগ্রেস এবার অভিনব উপায়ে তাদের জাতীয়স্তরে গঠিত 'ইন্ডিয়া' জোটের অন্যতম মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ধ্বংস করে ভোট লুঠের অভিযোগে কালাদিবস পালন করল।
এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, 'তৃণমূল নগর নিগমে ভোট লুঠ করে জয় পেয়েছিল। পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, ভোট হয়নি। একবছর ধরে প্রশাসক বোর্ডের অধীনে নগর নিগম। হারের ভয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ভোট করাতে ভয় পাচ্ছে। গণতন্ত্রের বিদেহী আত্মার মুক্তির জন্য তাই এই শ্রাদ্ধ-শান্তির আয়োজন। লক্ষ্য, পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আজ অনেকে অন্য দলে গিয়ে ক্ষমা চাইছেন। কিন্তু, তাঁরাও সেদিন ভোট লুঠে যুক্ত ছিলেন। তাই দুর্গাপুরের ভোটাররা তাঁদেরও ক্ষমা করবেন না।'
আরও পড়ুন- স্বপ্নদীপের মৃত্যু! ‘উপাচার্যদের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়ে কালি’, বললেন অধ্যাপক অভিজিৎ চক্রবর্তী
তৎকালীন তৃণমূল জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি ছাড়াও প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেস জেলা সভাপতি তাঁকেও কটাক্ষ করেন। যাদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের এই ভোট লুঠের অভিযোগ, সেই তৃণমূল নেতৃত্ব পালটা কটাক্ষ করে বলেছেন, কংগ্রেস দুর্গাপুরে সাইনবোর্ড হয়ে গিয়েছে। তাই মিডিয়ায় নিজেদের টিকিয়ে রাখতে এসব নাটক করছে। ভোট হলে দুর্গাপুরে কংগ্রেস একটি আসনেও জামানত বজায় রাখতে পারবে না। সেই জন্য এভাবে সংবাদমাধ্যমে ভেসে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। কারণ, দুর্গাপুরের বাসিন্দারা ভুলেই গিয়েছেন শিল্পনগরীতে আদৌ কংগ্রেস আছে কি না।