Advertisment

লুপ্তপ্রায় প্রাণী-উদ্ভিদের সংরক্ষণ, চাষীর ছেলের ঝুলিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

কয়েক বছর ধরে এক অনবদ্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানের এই ছাত্র।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Conservation of endangered animals and plants, international recognition in the possession of the east burdwans farmer's son

দারুণ এই কীর্তির কৃতিত্ব স্বরূপ তরুণ ছাত্রের ঝুলিতে একের পর এক পুরস্কার। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

প্রকৃতির অখণ্ডতা বজায় রাখতে প্রাণী ও উদ্ভিদকূলের সঙ্গে মানুষের বন্ধন একান্তভাবে জরুর। তবে নগরায়ন, গাছপালা কেটে ফেলা, উপর্যুপরি প্লাস্টিকের ব্যবহার ও মানুষের নানা কাজের দরুণ দিনের পর দিন ভেঙেই চলেছে অকৃত্রিম সেই বন্ধন। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, পতঙ্গ ও উদ্ভিদ। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে কয়েক বছর ধরে এক অনবদ্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা বাঙালি ছাত্র তরুণ পাল। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্যে তিনি সংরক্ষণ করে রাখছেন বিলুপ্ত হতে বসা বিভিন্ন প্রাণী ও পতঙ্গের মৃতদেহ। এই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের নানা পুরস্কার ও মানপত্র। যা নিয়ে গর্বিত তরুণ ছাত্রের পরিবার থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরা।

Advertisment

দার্জিলিং হিল ইউনিভার্সিটি থেকে এম এস সি পাঠরত ছাত্র তরুণ পালের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের বোঁয়াইচণ্ডী গ্রামে। তাঁর বাবা নিত্যানন্দ পাল পেশায় ভাগ চাষি। মা ঝর্ণাদেবী সাধারণ গৃহবধূ। বোন মনীষা পাল পড়াশোনা করছে স্নাতক স্তরে। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়েই বিভিন্ন প্রাণী,পতঙ্গ ও উদ্ভিদের বিষয়ে জানার আগ্রহ বাড়তে শুরু করে ছাত্র তরুণের। সেই সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন প্রাণী, পতঙ্গ ও উদ্ভিদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে হাই স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার সময়ে তরুণ জানতে পারেন শুধু ’ডাইনোসর, নয়, আরও অনেক প্রাণী ও পতঙ্গ পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকদের কাছে এবং নানা বই পড়েও তরুণ জানতে পারেন, এই বিলুপ্তির কারণ মূলত নগরায়ন, জঙ্গল ধ্বংস ও প্লাস্টিকের ব্যবহার ও মানুষের নানা অনভিপ্রেত কর্মকাণ্ড। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ার সময়ে তরুণ বিভিন্ন প্রাণী ও কীটপতঙ্গের মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। এর কারণ প্রসঙ্গে তরুণের বক্তব্য, ''বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরেও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁর সংরক্ষণে থাকা প্রাণী ও পতঙ্গের দেহ গুলি দেখে তাদের বিষয়ে জানতে পারবে''।

তরুণ পাল আরও জানান, নগরায়নের জাঁতাকলে গ্রামেও এখন বনাঞ্চল কমছে। এছাড়াও দূষণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে প্লাস্টিক ও কিটনাশকের ব্যবহার। এই সব কারণেই বিভিন্ন প্রাণী ও কীটপতঙ্গ অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই উপলব্ধি থেকেই প্রথমে একটি মৃত খরগোশের দেহ সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করেন তরুণ। এই কাজটি করার জন্যে তিনি স্কুল জীবনে ল্যাবরেটরিতে ছুরি, কাঁচির ব্যবহার বিষয়ে যে শিক্ষা পেয়েছিলেন সেটাকেই কাজে লাগান তরুণ।

এপ্রসঙ্গে তরুণ পাল বলেন, ''প্রথমে ছুরি ও কাঁচির সাহায্যে মৃত খরগোশের দেহ থেকে নাড়িভুঁড়ি ও অন্যান্য অংশ কেটে বের করে দিই। তারপর নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি 'ফরমালিন' মেশানো লবন সিক্ত জলে ওই খরগোশের দেহ ৭-৮ ঘন্টা চুবিয়ে রাখার পর সেটিকে শুকিয়ে নিই। এরপর খরগোশের ওই গোটা দেহাংশ অক্সিজেন বিহীন কাঁচের জারে ভরে সিল করে দিই। ৫-৬ বছর হয়ে গেল ওই কাঁচের জারেই অক্ষত রয়েছে খরগোশের দেহাংশ। পচন ধরেনি।''

আরও পড়ুন- ‘একদিকে কাউন্টডাউন শুরু, অন্যদিকে শেষ’, জোড়াফুলে প্রত্যাবর্তন জল্পনা আরও বাড়ালেন অর্জুন

এই একই পদ্ধতিতে ফিতাকৃমি, ব্যাঙাচি, সাপের বাচ্চা, বেজি, গিরগিটি, তেঁতুলেবিছা, মথ ,রাত পাখি, ইঁদুরের ভ্রুণ এবং শিবলিঙ্গ ফুলও সংরক্ষণ করে বাড়িতে রেখেছেন বলে তরুণ পাল জানিয়েছেন ।

অভিনব ভাবনার এই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ভাগ চাষীর ছেলে তরুণ পাল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকেও নানা পুরস্কার এবং মানপত্র পেয়েছেন। হোপ ইন্টারন্যাশানাল, ইন্ডিয়ান স্টেট ও স্টার বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এর স্বীকৃতি পত্র ও নানা পুরস্কার তরুণ পালের ঘরে সাজানো রয়েছে। এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ওয়াইড রেকর্ড, ডিসকভার ওয়ার্ল্ড রেকর্ড, ওয়ার্ল্ড গ্রেটেস্ট রেকর্ড ,ইন্ডিয়াস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-সহ ১৭ টি সংস্থার স্বীকৃতি ও পুরস্কারও তরুণের ঝুলিতে রয়েছে।

ছেলের এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে গর্বিত তাঁর বাবা নিত্যানন্দ পাল ও মা ঝর্ণাদেবী। নিত্যানন্দবাবু বলেন, ''ছেলে মরা প্রাণী ও পতঙ্গ নিয়ে আসলে কি করতে চাইছে তার কিছুই প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে ধীরে ধীরে বুঝতে পারি আমার ছেলে তরুণের ভাবনার গভীরতা অনেক। একটা দিন হয়তো এমন আসবে যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক প্রাণী ও পতঙ্গের বিষয়ে জানতে আমার বাড়িতেই আসবে।'' তরুণের মা ঝর্ণাদেবী জানান, তরুণ বিলুপ্ত হতে বসা প্রাণী ও পতঙ্গের দেহ সংরক্ষণ করে রাখার কাজের পাশাপাশি শিশুদের বড় করা নিয়ে একটি গবেষণামূলক বইও লিখছে।

খণ্ডঘোষের জেলা পরিষদ সদস্য অপার্থিব ইসলাম ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসিত কুমার বাগদিরাও তরুণ পালের এই কর্মকাণ্ডকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। তরুণকে প্রয়োজনে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তাঁরা।

East Burdwan West Bengal student
Advertisment