কেন্দ্রের ঘোষণা মতো দেশজুড়েই শুরু হয়ে গিয়েছে ১৫-১৮ বছর বয়সীদের কোভিড টিকাকরণ। তার সঙ্গে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে প্রিকশনারি ভ্যাকসিনেশন বা বুস্টার ডোজ দেওয়া। ইতিমধ্যেই যাঁদের টিকা পাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে তাঁদের কাছে মেসেজ যাওয়া শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে টিকাকরণ।
দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর ৯ মাস হয়ে গিয়েছে এমন স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার এবং ষাট বছরের বেশি বয়সী মানুষজন যাঁদের কোমরবিডিটি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এই বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে। সূত্রে খবর বঙ্গে প্রায় ৭.৫ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী, ১০.৫ লক্ষ ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, এবং ২২ লক্ষের বেশি কোমরবিডিটি থাকা ৬০+ মানুষজন এই বুস্টার ডোজের আওতায় রয়েছেন। প্র
প্রথম ২ ডোজ যে টিকার নিয়েছেন, প্রিকশনারি ডোজ হিসেবে সেই টিকাই মিলবে। এদিকে যারা দুটি ভ্যকাসিন নেওয়ার পরেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে তিনমাস পার না হলে মিলবে না এই বুস্টার ডোজ। সমস্ত সরকারি টিকাকরণ কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে টিকা মিলবে। এছাড়াও বেসরকারি হাসপাতাল থেকেও টিকা পাওয়া যাবে অর্থের বিনিময়ে। বুস্টার ডোজ কেন প্রয়োজন? কতটা নিরাপদে রাখবে আপনাকে জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মানস গুমটা জানিয়েছেন, “আমরা এর আগে একাধিক বার বুস্টার ডোজ চালুর দাবীতে চিঠি লিখেছি। অবশেষে বুস্টার ডোজ চালু হওয়াতে আমরা খুশি। তবে আমরা দাবি জানিয়েছিলাম গত অক্টোবর-নভেম্বর থেকেই চালু করা হোক বুস্টার ডোজ। যদি আমাদের সেই দাবি আজ মানা হত তাহলে এত বিপুল পরিমাণে ডাক্তার নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হতে না। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সকলের জানা, যাদের টিকার দুটি ডোজ ৬ থেকে ৯ মাস অতিক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে শরীরে আর সেভাবে টিকার কোন কার্যকারিতা থাকছে না। সেই সময়ে এই বুস্টার ডোজ অত্যন্ত জরুরি। যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে বুস্টার ডোজ ছাড়া আর কোন উপায় এখন আমাদের সামনে নেই। তবে তিনি এও বলেছেন, টিকা নেওয়ার পরেও সেটি কার্যকর হতেও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে, তার মধ্যে যেভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে বুস্টার ডোজ নেওয়ার দু তিনদিন পরেও যেকেউ ওমিক্রনে আক্রান্ত হতেই পারেন”।
বুস্টার ডোজ প্রসঙ্গে চিকিৎসক পুন্যব্রত গুঁই বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ভ্যারিয়েন্টটির সূত্রপাত হলেও এর মূল কেন্দ্রস্থল এখন যুক্তরাজ্য। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ওমিক্রন ছড়িয়ে পরছে ত্বরিত গতিতে। ওমিক্রনের হাত থেকে রক্ষা পেতে যুক্তরাজ্যে সবাইকেই করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটির ৫৩ শতাংশ মানুষকে টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়ে গেছে। ভারতে এই ডোজ অনেক আগেই দেওয়া শুরু হলে ভালো হত তাহলে এত বিপুল পরিমাণে হেলথ ওয়ার্কাররা ওমিক্রনে আক্রান্ত হতেন না।
তিনি জানিয়েছেন, ইউকে সিকিউরিটি এজেন্সির প্রাথমিক গবেষণা মতে ৬ মাস আগে যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ২টি ডোজ নিয়েছেন, ওমিক্রন সংক্রমণের বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষা প্রায় শূন্য শতাংশ এবং ফাইজারের ২ ডোজ টিকার ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটি ৩৫ শতাংশের কিছুটা বেশি। তবে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজার টিকার তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ।
অর্থাৎ ওমিক্রনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঝুঁকিপূর্ণ সবাইকে টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়া অতি জরুরি। বুস্টার ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় ডোজটি কোন টিকা দিয়ে দেওয়া হবে তা সঠিকভাবে নির্বাচন করা অত্যাবশ্যকীয়। কারণ টিকাভেদে রিঅ্যাকশন এবং ইমিউন রেসপন্স আলাদা হয়। এ ছাড়া মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ বা হেটারোলোগাস টিকা প্রদানে কম্প্যাটিবিলিটি ইস্যু তো রয়েছেই। তৃতীয় বা বুস্টার ডোজে কোন টিকা দিলে সংক্রমণ রোধে বেশি সহায়ক হবে তা দেখার জন্য যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি একটি মাল্টিসেন্টার ফেইজ-২ ট্রায়াল হয়েছে।
এই ট্রায়ালে মোট ৭টি টিকা পরীক্ষা করা হয়েছে। মূলত দেখা হয়েছে যাদেরকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রাথমিক ২ ডোজ অথবা ফাইজারের প্রাথমিক ২ ডোজ দেওয়া হয়েছিল, তাদেরকে কোন টিকা দিয়ে বুস্টার ডোজ দিলে কেমন ইমিউন রেসপন্স এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। গত ১৬ ডিসেম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই গবেষণার ফলটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত জার্নাল ল্যানসেটে। তাঁর কথায় একটি টিকা কতটুকু কার্যকর হবে তা নির্ভর করে টিকা দেওয়ার পরে তা শরীরে কতটুকু নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল রেসপন্স তৈরি করে তার উপর”। সেই সঙ্গে তিনি সকলকে এই বুস্টার ডোজ নেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন।