scorecardresearch

রাজ্যে ‘সেঞ্চুরি’ ডিজেলের, জ্বালানির জ্বালায় হাত পুড়ছে মধ্যবিত্ত বাঙালির

এই দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্ত বাঙালির। চাল ডাল আনাজ থেকে শুরু করে সবজী সবেতেই যেন আগুন লেগেছে।

Consumers suffers as Vegetable price jumps
একধাক্কায় আনাজের দাম বেড়েছে অনেকটাই।

রাজ্যে ‘সেঞ্চুরি’ ডিজেলের, দু’সপ্তাহে ১০ টাকা বাড়ল জ্বালানির দাম! আর তাতেই মাথায় হাত ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অ্যাম্বুলেন্স চালকের। গত দু সপ্তাহে কলকাতায় পেট্রলের দাম বেড়েছে ১০.৪৫ টাকা। ডিজেলের দাম বেড়েছে ১০.০৪ টাকা। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, সবজির দাম আগুন। খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। ১৫ দিনে ১৪ বার বাড়ল জ্বালানির দাম। লাগাতার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জেরে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। তার মধ্যে পেট্রোপণ্যে কর কমানো নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য দায় ঠেলাঠেলি অব্যাহত। মধ্যবিত্তের সুরাহা হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ভারতেও। স্বভাবতই দাম বেড়েছে জ্বালানির। কিন্তু এই দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্ত বাঙালির। চাল ডাল আনাজ থেকে শুরু করে সবজী সবেতেই যেন আগুন লেগেছে। বাজারমুখো হতে ভয় পাচ্ছেন মধ্যবিত্ত মানুষজন।

জয়দেব ঘোষ পেশায় ট্যাক্স কনসালটেন্ট। তিনি বলেন “এভাবে রোজ পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়ায় প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্তের হেঁসেলে। আগে ২০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে পরিবারের তিন জনের বাজার করে আনা যেত অনায়াসেই কিন্তু এখন সেই খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। সরষের তেল ১৭০ টাকা, মুরগীর মাংস ২৩০ টাকা প্রতি কেজি। বেগুন, ঢেঁড়স ৫০ টাকা প্রতি কেজি। সেই সঙ্গে মাছের দামও চড়েছে। ভেটকি ৬০০ টাকা, পাবদা, চিংড়ি ৫০০ টাকা প্রতি কেজি। মানুষের খাবারের জোগাড় করতেই কালঘাম ছুটেছে। অন্যান্য বিলাসিতা তো দূরের কথা। আগে মাসে তিন বার খাসির মাংস রান্না হত। এখন সেটা একবারে নেমে এসেছে। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন এর পর হয়ত মাসে একবারও খাসির মাংস জুটবে না”। 

পেট্রোল ডিলের মুল্যবৃদ্ধিতে বাজারে চড়েছে সবজীর দাম। এদিন বাজারে প্রতি কেজি জোতি আলুর দাম ২০ থেকে ২২ টাকা। চন্দ্রমুখী আলু প্রতি কেজির দাম ২৭ থেকে ২৮ টাকা। পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পটল, ঝিঙে ৫০ টাকা প্রতি কেজি। কাঁচা লঙ্কা ১০০ টাকা প্রতি কেজি। পাতি লেবু ৫ থেকে ৬ টাকা প্রতি পিস। রুই মাছ ২০০-২৫০ টাকা প্রতি কেজি। কাতলা মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা প্রতি কেজি। সেই সঙ্গে কিছুটা বেড়েছে চালের দামও। রত্না চালের প্রতি জেকির দাম ৪০ টাকা (ভাল), মাঝারি ৩৫ টাকা প্রতি কেজি। মিনিকেট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। বাঁশ কাঠি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি। মুসুরি ডাল ১২০ টাকা প্রতি কেজি।

এদিকে এভাবে জ্বালানির এমন মূল্যবৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছেন জেলা থেকে কলকাতায় রেফার হওয়া রোগী এবং তার পরিবার। এমনটাই জানাচ্ছেন, পান্ডুয়ার মৃণাল দাস। কয়েকদিন আগে বাবার অসুস্থতার কারণে বাবাকে ভর্তি করাতে হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে। কিন্তু সমস্যা বাড়ায় কলকাতায় রেফার করা হয়। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া শুনে চোখ কপালে মৃণালের। ২২০০ টাকার ভাড়া এখন ৩৫০০ টাকা। মৃণালের কথায়, কী করে সাধারণ মানুষের পক্ষে এত ভাড়া দিয়ে রোগীকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব! এব্যাপারে অ্যাম্বুলেন্স চালক আজাদ শেখ বলেন, “আগে রোগী নিয়ে ২০০০ টাকাতেও কলকাতায় গেছি। কিন্তু বর্তমানে যা অবস্থা তাতে ভাড়া বেশি না নিলে উপায় নেই। ডিজেলেই সব টাকা চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ড্রাইভারের ভাড়া। ভাড়া বাড়ানো ছাড়া আমাদের কাছে আর কোন রাস্তা খোলা নেই”।

এদিকে স্কুল চালু হয়েছে পুরোদমে। মিটেছে পুলকার সমস্যাও। কিন্তু ডিজেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন পুলকার চালকরা। এক পুলকার চালক অনিল মাল বলেন, “এমনিতেই এত দিন বেকার বসে ছিলাম। করোনার পর স্কুল চালু হতেই ডিজেলের দাম সেঞ্চুরি পার। এখন ভাড়া না বাড়ালে গাড়ি চালানো অথবা না চালানো দুটোই সমান। 

জ্বালনির দাম বাড়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ফুল চাষীরাও। স্বপন দে এক “ফুল চাষীর কথায়, ‘এমনিতেই ফুল চাষ করতে জলের প্রয়োজন হয় বেশি। জমিতে পাম্প চালাতে হয়। যেটা ডিজেলে চলে। আগের থেকে বর্তমানে ডিজেলের খরচ বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ। ফলে মালের দাম বাড়ছে”। সেই সঙ্গে ফলের দামও আকাশছোঁয়া’।

নন্দী ব্রাদার্স, হোলসেল এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘এখন রামজান মাস চলছে। এমনিতেই জিনিস-পত্রের চাহিদা এবং দাম কিছুটা বেশি। এর মধ্যে হটাত করে গত ১৫ দিনে যেভাবে পেট্রোল ডিজেলের দাম বেড়েছে তাতে কলকাতা থেকে আমাদের মাল আনার খরচ বেড়ে গেছে। আগে সপ্তাহে তিন দিন কলকাতায় যেতাম। এখন ট্রাকে করে মাল আনার খরচ এতটাই বেড়ে গেছে যে একদিন করেই যাচ্ছি’।

রোজ কলকাতা থেকে ট্রাকে করে পাইকারি মাল জেলা শহরে আনেন, ‘মাল ট্রাসপোর্ট’। সংস্থার মালিক শম্ভু মাল বলেন , ‘তেলের দাম বাড়লেও গাড়ি ভাড়া এখনও বাড়েনি। ফলে গাড়ি চালাতে গেলে এখন পকেটেই টান পড়ছে সেই সঙ্গে রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ। সব মিলিয়ে ব্যবসা চালান দায় হয়ে যাচ্ছে’। 

তবে জ্বালানির দাম বাড়লেও বিক্রিতে সেভাবে প্রভাব পড়েনি বলেই জানিয়েছেন এক পাম্প মালিক। তাঁর কথায়, মানুষকে পরিবহন খাতে খরচ বজায় রাখতেই হবে, অন্যান্য খরচ কাটছাঁট করেও মানুষ পরিবহন খাতে খরচ একই রেখেছেন। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেছেন আগে যিনি ১০০ টাকার তেল কিনতেন এখন তিনি ১০০ টাকারই তেল কিনছেন তফাৎটা হচ্ছে শুধুমাত্র পরিমাণে।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Cooking gas including vegetables and oil prices are now expensive due to fuel price hike