করোনা মোকাবিলায় কলকাতা সংলগ্ন দুই জেলার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ চিন্তিত রাজ্য প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর। সূত্রের খবর, করোনা আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে কলকাতার পরই রয়েছে হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগণা। কলকাতা ও এই দুই জেলা ছাড়া অন্য জেলাগুলির মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাওড়া-উত্তর ২৪ পরগনার মোট সংখ্যার থেকে অনেকটাই কম। তাই দ্বিতীয় দফার লকডাউন প্রক্রিয়াকে কঠোরভাবে কাজে লাগাতে তৎপর দুই জেলার পুলিশ-প্রশাসন।
প্রথম দফার লকডাউনে পরিস্থিতি আয়ত্তে না আসায় দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন ঘোষণা করতে হয়। কিন্তু লকডাউন সত্বেও হাওড়ায় হুহু করে বেড়ে যায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত হাওড়ায় মোট ৮৩৪ জনের পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০৫। এই সংখ্যা দেখেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। রাজ্য প্রশাসন লকডাউন মানার জন্য কড়া নির্দেশ পাঠিয়েছে জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের।
প্রশাসন সূত্রে খবর, হাওড়ার মোট ৩০টি জায়গায় নাকা চেকিং হচ্ছে। এই নাকা চেকিং-এ পুলিশ অত্যন্ত কড়া পদক্ষেপ করছে। সরকারি গাড়ি থাকলেও জানতে চাওয়া হচ্ছে কেন, কোথায় যাওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে গন্তব্যে ফোন করে নিচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। সওয়াল-জবাবে সন্তুষ্ট না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রায় একই হাল উত্তর ২৪ পরগনারও।
সূত্রের খবর, হাওড়ার ৯টি ওয়ার্ড একেবারে ঘিরে রাখা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ির বাইরে বেরতে দেওয়া হচ্ছে না। জানা গিয়েছে, এসব জায়গায় পুলিশ, প্রশাসন ও বেসরকারি সংস্থা খাবার পৌঁছানোর দায়িত্ব নিয়েছে। কর্পোরেশন দায়িত্ব নিয়েছে মুদিখানা দ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার। সবজি সরবরাহ করার জন্য রয়েছে ঠেলাগাড়ি বা ভ্যান। মালি পাঁচঘড়া, শিবপুর, গোলাবড়ি ও হাওড়া থানা এলাকায় এই মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। এছাড়া সাকরাইল ও বালিজ-জগাছা এলাকাতেও আক্রান্তের খবর মিলেছে।
হাওড়ায় প্রথমে যার শরীরে করোনার ভাইরাস মিলেছিল তাঁর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের যোগ রয়েছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই বাইরের যোগাযোগ মিলেছে। তাছাড়া এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তির করোনা পজেটিভ হয়েছে। তবে প্রশাসনের বড় উদ্বেগের কারণ, প্রথম দফার লকডাউন ভেঙে প্রচুর মানুষ যথেচ্ছভাবে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘন করেছে। তাই এবার আর কোনভাবেই বিষয়টা হালকা ভাবে নিচ্ছে না প্রশাসন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে হাওড়াকে রেড জোন ধরা হয়েছে। এই এলাকার বিভিন্ন জায়গার এতটাই জনঘণত্বের যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই এখন হাওড়া প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এসব এলাকায় তাই জমায়েত রুখতে চলছে পুলিশের রুট মার্চ জারি। জেলার প্রায় সর্বত্র মাইকিং করা হচ্ছে। যার জন্য একাধিক বাজারও বন্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের জেরে এখন হাওড়া জেলা হাসপাতাল বন্ধ রাখতে হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনাও করোনা আতঙ্কে কাঁপছে। এই জেলায় সব থেকে বেশি করোনা আক্রান্তের খবর মিলেছে ব্যারাকপুর মহকুমা এলাকায়। সূত্রের খবর, দুদিন আগে ব্যারাকপুরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮। বিধাননগর মহকুমা এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০। উত্তর ২৪ পরগনায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪০। এই জেলায় অধিকাংশ বাজারও বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানে মোট পুরসভা রয়েছে ২৬টি।
উত্তর ২৪ পরগনার একদিকে বাংলাদেশ সীমানা। কলকাতা ছোঁয়া জেলাটির অপরপ্রান্তে নদিয়ার সীমানা। স্বভাবতই উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার সতর্ক করেছেন জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে। প্রথম দিকে এক তরুনীর করোনা ধরা পড়েছিল। তিনি স্কটল্যান্ড থেকে ফিরেছিলেন। এরপর দমদমে এক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁর ইতালি যোগ নিয়েএ বিতর্ক ছিল। এছাড়া, মধ্যমগ্রাম পুর এলাকায় দুই ওয়ার্ডে চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেলের। জেলার বিভিন্ন জায়গায় নাকা চেকিং অব্যাহত। বাজার-দোকান-পাট বন্ধ। রাস্তায় কোনও ভাবে জমায়েত বরদাস্ত করা হচ্ছে না। এই জেলার ক্ষেত্রেও প্রথম দফার লকডাউনে অনেকেই বাজারে, রাস্তায় ভিড় করেছেন। নানা জায়গায় দিনভর সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন