Advertisment

বাংলায় ‘কচু পাতা সেদ্ধ খেয়ে দিন কাটছে যাযাবরদের’!

আমাদের মধ্যে কয়েকজনের রেশন কার্ড থাকলেও পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছি না। আমরা চাই অবিলম্বে সরকার আমাদের বাচ্ছাদের কথা ভেবে কিছু খাবারের ব্যবস্থা করুক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি: কৌশিক দে

আজ এক জায়গায় তো কাল অন্যত্র অবস্থান। এভাবেই ঘুরে ঘুরে নানা কাজ করে কেটে যায় জীবন। তবে লকডাউনে ঘোরাঘুরি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু পেটের জ্বালা তো আর করোনা সতর্কতা শুনতে চায় না। ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ের সরকারি সাহায্য শেষ। কিন্তু ক্ষুধার শেষ নেই। তাই পেটের টানে কচু পাতা সেদ্ধ করে কোনওরকমে জীবনযাপন করছে মালদার প্রায় ১০০ যাযাবর পরিবার। এই যাযাবররা দীর্ঘ দিন হরিশ্চন্দ্রপুরের কয়েকটি গ্রামে বসবাস করছে। সোশাল মিডিয়ায় এই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক মহল।

Advertisment

লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়ে ঘরে বসেই দিন কাটচ্ছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের গড়গড়ি, বাইশা বাগান এলাকার মুসাহার বেদে বিন সম্প্রদায়ের মানুষেরা। মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ বা তাবিজ, মাদুলি, কবিরাজি ওষুধ বিক্রি করেই এঁদের জীবন যাপন চলে। জীবিকা নির্বাহের জন্য দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করাও নিষিদ্ধ এ মুহূর্তে। ফলে চরম অসুবিধায় পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার প্রায় শখানেক যাযাবর পরিবার। লকডাউন শুরু হওয়ার দিন হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বর ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের উদ্যোগে এদের ত্রাণ দেওয়া হয়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। অভিযোগ উঠেছে, লকডাউন শুরুর বেশ কিছুদিন পর সেই খাবার শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন আশপাশ থেকে সংগ্রহ করা কচু পাতা সেদ্ধ করে তার সঙ্গে ভাতের মারের মিশ্রণ খেয়েই দিন গুজরান হচ্ছে এই পরিবারগুলির।

publive-image ছবি: কৌশিক দে

যাযাবর সম্প্রদায়ভুক্ত জগদীশ বেদ জানালেন, "চারিদিকে বনধের জন্য আমরা কাজ করতে বেরোতে পারছি না। আমরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করি। আমাদের এখন কোন  রোজগার নেই। প্রথম দিন এলাকার বিডিও অফিস থেকে চাল ও অন্যান্য খাবার জিনিস পাওয়া গিয়েছিল। সেই ত্রাণও শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এখন জঙ্গল থেকে কচুপাতা নিয়ে ওটাই সেদ্ধ করে খাচ্ছি। আমাদের মধ্যে কয়েকজনের রেশন কার্ড থাকলেও পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছি না। আমরা চাই অবিলম্বে সরকার আমাদের বাচ্ছাদের কথা ভেবে কিছু খাবারের ব্যবস্থা করুক।"

এই ঘটনাকে সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন মালদা জেলার ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমন্ত মিত্র। তিনি এই পোস্টের মাধ্যমে ওই এলাকার মানুষদের পাতা সেদ্ধ খেয়ে বেঁচে থাকার কথা লেখেন। এর জেরেই এলাকায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়।স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অজিত সাহা বলেন, "গড়গড়ি ও বাইশা গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এই মুশর সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করছে। লকডাউন শুরুর পরেই হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বর ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক ও হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসির উদ্যোগে প্রথম দিকে এঁরা কিছু ত্রাণ পেয়েছিল। কিন্তু সেগুলো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গিয়েছে। এদের কয়েকজনের রেশন কার্ড থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে রেশন পাচ্ছে না।" এলাকার কোনও জনপ্রতিনিধি এখানে আসেনি বলে অভিযোগ করেন অজিতবাবু। রেশন কার্ড না থাকলেও রেশন পাওয়া যাবে, মুখ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণা থাকলেও স্থানীয় রেশন ডিলাররা জানাচ্ছেন, পরে যদি সামগ্রী আসে তখন দেওয়া যাবে। এমনটাই অভিযোগ অজিত সাহার।

publive-image ছবি: কৌশিক দে

জেলা পরিষদের শিশু, নারী ও ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ মর্জিনা খাতুন বলেন, "আমি ওই এলাকার মানুষদের দুর্দশার কথা শুনেছি। ওঁরা বেশ কিছুদিন আগে এলাকায় ফিরেছে বলে শুনেছি। আমি স্থানীয় সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিককে দিয়ে যাতে আরও ত্রাণ দেওয়া যায় সেই ব্যবস্থা করছি। আর এখন রাজনীতি করার সময় নয়। কিছু নেতা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই ঘটনা প্রচার করে রাজনৈতিক ফায়দা না তুলে বরং ওই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ালে আমরা বেশি খুশি হব। আমি চাই, তাঁরাও ওই দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ান।"

যাঁর পোস্ট নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে সেই শ্রামন্ত মৈত্র বলেন, "কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, আমি শুধুমাত্র এলাকার মানুষদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছিলাম। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই ঘটনার কথা জানতে পেরে কেউ যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। আমরা জেলা পার্টির তরফ থেকে অবিলম্বে ওই পরিবারগুলির হাতে ত্রাণ তুলে দেব।"
এদিকে জেলার তৃণমূলের যুব সহ-সভাপতি বুলবুল খান ঘটনার খবর জানতে পেরে আগামীকালই ওই পরিবারগুলির হাতে ত্রাণ পৌঁছানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, রাজনৈতিক বিরোধিতা ভুলে সকলেরই এই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রিসবা খাতুনের স্বামী আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, "এখন পঞ্চায়েত বন্ধ আছে তাই পঞ্চায়েত থেকে থেকে এখনো কিছু করা সম্ভব নয়। অবিলম্বে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু খাবার এখানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছি।"
স্থানীয় সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অনির্বাণ বসু জানালেন, আমরা প্রথম দিনই চাল, আলু, সাবান ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী পরিবারগুলির হাতে তুলে দিয়েছি। আগামীতে আরো কিছু ত্রাণ তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে, পরিবারগুলির দুরবস্থার কথা জানতে পেরে হরিশ্চন্দ্রপুর রুটি ব্যাংকের সদস্যরা আজই ৪০০ জনের হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দেন। আগামীতেও রোজ খাবারের প্যাকেটের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে সংস্থার সদস্যরা।

coronavirus corona
Advertisment