রাজ্য জুড়ে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের আকাল। করোনা আতঙ্কে কালোবাজারির অভিযোগও উঠছে। তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের একাংশের অসচেতনতাও রীতিমতো প্রকাশ্যে এসেছে। অথচ, যাঁদের সমাজ দূরে ঠেলে দেয়, সেই বৃহন্নলারাই এবার করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় হাত বাড়িয়ে দিল। পথে নেমে বিতরণ করলেন মাস্ক ও স্যানিটাইজার।
করোনা-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তেই কলকাতা-সহ রাজ্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার উধাও হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে অসুধের দোকানে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। অসহায়তার কথা স্বীকার করে নেয় রাজ্য সরকারও। যদিও তড়িঘড়ি মাস্ক এবং স্যানিটাইজার তৈরির আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য।
এমতাবস্থায় হুগলি জেলায় সাধারণের মধ্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করতে এগিয়ে এল বৃহন্নলা সমাজ। সিঙ্গুর থানার উল্টোদিকে পথচলতি মানুষকে মাস্ক বিতরণ করলেন বৃহন্নলারা। সিঙ্গুরের জলাঘাটা গ্রামের 'সিঙ্গুর হিজরা সমিতি'র সদস্যরা নিজেদের খরচ থেকে টাকা বাঁচিয়ে কয়েক হাজার মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ করেন। সংগঠনের সম্পাদিকা সন্ধ্যা বলেন, "আগামী দিনেও সিঙ্গুরের আশপাশের গ্রামগুলোতে মাস্ক দেওয়া হবে।"
আরও পড়ুন: ‘লকডাউন’কে গুরুত্ব দিন, সব নির্দেশ মেনে চলুন: প্রধানমন্ত্রী
সমিতির সদস্যরা রীতিমত হাতে গ্লাভস এবং মুখে মাস্ক লাগিয়ে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে রাস্তায় নেমে পড়েন। সন্ধ্যা বলেন, "যে ভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তার হাত থেকে আমাদের সিঙ্গুরবাসীদের বাঁচাতেই এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা চাই, আমাদের সিঙ্গুরের সবাই সুরক্ষিত থাকুক। তাই আমাদের সাধ্যমতো মাস্ক জোগাড় করে জনগণকে দিচ্ছি।" এদিকে মাস্ক পেয়ে এলাকাবাসীরাও খুব খুশি। এমনিতেই সিঙ্গুরের বাজারে ও আশেপাশে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। সেভাবে কোনও রাজনৈতিক দলও এখানে এই কাজে নামেনি। বৃহন্নলাদের বাড়িয়ে দেওয়া হাতই ধরেছেন সাধারণ মানুষ।
শহরের পথে যাঁদের দেখলেই সাধারণত গাড়ির জানালার কাচ তুলে দিয়ে বা কপালে হাত ঠেকিয়ে 'অভিবাদন' জানায় 'ভদ্র সমাজ', সেই বৃহন্নলারাই এমন বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় এক বিশেষ বার্তা উঠে এল বলে মনে করছেন অনেকে। যখন তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের বিরুদ্ধে করোনা ভাইরাস নিয়ে অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ উঠেছে। সমাজের একাংশ মানুষের পাশে দাঁড়ানো দূরের কথা নিজেদের সামলাতেই ব্য়স্ত অনেকে। ঠিক তখনই বৃহন্নলা সমাজ রাস্তায় নেমে করোনা প্রতিরোধে শামিল হল।