Advertisment

বাংলায় কেন্দ্রীয় দলের আগমনেই আরও আটোঁসাটোঁ লকডাউন

বাংলায় লকডাউন ও সার্বিক করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দল নিয়ে একদা রাজ্য প্রশাসন ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তাঁদের সৌজন্যেই এ রাজ্যে করোনা ভাগ্য ফিরেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অমিত শাহ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলায় লকডাউন ও সার্বিক করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দল নিয়ে একদা রাজ্য প্রশাসন ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তাঁদের সৌজন্যেই এ রাজ্যে করোনা ভাগ্য ফিরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই আন্তঃমন্ত্রক কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে আসবে শুনেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় হস্তক্ষেপের দাবি তুলে গর্জে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের মুখ্য সচিবের কথাতেও ছিল কিঞ্চিত বিরক্তির রেশ। কিন্তু, কেন্দ্রীয় দলের আসার জন্যই রাজ্য প্রশাসন যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও সক্রিয় হয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে বাংলার অপেক্ষাকৃত ভাল করোনা পরিসংখ্যানেই।

Advertisment

রাজ্যের রেড জোনের অন্তর্ভক্ত অন্যতম দুই জেলা কলকাতা ও হাওড়া। বাংলায় করোনা সংক্রমণের সিংহভাগই এই দুই জেলা থেকে। কেন্দ্রীয় কমিটি এ রাজ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যায়, মহানগরের রাজাবাজর, মেটিয়াব্রুজ, বেলগাছিয়া, পার্কসার্কাস, টেংরা, বেলতলা, দক্ষিণ শহরতলীর পাটুলির একাংশে লকডাউন তীব্র হয়েছে। একই ছবি ধরা পড়ে হাওড়ার কাজীপাড়া, হাওড়া ময়দান, শিবপুর, সালকিয়া, নেতাজি সুভাষ রোড এলাকেতেও।

রাস্তা বা খোলা অঞ্চল থেকে বহু বাজার মাঠ বা অন্যত্র সরিয়া দেওয়া হয়। বেশ কয়েকটি কন্টেমেন্ট জোনে বাজার বন্ধও করা হয়। ২১ এপ্রিল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের বভিন্ন অংশে গিয়ে গিয়ে লকডাউন বিধি মেনে চলার জন্য বাসিন্দাদের সচেতন ও সতর্ক করেন।

publive-image নমুনা সংগ্রহের তৎপরতা।

করোনাভাইরাসের জেরে মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে অডিট কমিটি গঠন করে রাজ্য। ২৪ এপ্রিল মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানান, এই কমিটি ৫৭ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন, তবে তার মধ্যে ১৮ জন করোনায় মৃত। বাকিদের মৃত্যু হয়েছে অন্যান্য (কোমর্বিডিটি) অসুখে।

রাজ্যে নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। ২১ এপ্রিল দিনে প্রায় ৮০০ নমুনা পরীক্ষা হচ্ছিল। তবে, সেই সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। ৪ মে-র পরিসংখ্যান অনুসারে দিনে প্রায় ২২০১ নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে রাজ্যে।

করোনা মহামারী মোকাবিলায় গত ২৯ এপ্রিল ক্যাবিনেট গঠন করেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিটির সদস্য করা হয় রাজ্যের শীর্ষ আমলাদের। এর আগে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। করোনায় রাজ্যের পরিস্থিতির যে খুব একটা ভাল নয়, সেই বিষটি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন চিকিৎসকরা। তারপরই নজরদারি ও বিভিন্ন কাজে সুষ্ঠু সমন্বয়ের জন্য পদক্ষেপ করেন মমতা।

আরও পড়ুন- সরকার চাইলেও লকডউনে ঘুরবে না বাসের চাকা

সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত বা পরীক্ষার জন্য রোগী ভর্তি-চিকিৎসায় রাজ্য সরকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই বলে ৩০ এপ্রিল নির্দেশিকা জারি করে মমতা সরকার। বলা হয় আইসিএমআর-এর গাইডলাইনকে মান্যতা দিয়েই ওই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে কোনও রোগীকে ফেরৎ পাঠাতেও নিষেধ করা হয়। ওই দিনই মুখ্যসচিব জানান, রাজ্যে ১০৫ জন করোনা পজেটিভের মৃত্যু হলেও সংক্রমণের কারণে মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের।

এরপরই রাজীব সিনহা ঘোষমা করেন, করোনায় মৃত্যু হয়েছে কিনা তা আর অডিট কমিটি খতিয়ে দেখবে না। মুখ্যসচিবের কথায়, 'কমিটি জানিয়েছে মৃত্যর সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিন্ন ব্যবস্থা প্রয়োজন। চিকিৎসকরাই জানাবেন কেন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর রোগীদের তথ্যের রেকর্ড আরও বেশি করে রাখুক।'

২৯ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'সরকারের কয়েকটি নির্দেশ ঘিরে বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে। আমাদের ভুল সংশোধন করতে হবে।' এরপর দিনই মুর্শিদাবাদ মেজিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপারকে বদলি করে দেওয়া হয়। অভিয়োগ, মৃত্যু সার্টিফিকেটে কারণ হিসাবে করোনার উল্লেখ করতে নিষেধ করেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন- ‘আমাদের রিপোর্টিং সিস্টেম ঠিক ছিল না’, মানল নবান্ন, বাংলায় করোনা মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬১

করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঘিরে প্রথম থেকেই তৈরি হয়েছিল বিতর্ক এবং জটিলতা। অবশেষে সোমবার একপ্রকার সে কথাই স্বীকার করে নিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। এদিন সাংবাদিক বৈঠক থেকে তিনি বলেন, 'কোভিড সংক্রাম্ত তথ্য রিপোর্টিংয়ের যে পদ্ধতি আমাদের ছিল, তা খুব জটিল। আমাদের রিপোর্টিং সিস্টেম ঠিক ছিল না। ফলে বেশ কিছু তথ্য এবং পরিসংখ্যান নথিভুক্ত হয়নি। অনিচ্ছাকৃতভাবেই এটা হয়েছিল। তবে এখন এটা বুঝতে পারলাম কোথায় সমস্যাটি হচ্ছিল।'

মুখ্যসচিব এও জানান যে তথ্যে যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে সেই কারণে আজ থেকে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা (প্রথম খেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত) প্রকাশ করা হবে। এর আগে প্রতিটি সাংবাদিক বৈঠকে সেই মুহূর্তে যত জন করোনায় ভুগছিলেন সেই সংখ্যা বলা হচ্ছিল। তিনি বলেন, “আমরা এতদিন যা সংখ্যা দিয়েছিলাম তা অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা। আজ থেকে মোট কেসের সংখ্যাও দেব। কারণ বিভিন্ন মহলে এটা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।” সোমবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২৫৯, এর মধ্যে ২১৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন, অ্যাক্টিভ করোনা কেস সুস্থ হওয়ার হার ১৭.৩২ শতাংশ, প্রতি ১০ লক্ষে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩.৯৮, প্রতি ১০ লক্ষে মৃত্যু সংখ্যা ১.৪৭।

Read in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

amit shah Mamata Banerjee Lockdown
Advertisment