Advertisment

করোনায় একাই একশ বাংলার এই শিক্ষিকা

করোনা আতঙ্কের দুঃসময়ে কেউ কালোবাজারী করে কোটিপতি হচ্ছেন, আবার কেউ নিজ উপার্জনের অর্থে নিঃস্বার্থে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। মানবিক মুখ দেখা যাচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

লকরডাউনে জলপাইগুড়িতে ত্রাণ বিতরণ। ছবি- সৌমিত্র সান্ন্যাল

বিপদেই চেনা যায় প্রকৃত বন্ধু। করোনা আতঙ্কের দুঃসময়ে কেউ কালোবাজারী করে কোটিপতি হচ্ছেন, আবার কেউ নিজ উপার্জনের অর্থে নিঃস্বার্থে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। মানবিক মুখ দেখা যাচ্ছে। এঁদের মধ্যে কেউ ছোট ব্যবসায়ী বা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা, রয়েছেন বনদফতরের রেঞ্জার। তাঁরা সবাই নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সমাজসেবায় ব্রতী হয়েছেন।

Advertisment

শিলিগুড়ি হায়দারপাড়া জুনিয়ার বেসিক স্কুলের শিক্ষিকা সুনন্দা দত্ত। নিজের চাকরির জমানো টাকায় জরুরি পরিস্থিতিতে দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই শিক্ষিকা দায়িত্ব নিয়েছেন ১০০টি দুস্থ পরিবারের। মঙ্গলবার প্রথম পর্যায়ে ৩০ টি পরিবারের হাতে তুলে দিলেন খাদ্যসামগ্রী।

করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে অর্থাভাবে আজ বহু পরিবার অভুক্ত। মঙ্গলবার তিনি দুই যুবক রিকি দাস ও সুমন সরকারকে নিয়ে চলে যান বালাসন নদীর চরের একটি বস্তিতে। এই বস্তিবাসীদের সংসার চলে রিক্সা চালিয়ে, কারও চলে চেয়ে-চিন্তে। লক ডাউনে রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের বর্তমানে দিন কাটছে একপ্রকার না খেয়েই। এখনও সেই এলাকায় তেমনভাবে পৌছায়নি ত্রান। প্রাথমিক ভাবে ৩০টি পরিবারের হাতে তুলে দিলেন চাল, ডাল, আলু ও সয়াবিনের প্যাকেট। দ্বিতীয় পর্যায়ে বুধবার তিনি প্রদান করবেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের বেশ কয়েকটি এলাকায়। সুনন্দাদেবী জানিয়ে দিয়েছেন, "যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে ততদিন এই পরিবারগুলিকে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর যোগান দিয়ে যাবেন।"

publive-image চুঁচু্ড়া ময়নাডাঙা এলাকার বাসিন্দা আরশাদ। ছবি- উত্তম দত্ত

চুঁচু্ড়া ময়নাডাঙা এলাকার বাসিন্দা আরশাদ। এই কাশ্মীরি শাল, সোয়েটার বিক্রি করার জন্য এক যুগ আগে আসেন চুঁচুড়ায়। ব্যবসা করতে এসে চুঁচু্ড়াকে আপন করে এখানেই ঘর বাঁধেন। আরশাদের পাড়ায় একটি মুদিখানা রয়েছে। আরশাদ নিজে সেখান থেকে সামগ্রী কেনেন। লকডাউনের জেরে অনেক দিন ধরেই এলাকার মজুর, গরীবরা অসুবিধায় দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আরশাদ। পাড়ার মুদি দোকানে বলে দিয়েছেন যাদের চাল, ডাল, তেল, নুন কেনার অবস্থা নেই তাঁদের তিনি সাহায্য করবেন। মুদি দোকানে এমন কেউ এলে তাঁর বাড়িতে যেন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি স্লিপ লিখে দেবেন। স্লিপ জমা রেখে তাদের সামগ্রী যেন দিয়ে দেওয়া হয়। সেই অর্থ তিনি দেবেন। অনেকেই তা জানতে পেরে আরশাদের কাছ থেকে স্লিপ নিয়ে এসে চাল, ডাল নিয়ে যাচ্ছেন। আরশাদের বক্তব্য়, "লকডাউনে গরীব মানুষ কেউ যেন অভুক্ত না থাকে। তাই এই ছোট্ট প্রচেষ্টা।"

আরও পড়ুন: করোনা প্রতিরোধে সাড়া ফেলেছে বঙ্গ তনয়ার নয়া আবিস্কার

জলপাইগুড়ির বেলাকোবার রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত। তিনিও নিজ উদ্যোগে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। নিজের বেতন ছাড়া ধার করেছেন অন্য়ের কাছ থেকে, বাকিতে সামগ্রী কিনেছেন দোকান থেকে।

publive-image ত্রাণ সামগ্রী বিলি করছেন শিক্ষিকা। ছবি- সন্দীপ সরকার

লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পরেছে বৈকন্ঠপুরের জঙ্গল ও বনবস্তি এলাকার প্রচুর মানুষ। এই সমস্ত অসহায় পরিবারগুলিকে ৫ দিন ধরে লাগাতার ভাবে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিলেন বনদপ্তরের টাস্ক ফোর্সের প্রধান সঞ্জয় দত্ত। নিজের মাস মাইনের টাকার পাশাপাশি লোকের কাছে ঋন, দোকান থেকে বাকিতে সামগ্রী নিয়ে চা বাগান ও জঙ্গল অধ্যুষিত এলাকার হাজারের ওপর অসহায় পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিলেন এই বনাধিকারিক। বাজার থেকে সামগ্রী কিনে পরিবার পিছু ১০ কিলো চাল, ৫০০ গ্রাম মুসুর ডাল, ২ কিলো আলু, ৫০০ গ্রাম করে সোয়াবিন প্রদান করেছেন বনদফতরের এই আধিকারিক।

সঞ্জয় দত্ত বলেন, "আমার রেঞ্জ এলাকা থেকে ক্রমাগত সাহায্যের আবেদন আসতে থাকে। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিই নিজের বেতনের টাকা থেকে সাহায্যের কাজ করব। কিন্তু তালিকা তৈরী করতে গিয়ে দেখি ২০০০ -এর বেশি অসহায় পরিবার আছে। এরপর দোকান থেকে বাকিতে সামগ্রী নেওয়ার পাশাপাশি পরিচিত কিছু মানুষজনের কাছ থেকে টাকা ধার করি।"

coronavirus West Bengal
Advertisment