লকডাউনে বাংলাদেশের বুড়িমারীতে এ দেশের ৬১ জন ট্রাক চালক আটকে পড়েছেন। সেখানে তাঁদের খাদ্য সংকট সহ নানা অসুবিধায় দিন কাটছে। এদিকে এ রাজ্যের প্রায় ১৭ হাজার ট্রাক ভিন রাজ্যে আটকে রয়েছে। সে ক্ষেত্রেও নানা জায়গায় খাবারের সমস্যা হচ্ছে বলে ট্রাক মালিক সংগঠনের অভিযোগ। বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ দফতরকে জানানো হয়েছে বলে সংগঠনের কর্তারা জানিয়েছেন।
কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত পার করে ৪ এপ্রিল বিশেষ অনুমতিসহ ৬১টি ট্রাক পাটের বীজ নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশে। ওই ট্রাকগুলিতে শুধু চালকরাই ছিলেন। চ্যাংড়াবান্ধা পেরলেই বাংলাদেশের বুড়িমারী। সেখানেই লকডাউনের জেরে আটকে গিয়েছেন তাঁরা। সইবুল ইসলাম, সুলতান ইসলাম, গোপাল বৈরাগীদের বাড়ি চ্যাংড়াবান্ধায়। আর সীমান্তের ওপারেই লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর। বাড়ি থেকে হাঁটাপথ হলেও কাঁটাতারের ওপারে ট্রাকেই এখন তাঁদের রাত-দিন কাটছে। চ্যাংড়াবান্ধা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে ২১ দিন ধরে সেখানে আটকে আছেন ওই চালকরা। জানা যাচ্ছে, বিহার, জওগাঁয়ের ট্রাকও রয়েছে সেখানে। চরম সমস্যায় পড়ে এখন অনশনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আটকে পড়া ট্রাক চালকরা।
চ্যাংড়াবান্ধা ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আব্দুল সামাদ বলেন, "ওই পাড়ে আটকে থাকা ৬১ জন চালকের না জুটছে খাবার, না জুটছে জল। কোনওরকমে একবেলা আধপেটা খাবার জুটছে। তাঁদের কাছে স্যানিটাইজারও নেই। বাংলাদেশেও লকডাউন চলায় কিছু পাচ্ছেন না। প্রায় এক কাপড়েই রয়ে গিয়েছেন। তাঁদের কাছে মশারি, চাদর কিছুই নেই। ট্রাকেই ঘুমাচ্ছেন।" আব্দুল সামাদের বক্তব্য, "বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে ৪ এপ্রিল ওই ট্রাকগুলো পাটের বীজ নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিল। যাওয়ার সময় বিশেষ অনুমতি পেলেও তার পরের দিন আসার সময় কেন আটকে গেল তা বুঝতে পারছি না।"
ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনও বাংলাদেশে আটকে পড়া ট্রাক ও চালকদের এদেশে ফিরিয়ে আনতে রাজ্য পরিবহণ দফতরে আবেদন জানিয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, "এখন বাংলাদেশে আটকে পড়া ৬১ জন চালক দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। করোনা আবহে তাঁরা একেবারেই স্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে নেই। ঠিকমত খাবারও জুটছে না। কবে ফিরতে পারবেন তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। তাঁদের ফেরানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি।"
এদিকে ভারতের নানা রাজ্যেও বাংলার ট্রাক আটকে রয়েছে লকডাউনের জন্য। সজলবাবু বলেন, "সারা ভারতে এ রাজ্যের প্রায় ১৭ হাজার ট্রাক আটকে রয়েছে। অনেক রাজ্যেই তাঁরা অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। আমাদের ব্যবসার হালও খারাপ। আমরা সরকারের কাছে অর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়েছি।"
রাজ্য পরিবহণ দফতরের বিশেষ সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম বলেন, "সীমান্তে গাড়ি কাস্টম এজেন্টদের ক্লিয়ার করার কথা। 'রিল্যাক্স' হলে সেটা ধীরে ধীরে খুলবে। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশেও লকডাউন চলছে। অন্তর্দেশীয় সীমান্তে একটু সমস্যা আছে। অন্য় দিকে কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ওখানকার সরকারের সঙ্গে কথা বলে নেব। সেক্ষেত্রে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এমনিতে প্রত্যেকটি রাজ্যে রাস্তার ওপরে ২০ কিলোমিটার অন্তর অন্তর ধাবা চালু আছে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন