মায়ের ইচ্ছার সামনে দিনক্ষণ তো কোন ছাড় লকডাউনই কোনও বাধা হতে পারল না। নতুন বউয়ের মুখ দেখতে চান মা- ব্যাস, এটুকুই যথেষ্ট। নদিয়ার বগুলার শ্রীকৃষ্ণ দাস স্কুটি নিয়ে চলে গেলেন পাত্রীর বাড়ি। বিয়ে করলেন। আর সিঁদুর দান পর্ব মিটতেই মায়ের কথা রাখতে বিয়ের পোষাক, টোপর, রজনীগন্ধার মালা পড়েই স্কুটিতে চড়ে নতুন বউকে নিয়ে মায়ের সামনে হাজির হন শ্রীকৃষ্ণ।
Advertisment
পঞ্জিকা মেনেই বিয়ের দিনক্ষণ স্থির হয়েছিল নদিয়ার শ্রীকৃষ্ণ দাস ও রাখী দাসের। বাধ সেধেছিল করোনা পরিস্থিতিতে জারি হওয়া লকডাউন। কিন্তু মায়ের ইচ্ছেপূরণ করতে ছেলে নাছোড়বান্দা। তাই বিয়ের আসরে একাই স্কুটি নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন পাত্র। নিয়ম-রীতি মেনেই সম্পন্ন হল বিয়ে। যদিও সেখানে হাজির পাত্র ও পাত্রী পক্ষের হাতে গোনা কয়েকজন। সোমবার রাতে বিয়ের পর্ব মিটিয়েই নববধূকে স্কুটিতে চাপিয়ে নিয়ে এলেন বাড়িতে। অসুস্থ মা দেখলেন নববধূর মুখ। হাসি ফুটল শ্রীকৃষ্ণ ও রাখীর মুখে।
ছবি- মৌলিক মন্ডল
Advertisment
বিয়ের নির্ধারিত তারিখ ছিল ২ বৈশাখ। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় বিয়ের দিনক্ষণ পিছিয়ে দিতে হয়। স্থির হয়েছিল লকডাউন শিথিল হলে শুভ অনুষ্ঠান করা হবে। কিন্তু কথিত আছে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে নিয়ে নাকি বিশেষ নির্দেশেই ঘটে থাকে। শেষমেষ মায়ের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতে পাত্র-পাত্রী দুপক্ষই সিদ্ধান্ত নেয় সোমবার বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। সেই মোতাবেক নদিয়ার হাঁসখালি ব্লকের বগুলার পেশায় চিকিৎসক শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বাস সোমবার স্কুটি নিয়ে প্রায় ৪০কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছান কৃষ্ণগঞ্জের শাকদহ গ্রামে। এরপর সেখানে নিয়ম-রীতি মেনে বিয়ে সম্পন্ন হয়।
গত সপ্তাহে হঠাৎই শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বাসের মা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এদিকে মায়ের ইচ্ছা, বৌমার মুখ দেখবেন। ছেলেকে খুব পিড়াপিড়ি করতে থাকেন এবং তাঁর ইচ্ছার কথা জানান। সেই মতো ছেলে কৃষ্ণ নিরুপায় হয়ে মায়ের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে পাত্রীর বাড়িতে নিজের পরিবারের লোকজন নিয়ে হাজির হন।পাত্রীপক্ষকে জানান মায়ের ইচ্ছার কথা। শ্রীকৃষ্ণ দাস বলেন, "বৈশাখের প্রথম দিকেই বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল। লকডাউনের জন্য পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। লকডাউনের মধ্য়েই মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মা বউয়ের মুখ দেখতে চান। তাই আমরা দুপক্ষই সিদ্ধান্ত নিই লকডাউনের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।" লকডাউনের মধ্যে পাত্রপক্ষের প্রস্তাব মেনে নেয় পাত্রী পক্ষও। নববধূ রাখী দাস বলেন, "শ্বাশুড়ি মা অসুস্থু হওয়ায় হঠাত্ এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তিনি আমাকে দেখার জন্য আকুপাকু করছিলেন।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন