রাজ্য ছাড়ার আগে মুখ্যসচিবকে উদ্দেশ্য করে ফের 'অম্লমধুর' চিঠি দিলেন কেন্দ্রেীয় পর্যবেক্ষক দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র। রাজ্যে করোনা পরীক্ষা আগের থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, চিকিৎসকরাই করোনায় মৃতদের সংশাপত্র দেবে বলে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে- তার প্রশংসা করছেন তিনি। একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণের সময় রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা এবং বৈরিতামূলক আচরণের অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, করোনায় মৃত্যুর হার গোটা দেশের মধ্যে বাংলায় সবচেয়ে বেশি, আবার করোনা পরীক্ষার হার একেবারে নিচের দিকে। সংক্রমিতদের চিহ্নিত করে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও রাজ্যের খামতি রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের প্রধান। এই রিপোর্টই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবকে পেশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
দু'সপ্তাহ ধরে বাংলার করোনা পরিস্থিতি ও সংক্রমণ রোধে রাজ্য সরকারের ভূমিকা খতিয়ে দেখেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নিযুক্ত এই পর্যবেক্ষক দল। তাঁদের পর্যবেক্ষণে যে বিষয়গুলি গুরুত্ব পেয়েছে তা এদিন চিঠি দিয়ে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে জানানো হয়।
চিঠির প্রথমেই উল্লেখ, মুখ্যসচিবকে মোট সাতটি ও স্বাস্থ্য, খাদ্য ও সরবরাহ, নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবদের একাধিক চিঠি দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি বিষয় জানতে চাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রতি পদেই অসহোযোগিতা মিলেছে। ২৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিবের ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বললেও অন্য কোনও দফতরের পদস্থ কর্তাই কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে কথা বলেননি। এমনটাই অভিযোগ কেন্দ্রীয় দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্রের।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/a1.jpg)
এরপর রাজ্যে মৃত্যু হার নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় দল। চিঠিতে তিনি লিখেছেন যে, এরাজ্যে করোনাতে মৃত্যুর হার ১২.৮ শতাংশ। গোটা দেশের নিরিখে যা সবচেয়ে বেশি। বাংলায় লালারসের নমুনা পরীক্ষাও অত্যন্ত কম হয়েছে। দুর্বল নজরদারির পাশাপাশি সংক্রমিতদের খুঁজে সঠিক ভাবে চিহ্নিতও করা হয়নি বলে দাবি অপূর্ব চন্দ্রের। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, '৩০ এপ্রিলে রাজ্য সরকার প্রকাশিত বুলেটিনে বলা হয়েছে সক্রিয় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭২, মারা গিয়েছেন ৩৩ জন এবং রোগমুক্ত হয়েছেন ১৩৯ জন। সব মিলিয়ে ৭৪৪ জন। ওই একই দিনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিবকে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে জানান যে, মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩১ জন। অর্থাৎ দু'টি তথ্য়ে পার্থক্য রয়েছে ১৮৭ জনের। রাজ্যের দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ৭২ জন কোভিড আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে কো-মর্বিডিটির কারণে। তবে সেই সংখ্যার কোনও উল্লেখ ৭৪৪ জনের হিসাবে নেই।' এক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/b1.jpg)
মে মাসের প্রথম দু'দিনের কোভিড-১৯ বুলেটিন প্রকাশ খামতি ছিল বলে কেন্দ্রীয় দল মনে করছে। কেন রিপোর্টে মৃত্যর সংখ্যা জানানো হয়নি তা নিয়ে রাজ্যকে দেওয়া চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/c1.jpg)
করোনা কনটেনমেন্ট এলাকাগুলিতে রাজ্য প্রশাসনের নজরদারি নিয়েও চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় দলের প্রধান। সেখানে উল্লেখ, 'কনটেনমেন্ট জোনে পোক্ত নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে বলেই দাবি করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু গত দু'সপ্তাহে চারটি জেলার প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের উপর নজরদারির জন্য যে ব্যারক পরিকাঠামো দরকার তা নজরে আসেনি।' ফলে তথ্যের কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/d1.jpg)
রাজ্য দ্রুততার সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে বলেই মত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলায় গড়ে ৪০০ নমুনা পরীক্ষা হত, ২ মে-র পরিসংখ্যানে তা বেড়ে হয়েছে ২৪১০। যা উল্লেখযোগ্য ভাল দিক বলেই জানানো হয়েছে। অডিট কমিটির বদলে চিকিৎসকরাই করোনায় মৃতদের সংশাপত্র দেবে বলে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তারপও প্রশংসা করে কেন্দ্রীয় দল। স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে এগুলি বড় পদক্ষেপ বলে চিঠিতে লেখা রয়েছে। নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়বে বলেই মনে করে কেন্দ্রীয় দল।
চিঠির একেবারে শেষে উল্লেখ, কেন্দ্রীয় দল এ রাজ্য সম্পর্কে চূড়ান্ত রিপোর্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে জমা দেবে। যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, রাজ্য তা মেনে চলবে বলে আশাপ্রকাশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় এই দল আসা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য তরজা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। পরে, রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠে। যা অবশ্য খণ্ডন করেছিলেন মুখ্য সচিব।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন