Advertisment

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেই উদাসীন বাংলা

পুলিশ দিয়ে লকডাউন সফল করা সম্ভব নয়, বরং করোনা দানবকে পরাস্ত করতে সাধারণ মানুষকেই সচেতন হয়ে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
corona malda

মঙ্গলবার লকডাউন ভঙ্গকারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি- কৌশিক দে

লকডাউন ঘোষণা সত্বেও মঙ্গলবার রাজ্যজুড়ে সেই নির্দেশ লঙ্ঘন করতে দেখা গেল একাংশের জনতাকে। বিশেষ করে জেলার পুর এলাকাগুলোতে এই নির্দেশ কার্যকর করতে হিমসিম অবস্থা রাজ্য পুলিশের। কলকাতাতেও অনেকে ক্ষেত্রে অসচেতন হয়ে লকডাউন আগ্রাহ্য করার ছবি সামনে এসেছে। তবে পুলিশ চেষ্টা করছে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের। বেশ কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছে।

Advertisment

সারা বিশ্ব করোনা আতঙ্কে কাঁপছে। ভারতেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। অন্য কোনও উপায় না থাকায় লকডাউনের পথে গিয়েছে এই রাজ্যও। তবু এত কিছুর পরও যেন হেলদোল নেই সাধারণ মানুষের।

নদিয়ার শান্তিপুরে লকডাউনকে উপেক্ষা করে যাত্রী নিয়ে চলছে টোটো। পুলিশ সেই টোটো আটকানোর পর টোটোচালক রোগী নিয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে পার পেতে চাইছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই চালকরা মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ায় টোটো আটক করেছে পুলিশ।

অন্যদিকে মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় দোকান-পাট খোলা থেকেছে। ভিড় হঠাতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কড়া হাতে মোকাবিলা করেছে পুলিশ। গাইঘাটা, গোপালনগরে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। বাইক আরোহীদের তাড়া করার দৃশ্যও দেখা গিয়েছে জেলার বিভিন্ন জায়গায়।

লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর অন্য় জায়গার মতো হুগলির বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে আড্ডায় ভিড় বাড়তে থাকে। সেই ভিড় ভাঙতে এদিন পুলিশকে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে দেখা গেল চুঁচুড়া, চন্দনগনর, বৈদ্যবাটী, শ্রারামপুর, আরামবাগে। এদিন হুগলিতে দোকানপাট মোটের উপর খোলাই ছিল। জটলা দেখলেই পুলিশ সরিয়ে দিচ্ছে জনতাকে।

পূর্ব বর্ধমানে রাস্তায় লোকজনের দেখা মিলছে। টোটো প্রায় বন্ধই রয়েছে। বাইক আরোহীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেও উত্তর মিলছে ডাক্তার দেখাতে বা ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন। দুপুর ১২টায় বাজারের ব্য়াগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। শহরের প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেট চত্বরে ভিড় সরাতে পুলিশকে লাঠি লার্জ পর্যন্ত করতে হয়েছে। তবে শহরের বেশিরভাগ দোকান এদিন বন্ধ ছিল।

মঙ্গলবার দিনভর পূর্ব মেদিনীপুরে পুলিশি টহলদারি চলছে। দোকানপাট বন্ধ রাখাতে বিভিন্ন এলাকায় হানা দেয় পুলিশ। ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত রুটমার্চ পর্যন্ত করেছে পুলিশ। চা কিংবা খাবার দোকানে ভিড় জমালে তৎক্ষণাৎ তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। লকডাউনের পর থেকেই দিঘা পর্যটকশূন্য হয়ে গিয়েছে। দোকান খোলা রাখার জন্য় ২জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

লালামাটির দেশ বাঁকুড়ার দৃশ্য়ও প্রায় একইরকম। সেখানেও লকডাউন সফল করতে ময়দানে নামতে হয় পুলিশকেই। বাঁকুড়া, বিষ্ণপুর, বড়জোড়ার নানা এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে জটলা সরিয়ে দেয়। বিষ্ণুপুরে সবজির বাজারে বিপুল সংখ্যক মানুষ জমায়েত হলে সেখানেও হাজির হয় পুলিশ।

পশ্চিম বর্ধমানেও এদিন লকডাউন উপেক্ষা করে রাস্তায় নামে বহু মানুষ। দুর্গাপুরে বেনাচিতি বাজারে ভিড় সরাতে সোমবার পুলিশ হানা দেয়। এদিন ফের সেই ভিড় কাটাতে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। আসানসোলে অল্প সংখ্যক দোকানপাট খুলেছে।

জলপাইগুড়িতে দোকানপাট খোলা থাকলেও সকালে তা ফাঁকাই ছিল। বেলা বাড়তেই রাস্তায় লোক বাড়তে থাকে। জলপাইগুড়ির ২৫টা ওয়ার্ডে দাপিয়ে বেড়ান স্বয়ং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও ইলওয়াড। পাশাপাশি, জলপাইগুড়ির লকডাউনি এলাকার বাইরে দেখা গিয়েছে উল্টো ছবি। সেখানে হাতে গোনা লোকজন।

মোটের উপর মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তরদিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা সহ অন্যান্য জেলার পরিস্থিতিও প্রায় একইরকম। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিন সর্বত্র প্রায় একই চিত্র চোখে পড়েছে। তবে এরমধ্যেই স্পষ্ট যে পুলিশ দিয়ে লকডাউন সফল করা সম্ভব নয়, বরং করোনা দানবকে পরাস্ত করতে সাধারণ মানুষকেই সচেতন হয়ে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।

West Bengal coronavirus corona
Advertisment