করোনার মারণভাইরাসের থাবা যেন ক্রমেই চেপে বসছে রাজ্যে। শনিবারও করোনা ভাইরাসের ইতিবাচক উপস্থিতি পাওয়া গেল রাজ্যের দুই মহিলার দেহে। এগরার একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুই মহিলা। বায়ুবাহিত এই রোগের দাপটে এখনও পর্যন্ত বাংলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন। মৃত ১। লকডাউনের দিন যত এগোচ্ছে, ততই শক্তিশালী হচ্ছে করোনাভাইরাস। আতঙ্ক ছাপিয়ে এখন ভীতসন্ত্রস্ত রাজ্যবাসী। করোনায় আক্রান্ত উত্তরবঙ্গের এক ব্যক্তি। আজ শনিবার তিনটি পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে নাইসেড থেকে।
এদিকে, নদিয়ার তেহট্ট থেকে করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়া ৫ জনের কেউই নদিয়া তথা রাজ্যেরই বাসিন্দা নন বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় স্বাস্থ্য দপ্তর। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয় আক্রান্ত ৫জনের মধ্যে দুই জন দিল্লি ও তিন জন উত্তরাখন্ড থেকে তেহট্টের বার্নিয়ার বাসিন্দা মোহন মন্ডলের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবারই এক পরিবারের পাঁচজনের শরীরে ইতিবাচক সাড়া মেলে করোনার। নদিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচ জনকে কলকাতা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠায় নদিয়া জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ তেহট্ট কর্মতীর্থ থেকে তাদের অ্যাম্বুলান্স করে কলকাতায় আনা হয়। পাশাপাশি, এদের সংস্পর্শে এসে ছিলেন এমন সাত জনকেও এদিন দু'টি অ্যাম্বুলান্স করে পাঠানো হয়েছে রাজারহাটের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে।
আরও পড়ুন: করোনায় ‘রেইনকোট দিচ্ছে সরকার’, ক্ষোভে ফুঁসছে কলকাতার ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরা
এদিকে, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক কোভিড-১৯ আক্রান্ত এমন ভুয়ো খবর সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে গ্রেফতার হন ২৯ বছর বয়সী যুবতী। প্রসঙ্গত, শুক্রবারই বৈঠকে মমতা বলেন, "“ব্যঙ্গ করবেন না। কোনও বিভ্রান্তিমূলক খবর ছড়াবেন না। আপনাদেরও পরিবার আছে, এটা মনে রাখবেন। আমরা ফেক নিউজ খুঁজে বার করবই। সিআইডি, কলকাতা পুলিশের শাখা কাজ করছে।”
এদিকে, উত্তরবঙ্গের মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলে যেন স্বাস্থ্য পরিষেবা পায়, সেই দিকটি নিশ্চিত করতেই উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষাকেন্দ্র শুরু করার কথা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও যারা বার্ধক্যভাতা পান, তাঁদের আগাম দু’মাসের ভাতাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন থেকে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: “করোনা থেকে বাঁচলেও, ক্ষুধা থেকে রক্ষা নেই”: জীবনযুদ্ধে শামিল বাংলার দিনমজুর
তবে চরম দুর্দশায় ভিন রাজ্যে বাংলার শ্রমিকরা। বাড়তি লাভের আশায় বাংলা ছেড়েছিলেন মালদার মইদুল, সাবাজ, আজেমরা। ভাল-মন্দ মিলিয়ে চলছিল ভালই। কিন্তু, লকডাউনের জেরে গভীর সংকটে তাঁরা। কাজ বন্ধ, নেই উপার্জন। মিলছে না চাল-ডালও। ফলে আধ পেটা খেয়েই আপাতত দিন গুজরান। কিন্তু, দিন দু’য়েকের মধ্যেও তাও ফুরোবে। তখন কী হবে? অপাতত এই প্রশ্নেই অসহায় বাংলা থেকে ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকরা। একই অবস্থা রাজ্যের পাটকলে কর্মরত শ্রমিকদের। বাংলার পাটকলের শ্রমিকেরা ‘লক আউট’ শব্দের সঙ্গে পরিচিত গত কয়েকযুগ ধরে। কিন্তু ‘লকডাউন’? এ জীবনে এই প্রথম। তাঁরা জানতেন পাটকল লকআউট হলে কোথাও না কোথাও কাজ জুটিয়ে নিতে পারতেন তাঁরা। কিন্তু এ যে লকডাউন! দীর্ঘনি:শ্বাস ফেলে হুকুমচাঁদ মিলে কাজ করা রবি রাহা বলেন, “আমরা সবসময় লক আউট পরিস্থিতিকে ভয় করতাম। কারণ এর অর্থ হল আমরা কাজের বাইরে থাকব। কিন্তু অন্য জায়গায় কাজের আশা থাকত। কিন্তু লকডাউনের পর উপার্জনের আর কোনও বিকল্প রাস্তা থাকল না।”
অন্যদিকে, শনিবার ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁল ৮৭৩। মারণ ভাইরাসে দেশে মৃতের সংখ্যা ২০। দেশে ২১ দিনের লকডাউনের মধ্যে কেরালা দেখল প্রথম করোনায় মৃত্যু। কোচির বাসিন্দা দুবাই ফেরৎ ৬৯ বছরের বৃদ্ধ গত ২২ মার্চ থেকে কলামাশারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছিলেন। সোয়াপ টেস্টে তাঁর কোভিড-১৯ পজেটিভ ধরা পড়ে। শনিবার মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন