Advertisment

'ঠিকমতো পড়াতে পারতেন না', ভুয়ো শিক্ষিকা রিংকুর থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে খুশি পড়ুয়ারা

সহকর্মী ভুয়ো শিক্ষক, তালিকা প্রকাশের পর এখনও ঘোরই কাটছে না পূর্বস্থলির রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Rajapur_School

ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

পড়ুয়াদের কাছে তিনি রিংকু ম্যাডাম। স্কুলের শিক্ষিকা। কিন্তু, সহপাঠীরা তাঁর নাম বললেই হাসতে শুরু করতেন বহু পড়ুয়াই। কারণ, স্কুলের সব পড়ুয়াই জানত রিংকু ম্যাডাম ঠিকমতো পড়াতেই পারেন না। ইতিহাসে শিক্ষিকা। কিন্তু, ইতিহাসের ব্যাপারেই জানতে চাইলে, কিছু বলতে পারতেন না ম্যাডাম। বারবার অনুরোধ করলেই বাঁধাধরা একটা কথা ছিল, 'কাল বলব।' কিন্তু, ম্যাডামের সেই কাল আর ফিরত না। এতটা দৈনন্দিনের রেওয়াজ ছিল পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলির রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠে।

Advertisment

এতকিছুর পরেও অবশ্য তিনি যে ভুয়ো শিক্ষিকা সেকথা ভাবতেও পারেনি সহজ-সরল পড়ুয়ারা। এবার ভুয়ো শিক্ষকের তালিকায় ম্যাডামের নাম ওঠার পর পড়ুয়াদের কাছে সবকিছু যেন জলের মত পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার এই স্কুলের পড়ুয়াদের কাছ থেকে তেমনটাই শুনলেন আমাদের প্রতিনিধি। ম্যাডাম অবশ্য ভুয়ো শিক্ষকের তালিকায় নাম ওঠার পর থেকেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু, তাতে কী! স্কুলে পড়ানো নিয়ে এতদিন যা কীর্তি করেছেন, তাতে এখনও তিনিই পড়ুয়া থেকে শিক্ষকদের কাছে রীতিমতো আলোচনার বিষয়।

স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এখন উত্তাল গোটা বাংলা। নিয়ম ভেঙে অনেকেরই অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়া নিয়ে এখনও পথে বসেই আন্দোলন চালাচ্ছেন বহু যোগ্য এসএসসি চাকরিপ্রার্থী। ২০১৯-এ এই আন্দোলন দানা বাধে। এর পর ২০২২ সালের প্রথম দিক থেকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি আন্দোলন জোরদার রূপ পায়। দুর্নীতি-কাণ্ড নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টেও রুজু হয় মামলা। আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্তে নেমেই দুর্নীতির একের পর এক পরদা ফাঁস করা শুরু করে। তার পর থেকেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে অবৈধ উপায়ে শিক্ষকের চাকরি বাগিয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করা ব্যক্তিদের নাম।

কিছুদিন আগে স্কুল সার্ভিস কমিশন নবম-দশমে এমনই ১৮৩ জন অবৈধ শিক্ষকের নামের তালিকা আদালতে জমা দিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার বাণী নিকেতন রঙ্কিনী মহল্লা বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক শেখ ইনসান আলির নাম। তালিকা প্রকাশ হবার পর থেকেই মেমারি পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা ওই শিক্ষক কার্যত আত্মগোপন করেছেন।

এই অবস্থায় মঙ্গলবার রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন নবম-দশমের আরও ৪০ জন ভুয়ো শিক্ষক-শিক্ষিকার নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে পাঁচ নম্বরে নাম রয়েছে পূর্বস্থলির রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠের ইতিহাসের শিক্ষিকা রিংকু দেবনাথের। ২০১৯ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করছিলেন। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভুয়ো শিক্ষকদের নামের দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই পূর্বস্থলির পারুলিয়ার বাসিন্দা রিংকু আর স্কুলমুখো হননি। ফোনও সুইচড অফ। বাড়িতে ডাকাডাকি করেও পরিবারের কারও সাড়া মিলছে না।

শিক্ষিকা রিংকুর কীর্তি ফাঁস হতেই রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা হতবাক। এই স্কুলেরই শিক্ষিকা শুভ্রা দত্ত বৃহস্পতিবার বলেন, 'রিংকুর কীর্তি আমাকে সত্যিই অবাক করে দিয়েছে। ওর ওএমআর শিট ব্ল্যাংক। অথচ ও এই স্কুলে শিক্ষকতা করছিল। এটা এখনও কল্পনাও করতে পারছি না। এমন অভিজ্ঞতা আমার জীবনে এই প্রথম হল।'

শুভ্র আরও বলেন, 'রিংকু আমার সহকর্মী ছিল। একসঙ্গে টিচার্স রুমে বসতাম, টিফিন খেতাম। কিন্তু, রিংকু কোনওদিন কাউকে বুঝতে দেয়নি যে ও অবৈধ উপায়ে শিক্ষিকার চাকরি বাগিয়েছে। আমরা স্কুলের সব শিক্ষকরা জানতাম যে ও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছে। আমাদের সেই ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রকাশিত ভুয়ো শিক্ষকের নামের তালিকা।'

আরও পড়ুন- আবাস যোজনার টাকা পাচ্ছেন পাকা ঘরের মালিক, প্রতিবাদে পথ অবরোধ গ্রামবাসীদের

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র গৌরব রায়ের কথায়, 'রিংকু ম্যাডাম ক্লাস নাইনে ইতিহাসের ক্লাস নিতেন। ক্লাসে ওঁনাকে ইতিহাসের বিষয়ে কিছু জানতে চাওয়া হলে, সঙ্গে সঙ্গে জানাতে পারতেন না। পরে জানাবেন বলে পাস কাটাতেন। সেই জন্য রিংকু ম্যাডামের শিক্ষকতা করার যোগ্যতা কতটা রয়েছে, তা নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে সন্দেহ দানা বেধেছিল।'

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সজল নন্দী অবশ্য রিংকু দেবনাথের নাম ভুয়ো শিক্ষকের তালিকায় থাকা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, 'ভুয়ো শিক্ষকের তালিকায় আমার বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকার নাম রয়েছে জেনে খুবই খারাপ লাগছে। বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কম হয়ে গেল।' রিংকু ম্যাডামের বিষয়ে তাঁকে সরকারিভাবে যা জানানো হবে, তিনি সেটাই করবেন বলে জানিয়েছেন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

Teachers Recruitment school Fake Teacher
Advertisment