একমাত্র মেয়ের মৃত্যুশোক ভুলতে পারেননি, একবছর পর নিজেদেরই শেষ করে দিলেন বাবা-মা, বাকরুদ্ধ পড়শিরা

মেয়ের মৃত্যুর পরে বছর ঘুরে আসছিল। মধ্যবয়সী রঞ্জন-রীনা যৌথ সিদ্ধান্ত নেন আর নয়। জীবন যন্ত্রণা ও স্মৃতির বোঝা থেকে পরিত্রাণ পেতে সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সবাইকে জানিয়ে দেন তাঁরা, তারাপীঠ যাবেন। তারাপীঠে যাননি তাঁরা। সবাইকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের গৃহবন্দি করে ফেলেছিলেন রঞ্জন-রীনা।

মেয়ের মৃত্যুর পরে বছর ঘুরে আসছিল। মধ্যবয়সী রঞ্জন-রীনা যৌথ সিদ্ধান্ত নেন আর নয়। জীবন যন্ত্রণা ও স্মৃতির বোঝা থেকে পরিত্রাণ পেতে সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সবাইকে জানিয়ে দেন তাঁরা, তারাপীঠ যাবেন। তারাপীঠে যাননি তাঁরা। সবাইকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের গৃহবন্দি করে ফেলেছিলেন রঞ্জন-রীনা।

IE Bangla Web Desk & Subhamay Mandal
New Update
Barasat Couple suicide one year after daughters death

শুক্রবার বারাসতে নিজেদের বাড়ি থেকে উদ্ধার হল রঞ্জন মণ্ডল ও রীনা মণ্ডলের নিথর দেহ।

কেউ ভোলে, কেউ ভোলে না। মেয়ের মৃত্যুর শোক ভুলতে পারেননি বাবা-মা। একবছর আগে জুলাই মাসে বছর উনিশের কন্যা আত্মহত্যা করেছিল। একমাত্র মেয়ে-হারানোর শোক সামলে উঠতে পারেননি বাবা-মা। আর সইতে পারছিলেন না তাঁরা। তাই তাঁদের লিখতে হয়েছিল, “মনুকে ছাড়া আমরা বাঁচব না, চললাম ওঁর কাছে।” জুলাই মাসের প্রথম শুক্রবার বারাসতে নিজেদের বাড়ি থেকে উদ্ধার হল রঞ্জন মণ্ডল ও রীনা মণ্ডলের নিথর দেহ। মেয়ের শোকে স্বামী- স্ত্রী আত্মঘাতী হলেন, পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে ।

Advertisment

এদিন সকালে বারাসতের মর্মান্তিক ঘটনা এলাকাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে, বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন বারাসতের পালপাকুড়িয়ার মণ্ডল পরিবারের বন্ধু আত্মীয় পরিজন। তবে তাঁরা অবশ্য বলছেন মেয়ে চলে যাওয়ার পর থেকে বাঁচার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন স্বামী-স্ত্রী। বারংবার মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বামী-স্ত্রী বলতেন, বেঁচে থেকে কী আর হবে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসের শেষদিকে তাঁদের একমাত্র মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছিল।

এলাকাবাসীর বক্তব্য, প্রেমে ব্যর্থতা মানতে পারেননি তরুণী। ছোট পরিবারের একমাত্র মেয়ের মৃত্যু তিলেতিলে ক্ষয় করে দিচ্ছিল বাবা মাকে। বাবা বছর পঞ্চাশের রঞ্জন মণ্ডল পেশায় একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মী। মেয়েকে বড় ভালবেসে বড় করে তুলেছিলেন বাবা-মা। মেয়ের চলে যাওয়ার পরে রঞ্জনবাবু আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আত্মীয়-পরিজন। সে যাত্রা বেঁচে যান তিনি।

মেয়ের মৃত্যুর পরে বছর ঘুরে আসছিল। মধ্যবয়সী রঞ্জন-রীনা যৌথ সিদ্ধান্ত নেন আর নয়। জীবন যন্ত্রণা ও স্মৃতির বোঝা থেকে পরিত্রাণ পেতে সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সবাইকে জানিয়ে দেন তাঁরা, তারাপীঠ যাবেন। তারাপীঠে যাননি তাঁরা। সবাইকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের গৃহবন্দি করে ফেলেছিলেন রঞ্জন-রীনা।

Advertisment

আরও পড়ুন Birbhum: সেই বীরভূমেই ফিরল বগটুইয়ের স্মৃতি! ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে খুনের অভিযোগ মা-ছেলেকে

কয়েকদিন ধরেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না, ফোন বেজে চলেছিল। ফোন ধরবে কে? বাইরে থেকে তালা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী জীবন যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে ফেলেছেন। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে বিষ পান করে আত্মঘাতী হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। কন্যা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার পরে বাবা-মার মৃত্যু টের পেতে সময় লাগে পাড়া প্রতিবেশীর। অবশেষে পচা দুর্গন্ধ ও বাড়ির চারপাশে ভনভন করতে উড়তে থাকা মাছি ও কীট পতঙ্গ জানান দেয় মণ্ডল পরিবারে কিছু ঘটেছে। এলাকায় রাজনৈতিক নেতাদের মারফত পুলিশে খবর যায়। পুলিশ ঘর ভেঙে উদ্ধার করে কন্যা শোকে আত্মঘাতী ৪০-৫০ বছরের মা-বাবার পচাগলা মৃতদেহ। একদিকে পড়েছিল তাঁদের দেহ। অন্যদিকে, খুলে রাখা ডায়েরিতে “মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় “- সুইসাইডাল নোট। একবছরের মধ্যে আনন্দ- প্রাণোচ্ছ্বল একটি পরিবারের করুণ পরিসমাপ্তি। কেউ থাকল না বারাসতের পালপাকুড়িয়ার মণ্ডল বাড়িতে

West Bengal Barasat Suicide