Advertisment

করোনা-লকডাউন-আমফান ত্রিশূলে বিধ্বস্ত সুন্দরবন

করোনা, লকডাউন, আমফান। ত্রিফলায় ধাক্কায় বেসামাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৌসুনি দ্বীপ। বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে কেবল ধ্বংসের ছবি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ঘূর্ণিঝড়ে ধ্বস্ত মৌসুনী দ্বীপ।

করোনা, লকডাউন, আমফান। ত্রিফলা ধাক্কায় বেসামাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৌসুনি দ্বীপ। বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে কেবল ধ্বংসের ছবি। কোথাও সম্পূর্ণ ধসে গিয়েছে মাটির বাড়ি, আবার কোথাও কাঠামোটুকু শুধু রয়ে গিয়েছে। তাতেই কোনওরকমে কাপড় বা ত্রিপল লাগিয়ে মাথা গুঁজেছেন বাসিন্দারা। প্রশাসন ত্রাণ শিবিরের বন্দোবস্ত করলেও করোনা আতঙ্কে সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছেন দুর্গত মানুষগুলো। এরপর আবার গোদের উপর বিষফোড়ার মতো দলে দলে পরিযাযী শ্রমিকরা ফিরছেন জেলায়। যা আতঙ্ক কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। মাথা ব্যাথা বেড়েছে প্রশাসনেরও।

Advertisment

মোসুনী দ্বীপের বাসিন্দা জেলিম খান ও রেশমা বিবি। বাড়ির ছাদ নেই। সরকারের দেওয়া ত্রিপলেও কাজ হয়নি। কোনও মতে রঙ-চটা কাপড় বেঁধে সেখানেই থাকছেন দুই সন্তানের অভিভাবক। তবু তাঁরা ত্রাণ শিবিরে যেতে নারাজ। পাছে করোনা সংক্রমিত হয়ে পড়েন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের এই দ্বীপের অধিকাংশ আমফান বিধ্বস্ত মানুষের এখন এটাই মত।

জেলিমের বাড়ি থেকে একটু এগোলেই মধ্য় পঞ্চাশের সালাউদ্দিনের বাড়ি। ভাগ্যের জোরে ছেলে কেরালা থেকে লকডাউনের আগেই ফিরেছে। কিুন্তু, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। তার শিকার সালাউদ্দিনও। তলিয়ে গিয়েছে সাত বিঘা জমি। প্রশাসন একশ দিনের জব-কার্ড দেবে বললেও কবে তা হাতে মিলবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছেন তিনি। এই অনিশ্চয়তা আমফান ধ্বস্ত সুন্দরবনের ঘরে ঘরে।

প্রশাসনের পাশাপাশি প্রচুর মানুষ দুর্গতদের সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। কিন্তু, সাহায্য়কারীদের দ্বীপে প্রবেশ করতে দিতে নারাজ বাসিন্দারা। কারণ, সেই করোনা। জেটি পর্য়ন্ত ত্রাণ পৌঁছে দিলে কোনও মতে দুর্গতরাই তা নিয়ে আসছেন গ্রামে। ঝড়ের পর করোনা থেকে বাঁচতেই এই পন্থা বলে জানালেন মৌসুনী দ্বীপের বাসিন্দা নাড়ুগোপাল বাখড়া।

স্থানীয় বাসিন্দা অভিজিৎ মাইতির কথায়, লকডাউনে কাজ নেই, তার উপর আমফানের জেরে প্রবল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাড়ি মেরামতির জিনিসের দামও বেড়েছে তরতরিয়ে। অ্যাসবেস্টার থেকে বাঁশ- সবকিছুরই দাম ১০০-২০০ টাকা বেড়ে গিয়েছে। মানখানার বিডিও সুমন দাস জানালেন, 'প্রবল ক্ষতি হয়েছে। এখন ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছোন হচ্ছে গ্রামে গ্রামে।'

publive-image সব হারিযে হতাশ সুন্দরবনের বাসিন্দারা।

একদিকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে, অন্য়দিকে আবার পরিযায়ীরা ভিন রাজ্য থেকে জেলায় ফিরছেন। তাঁদের স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টিনের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় স্কুলগুলিকে একাজে লাগানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, এখনও পর্য়ন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, ১,১৩৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজয় থেকে ও ১,১৪৪ জন অন্য় জেলা থেকে ফিরেছেন। মহকুমাশাসক সৌভিক চট্টোপাধ্য়ায়য়ের কথায়, 'জিজ্ঞাসসা করছিলেন না কতটা শক্ত কাজ? করোনা, আমফান, পরিযায়ীরা ঘরে ফিরছেন ও ত্রাণ কাজ একসঙ্গে সব সামলাতে হচ্ছে।' তাঁর ঘরের পাশে অন্য একটি ঘরে গিয়ে দেখা গেল, কন্ট্রোলরুমে দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছান না কর্মীরা। এক সঙ্গে চারজন অনবড়ত কাজ করে চলেছেন। তাঁরাই সমন্বয় রক্ষা করছেন। ২৪ ঘন্টা খোলা এই কন্ট্রোলরুম। সেখানে যেন দক্ষযজ্ঞ চলছে।

প্রসাসন সূত্রে খবর আমপানে মোট মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই মৃত ২৪ জন। শুক্রবার রাজ্য় সরকার ৬.২৫০ কোটি টাকা সহায়তার ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রও হাজার কোটি ত্রাণ সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু, সব হারানো মানুষগুলোর সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ, ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সামলে করোনা মোকাবিলা।

Read in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

West Bengal corona virus corona amphan
Advertisment