সিপিএমের প্রতীকে ছাপ মারা ব্যালট উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ভাতারে। শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ২ ব্লকে গণনা কেন্দ্রের পাঁচিলের পিছনের জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছিল সিপিএমের প্রতীকে ভোট দেওয়া ও প্রিসাইডিং অফিসারের সই থাকা ১৫টি ব্যালট। শনিবার ভাতারের ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে থেকে উদ্ধর হল সিপিএমের প্রতীকে ভোট দেওয়া এক গোছা ব্যালট। সিপিএম নেতৃত্বর দাবি, এইসব ব্যালটই লুটের ভোটের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব গোটা বিষয়টিই এড়িয়ে গিয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোট গননার জন্য যাবযতীয় ব্যবস্থা তৈরি করা হয় পূর্বস্থলী ২ ব্লকে কিষাণমান্ডিতে। ১১ জুলাই সকালে সেখানেই শুরু হয় ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বূথ গুলিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা শাসক বিরোধী দলের প্রার্থীদের পক্ষে ও বিপকে পড়া ভোটের ব্যালট গণনা। গণনা শেষে জানা জায়, পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ১০ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ টিতে তৃণমূল আর তিনটিতে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। কিন্তু এই ফলাফলে অসন্তুষ্ট সিপিএম ওই দিনই গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে সরব হয়। তার পর থেকে তিনদিন কাটতে না কাটতে গণনা কেন্দ্রের পাঁচিলের পিছনের পরিত্যক্ত জায়গা থেকে উদ্ধার হয় সিপিএমের প্রতীকে ভোট দেওয়া ব্যালট। এর পরেই আর রাখঢাক না রেখেই সিপিএম নেতৃত্ব ব্যলট লুটের জন্য তৃণমূলকেই কাঠগড়া তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও থানার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কিষাণমান্ডির পাঁচিলে পিছনের পরত্যক্ত জায়গা থেকে প্রিসাইডিং অফিসারের সই থাকা ১৫টি ব্যালট পাওয়া গিয়েছে বলে সিপিএম নেতৃত্ব দাবি করেছেন। তাঁদের এও দাবি যে,১৫টি ব্যালটেই সিপিএমের প্রতীকে ভোট রয়েছে। ব্যালট পেপারগুলি পূর্বস্থলী গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬৫ নম্বর বুথের কারিগর পাড়ার অন্তর্গত। যেখানে সিপিএমের প্রার্থী মারিয়া বিবি শেখ তৃণমূল প্রার্থীর কাছে ৩ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। অথচ সিপিএমের প্রতীকে তাঁদের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া ১৫টি ব্যালট পেপার উদ্ধার হল গণনা কেন্দ্রের বাইরের পরিত্যক্ত জায়গা থেকে ।
এই বিষয়ে পূর্বস্থলীর সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ সাহা বলেন, 'ব্যালট পেপারগুলি আমরা বৃহস্পতিবার গণনা কেন্দ্রের পাঁচিলের পিছনের পরিত্যক্ত জায়গা থেকে পাই। ওই ব্যালট গুলি বাইরে ফেলে দিয়ে ১৬৫ নম্বর বুথে আমাদের প্রার্থী মারিয়া বিবিকে ৩ ভোটে হারিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। গণনার দিন আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। কারণ যতগুলি ব্যালট পেপার থাকার কথা তা ছিল না। ৫০টির উপর ব্যালট পেপার কম পাওয়া গিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল সেগুলি অন্য বাক্সে চলে গিয়েছিল। এই কথা এজেন্ট বারবার বলা সত্বেও তাঁকে ধাক্কা মেরে বের করে দেওয়া হয়।' এই বিষয়টি নিয়ে সিপিএম যে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে তার ইঙ্গিত মিলেছে প্রদীপ সাহার কথায়।
এই প্রসঙ্গে পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, 'এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। না জেনে কোন কথা বলতে পারবে না।'
অন্যদিকে শনিবার ভাতারের সাহেবগঞ্জ ২ নম্বর পঞ্চায়েতের আয়মাপাড়া গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে বেশ কিছু ব্যালট পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় কৃষকরা। জানা গিয়েছে, আয়মাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাহেবগঞ্জ ২ পঞ্চায়েতের ১২ নম্বর সংসদের ১৬৭ নম্বর বুথের ভোটগ্রহণ হয়েছিল। এই বুথে গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন জোৎস্না বেগম। আর সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন হাসনা বিবি শেখ। ওই বুথে মোট ভোটার ৮৪৯ জন। তার মধ্যে ভোট পড়েছিল ৫২০ টি। গণনার সময়ে ভোট বাতিল হয় ৩৫ টি। গণনা শেষে ঘোষনা করা হয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জোৎস্না বেগম পেয়েছেন ৩৪৫ টি ভোট। সিপিএমের প্রার্থী হাসনাবিবি পেয়েছেন ১৪০ টি ভোট। তৃণমূল প্রার্থীকে ২০৫ ভোটে জয়ী ঘোষণা করা হয়। এর পরে এদিন সিপিএমের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট উদ্ধার হওয়ার হতবাক সাহেবগঞ্জের ভোটাররা।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'ভোট গণনার দিন আয়মাপাড়া গ্রামের বুথে আমাদের কাউন্টিং এজেন্টকে মারধর করে বের করে দিয়ে তৃণমূল তাদের প্রার্থীর জয় নিশ্চিৎ করে। এর তিনদিন পর সিপিএমের প্রতীকে ছাপ দেওয়া ব্যালট উদ্ধারে আর বুঝতে বাকি থাকে না যে ব্যালট লুট করেই তৃণমূল জয় সুনিশ্চিৎ করেছে।'
যদিওরাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, 'হেরে গিয়ে সিপিএম মিথ্যা প্রচার করছে।'