বেহালা পশ্চিমের জেলবন্দি বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অপসারণের দাবিতে গণভোটের আয়োজন করে চরম অস্বস্তিতে পড়ল সিপিএম। জনসাধারণ যে তাদের পাশে নেই, গণভোটের পরিসংখ্যানেই তা বুঝিয়ে দিল রাজ্যের প্রাক্তন শাসক দলকে। ৩ লক্ষ ভোটারের বেহালা পশ্চিমে সিপিএমের আয়োজিত গণভোটে পড়ল মাত্র ৪৬১ ভোট। যার জেরে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে চরম অস্বস্তিতে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। রবিবার আয়োজিত এই হাস্যকর গণভোটের জন্য এখন স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে সিপিএম নেতা-কর্মীদের টোন, টিটকিরিও শুনতে হচ্ছে।
মজার ব্যাপার হল, গণভোটে অংশগ্রহণকারী ভোটারের হাস্যকর সংখ্যাটা ওই এলাকায় তাদের যতজন পার্টিকর্মী ও সমর্থক রয়েছে বলে সিপিএম দাবি করে, তার চেয়েও অনেক কম। গত বিধানসভা ভোটে (২০২১ সাল)-এ বেহালা পশ্চিমে মোট ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৫ জন ভোটারের মধ্যে সিপিএম প্রার্থী নীহার ভক্ত পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ৫০৯ ভোট। যা ছিল মোট প্রদত্ত ভোটের ২০.৪৯ শতাংশ। নীহার পেয়েছিলেন তিন নম্বর স্থান। তবে, ২০২১-এর ডিসেম্বরে কলকাতা পুরনির্বাচনে বেহালা পশ্চিমের বেশির ভাগ ওয়ার্ডে বিজেপিকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন সিপিএম প্রার্থীরা। তার পর মাত্র একবছরের মধ্যেই কি তাহলে বেহালা পশ্চিমে সিপিএমের জনসমর্থন এক্কেবারে তলানিতে চলে গেল?
অবশ্য মুখ বাঁচাতে স্থানীয় সিপিএম নেতা-কর্মীরা এই গণভোটকে হাস্যকর বলে মানছেন না। গত বিধানসভা নির্বাচনের সিপিএম প্রার্থী নীহার ভক্তের মতে, 'আসলে রাস্তার ওপরে এই গণভোট নেওয়া হয়েছে। তাই সাধারণ মানুষ এই ভোটে অংশগ্রহণ করতে লজ্জা পেয়েছেন। আর, একটি মাত্র ওয়ার্ডের যুব সংগঠনের কর্মীরা এই গণভোটের আয়োজন করেছিল, তাই এই ভোটে সে ভাবে মানুষ অংশগ্রহণ করেননি। এই গণভোট আসলে ছিল প্রতীকী।’ গত বিধানসভা নির্বাচনের সিপিএম প্রার্থী যাই বলুন না-কেন, এই গণভোট নিয়ে বেহালা পশ্চিমে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল সিপিএম। জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতেও কয়েক মাস ধরে সিপিএম কর্মীরা লাগাতার প্রচার চালিয়েছেন। তারপর ৩০ এপ্রিল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই গণভোটের আয়োজন করেছিল।
আরও পড়ুন- এক বাঙালি বিপ্লবী, যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মেক্সিকান কমিউনিস্ট পার্টি
আর, সেই গণভোটের হাস্যকর ফলাফলের মধ্যে সিপিএমের বুকে বিঁধেছে অন্য একটি তির। তা হল, যে মাত্র ৪৬১টি ভোট পড়েছে, তার মধ্যে ২৫ জন আবার পার্থ চ্যাটার্জির ইস্তফার দাবির বিরোধিতা করে ভোট দিয়েছেন। যা দেখে স্থানীয় সিপিএম নেতা-কর্মীদের অনেকেই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, 'এভাবে গণভোটের আয়োজন করে নিজেদের হাস্যকর করে না-তুললেই ভালো হত। প্রতীকী ভোট বললে, তবুও একটা সম্মান রাখা যেত।' যা বুঝিয়ে দিয়েছে, এই গণভোট সিপিএমের নেতা-কর্মীদের ঠিক কতটা হতাশ করেছে। আর, এসব দেখে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, মানুষ যে সিপিএমের পাশে নেই। ওদেরই গণভোট নতুন করে তা প্রমাণ করে দিল।