scorecardresearch

ধনতেরাসের আগেই ফাটল, মাথায় হাত বউবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের, বিপুল লোকসানের আশঙ্কা!

মেট্রো আধিকারিকদের উপস্থিতিতে একে একে দোকানের শাটার খোলা হয়।

kolkata metro, metro construction, kolkata bowbazar, houses evacuated
ধনতেরাস আগেই মাথায় হাত বউবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের, ফাটলের জেরে বিপুল লোকসানের আশঙ্কা!

সামনেই ধনতেরাস, দিওয়ালি! তা কাটতে না কাটতেই বিয়ের মরশুম। উৎসব আবহে মাথায় হাত বউবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের। বউবাজার এলাকায় রয়েছে একাধিক সোনার দোকান। শুক্রবার ভোরে মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে ফাটল দেওয়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যেখানে বসে তাঁরা কাজ করছেন তারই ওপরে দেখা দিয়েছে ফাটল। ফাটলের জেরে তড়িঘড়ি অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সোনার গয়না গাঁটি ব্যাগ সুটকেস, ট্রাঙ্কে ভরে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে।

মদন দত্ত লেন ছাড়িয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে বড় রাস্তার ধারের একাধিক সোনার দোকানে। এই খরব পেয়েই তড়িঘড়ি ছুটে আসেন এলাকার একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। এসে বন্ধ দোকানের শাটার তুলতেই চোখ কপালে। ফাটলের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। এদিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল একাধিক সোনার দোকানের সামনে উদ্বেগ নিয়ে দাঁড়িয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। মেট্রো আধিকারিকদের উপস্থিতিতে একে একে দোকানের শাটার খোলা হয়। খুলতেই দেখা যায়, একাধিক দোকানে ফাটল। তা দেখেই মাথায় হাত স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের।

মেট্রো কর্তাদের অনুরোধে তড়িঘড়ি শুরু হয় মাল পত্র গোছানোর কাজ। বিপুল পরিমাণ সোনার গয়না পুলিশি পাহারায় নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। শুধুমাত্র মদন দত্ত লেনে নয়, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটেরও ফাটল ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর। আগামী কয়েকঘণ্টায় ফাটল আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফাটল আটকাতে কাজ চালাচ্ছেন মেট্রোর ইঞ্জিনিয়াররা। এলাকার এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কথায়, ” কোভিড কালে এমনিতেই ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। সামনেই ধনতেরাস, দিওয়ালি! আর তারপরই বিয়ের মরশুম। প্রচুর অর্ডার হাতে রয়েছে। কীভাবে কী সামাল দেব তা ভেবেই আমাদের দিশেহারা অবস্থা। আপাতত দোকানের সব মাল নিয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটাই করছি। কবে দোকানে ফিরতে পারব জানিনা, ক্ষতিপূরণের ব্যপারেও বিশদে কোন তথ্য জানা নেই। কাস্টমারদের কী করে অর্ডার ডেলিভারি দেব সেটাই এখন গভীর প্রশ্ন”।

মেট্রো রেল সূত্রে খবর, আজ সকালেই মদন দত্ত লেনের প্রায় ১০ টি বাড়িতে ফাটল ধরে। বেলা গড়াতেই মেট্রোর পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মিলেছে ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা। এলাকারই এক বাসিন্দার কথায়, “বারবার মেট্রো রেলের গাফিলতির কারণে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বার বার আমাদের ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে হোটেলে। কবে আবার ঘরে ফিরব তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই! ক্ষতিপূরণ পেলেই কী সব কিছু মিটে গেল? বাড়িতে অসুস্থ ব্যক্তি, বাচ্চা , বয়স্করা রয়েছেন। কীভাবে আমরা দিন কাটাবো তা ভেবেই দিশাহীন অবস্থা আমাদের”। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, “যখনই এমন ঘটনা ঘটছে মেট্রো কর্তৃপক্ষে নড়েচড়ে বসছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের একই চেনা ছবি”। আমাদের সঙ্গে অনেকটা গিনিপিগের মত ব্যবহার করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ”।

বউবাজারের দুর্গাপিতুরি লেনের পাশের গলি মদন দত্ত লেনের বেশ কয়েকটি বাড়িতে বড় বড় ফাটল দেখতে পাওয়া যায় আজ ভোররাতেই। তারই জেরে চূড়ান্ত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। বাড়ি-ঘর ছেড়ে প্রাণভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন বাসিন্দারা। খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছোয় পুলিশ ও স্থানীয় কাউন্সিলর। ঘটনাস্থলে যান মেট্রোর আধিকারিকরাও। বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিম, বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। এর কিছুক্ষণ আগেই এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কথা বলেন মেট্রো রেলের পদস্থ কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে। ঘুরে দেখেন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলিও। কথাও বলেন স্থানীয়দের সঙ্গে। গোটা এলাকা কার্যত নিজেদের দখলে রেখেছে কলকাতা পুলিশ।

কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক অনুমান, গ্রাউটিং- এর কাজ চলার সময় সুড়ঙ্গে জল ঢুকে বিপত্তি ঘটেছে। ভোর চারটের পর সুড়ঙ্গে জল ঢুকতে শুরু করে। তার জেরেই ঘটে বিপত্তি। ইস্ট ওয়েন্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ নির্মাণে বিপত্তির জেরে, বহু মানুষগুলোর জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। একটার পর একটা বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। ব্যাগ গুছিয়ে ফের হোটেলমুখী অসহায় মানুষজন।

ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছেন মেট্রো রেলের একাধিক প্রতিনিধি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখানোয় তারা এলাকায় ঢুকতে পারেননি বলেই জানা গিয়েছে।পুলিশ গিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলেন বাসিন্দাদের, তা নিয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা। বাড়ি ছেড়ে জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে দেখা যায় অনেককে।

ইতিমধ্যেই সবক’টি বাড়ি খালি করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় বসেই মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। পরে তাদের বুঝিয়ে স্থানীয় দুটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মেট্রো রেল সূত্রে খবর, সুড়ঙ্গে কোনওভাবে জল ঢুকে গিয়েই বিপত্তি হতে পারে। তবে বাড়িতে নতুন করে এই ফাটল তৈরির হওয়ার পিছনে প্রকৃত কারণের খোঁজে মেট্রোর বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মেট্রোর কর্তারা।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Cracks in gold showroom in bowbazer owner demands damage charge