মকর সংক্রান্তির দিন কুমিরের পুজো! হ্যাঁ। ঠিকই শুনেছেন। ব্যান্ডেলের পালবাড়িতে প্রতিবছরের মতো এবারও নিষ্ঠাভরে বাড়ির ছাদের ওপর শামিয়ানা খাটিয়ে কুমির পুজো করা হল। এবার অবশ্য নতুন নয়। প্রতিবছর মকর সংক্রান্তিতেই পাল বাড়িতে এমনটাই হয়। একটা সময় তো জ্যান্ত কুমিরের পূজা করল এই পরিবার। এখন অবশ্য দিনকাল বদলেছে। মাটি দিয়ে কুমিরের প্রতিকৃতি বানিয়ে তাকেই পূজা করা হল।
Advertisment
ব্যান্ডেলের গোপীনাথপুরের বাসিন্দা এই পাল পরিবার। কেন এমন অদ্ভুত এই পুজোপাঠ? বাড়ির কর্তা পানু পালের মা ছবিরানি পাল জানালেন, কুমির আসলে বাস্তুদেবীর বাহন। সেই কারণেই এমন রীতি পালন। ছবিরানি পালের কথায়, 'প্রায় ৭০ বছর আগে আমার যখন বিয়ে হয়, তখন থেকেই দেখছি শ্বশুরবাড়িতে মকর সংক্রান্তির পুণ্য তিথিতে এই পুজো হত। বাংলাদেশের বরিশাল জেলার ঝালকাঠিতে আমার বিয়ে হয়। আমার শ্বশুর ,স্বামী সবাই এই পুজো করতেন। এদেশে আসার পর আমার স্বামী প্রয়াত সুধীররঞ্জন পাল এইখানে পুজো শুরু করেছিলেন। তারপর থেকে আমার তিন ছেলে মিলে এই পুজো চালিয়ে যাচ্ছে।'
তা-ও দেখতে দেখতে প্রায় ৪০ বছর হয়ে গেল। ব্যান্ডেলের পাল বাড়িতে প্রতি মকর সংক্রান্তিই সাক্ষী থাকে কুমিরের পুজোর। রবিবার যেমন বাড়ির ছাদে বসেছিল পুজোর ঘটা। রীতিমতো পুরোহিত ডেকে, জোগার দিয়ে করা হল কুমির পুজো। উদ্যোক্তা পানু পাল বলেন, 'প্রতিবারের মতো এবারও আমরা দুপুরে প্রতিবেশী শিশুদের অন্নসেবা দিয়েছি। এবারেও ২০০ জনের জন্য অন্নসেবার আয়োজন করা হয়েছিল। মেনু ছিল ফ্রায়েড রাইস, কাশ্মীরি আলুর দম, চাটনি, মিষ্টি, পাঁপড়। সবাই বেশ তৃপ্তি করে সেবা গ্রহণ করেছেন।'
দিন বদলায়। কিন্তু, রীতি বদলায় না। কারণ, পাল পরিবারের বিশ্বাস এই সব রীতির সঙ্গেই জুড়ে আছে পরিবারের ভালো-মন্দ, সুখের মত নানা দিক। তাই আগামী মকর সংক্রান্তিতেও এখানে পুজো পাবেন মাটির কুমির। এককথায় বললে, আসছে বছর আবার হবে!