Advertisment

আগুনে পুড়ছে জমি, শঙ্কিত বাংলার কৃষিবিজ্ঞানীরা

কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, বিরাট এক বিপদের মধ্যে পড়তে চলেছেন কৃষকরা। আগামীতে চাষ যেমন বিপন্ন হবে, তেমনি ফলনের অভাবে বিরাট সংকট তৈরী হবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সন্ধ্যে হলেই আগুন জ্বলছে সদ্য ধান কাটা ক্ষেতে। শীতের বিকেলে উত্তাপের ওম নেওয়া শুধু নয়, ধানের খড় বিচালি জমিতেই পুড়িয়ে ফেলার এক মজার খেলা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ বঙ্গের সব জেলাতেই কম বেশী এক ছবি, যার হিড়িক দেখে আতঙ্কিত কৃষিবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, বিরাট এক বিপদের মধ্যে পড়তে চলেছেন কৃষকরা। আগামীতে চাষ যেমন বিপন্ন হবে, তেমনি ফলনের অভাবে বিরাট সংকট তৈরী হবে।

Advertisment

হঠাৎ করে কেন এ সমস্যা তৈরী হলো জানতে হলে চাষের করুণ অবস্থাও জানতে হবে। ফি বছর দফায় দফায় বাড়ছে বীজ থেকে সমস্ত রকমের সার, সেচের জল, ও আনুষঙ্গিক সমস্ত খরচ, নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ফসল ফলানোর পরে ফসল ঘরে তোলারও বিরাট খরচ। দিনমজুরের অভাব কোথাও, কোথাও বা বিঘে প্রতি ধান কাটায় দেড় হাজার টাকার কাছাকাছি মজুরি।

publive-image বদলে যাচ্ছে জমির চেহারা ও চরিত্র

এ অবস্থায় বাজারে রয়েছে কম্বাইনড হার্ভেস্টিং মেশিন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্রুত ধান কেটে জমিতেই মজুত করে দেয়, তবে খড় বিচালি অবিন্যস্ত অবস্থায় জমিতেই পড়ে থাকে। মাত্র ৮০০ টাকা প্রতি বিঘে খরচে এভাবে ফসল ঘরে তুলতে কৃষকরা মেশিনের দিকেই ঝুঁকছেন, কিন্তু খড় বিচালি আগের মতন আঁটি করে ঘরে না তুলতে পেরে জমিতে যা পড়ে থাকছে তাতেই আগুন ধরাচ্ছেন। উত্তর ভারতে জিও প্ল্যান্ট নামে এক প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষকরা যখন লাভের মুখ দেখছেন, তখন ভুল অবৈজ্ঞানিক পথে চাষ করে আরও বিপর্যয়ের পথে যাচ্ছেন বাংলার কৃষকরা।

কৃষিবিজ্ঞানী তথা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলছেন, "ক্ষতিটা যে কত বড় হচ্ছে, কৃষকরা এখনই বুঝতে পারছেন না। খড় পোড়ানোর পরে পটাসিয়ামের মতন ধাতব বস্তু অক্ষত থাকলেও বাকি সমস্ত জরুরী রাসায়নিক পদার্থ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাটি পুড়ে ইঁটের মতন হচ্ছে। ঐ জমিতে যে সম্পদ উর্বরতার কেন্দ্র গড়েছিলেন কৃষকরা, তা নিমেষে নষ্ট হচ্ছে। পরে জমিতে স্বাভাবিকভাবে চাষ করা কঠিন হবে।"

আরও পড়ুন: বৈকুণ্ঠপুরের বনদুর্গার পূজায় দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠকের ছায়া

জমিতে আগুন ধরানোর পর কেঁচো থেকে শুরু করে অনেক পোকামাকড়, চাষে যাদের বিরাট ভূমিকা থাকে, তারা যেমন শেষ হয়ে যাচ্ছে, তেমন মাটির গভীরে প্রায় ছ'ফুট আন্দাজ আয়তন জুড়ে সমস্ত শেকড়, ডাল ইত্যাদি পুড়ে মাটির চরিত্র বদলে ফেলছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, কেঁচো একটি আপাত নগণ্য কীট হলেও চাষের কাজে বিরাট ভূমিকা পালন করে।

তবে বিকল্প কী? কৃষিবিজ্ঞানীদের পরামর্শ, সরকার হস্তক্ষেপ করুক, পঞ্চায়েত প্রচারে নামুক। চাষ জমিতে আগুন ধরানো বেআইনী ঘোষিত হোক।

বীরভূমের নানুরের মডডা গ্রামের কৃষক আহমেদ আলী বলছেন, গত বছর তিনিও জমিতে পড়ে থাকা খড় বিচালিতে আগুন ধরিয়েছিলেন, ভেবেছিলেন যে ছাইটা পড়ে থাকবে সেটাই বিরাট উপকারী সার হবে জমির  কিন্তু এমন অবস্থা তাঁর জমির, যে হাল দেওয়ার পর মাটির রঙ দেখে তিনি ভয় পেয়ে গেছেন। সব পুড়ে গেছে দেখে উল্টে কয়েক হাজার টাকার কেঁচো সার এনে জমিতে ছড়িয়ে কিছুটা ক্ষতি আটকেছেন, কিন্তু এখনও জমিতে সেই জোর ফেরেনি।

জেলা কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক বলছেন, প্রবনতাটা "ভয়াবহ"। জলস্তরের ওপরেও এর প্রভাব পড়তে পারে, সাথে স্বাভাবিক জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকছেই। তাঁরাও বিষয়টি তাঁদের ওপরতলায় জানাচ্ছেন, "জমির আগুন যাতে আর না ছড়িয়ে পড়ে"।

Birbhum
Advertisment