কুকীর্তির অডিও-ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তৃণমূলের সর্ব্বোচ্চ নেতৃত্ব রেয়াত করেনি শিশির মণ্ডলকে। পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাট পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে দল তাঁকে অপসারিত করে। এর পরেও নেভেনি শিশির
মণ্ডলের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভের আগুন। এবার আরও বিপাকে সদ্য দাঁইহাট পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হওয়া শিশির মণ্ডল। তাঁকে শিক্ষকতা থেকেও অপসারিত কারার দাবিতে বুধবার উত্তাল হল কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় চত্ত্বর। 'চরিত্রহীন শিশির মণ্ডলকে স্কুলে শিক্ষকতা করতে দেওয়া যাবে না'- এই স্লোগান তুলে এ দিন বর্তমান এবং প্রাক্তন পড়ুয়া, অভিভাবকরা স্কুলে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা ডেপুটেশনও জমা দেন। এই ঘটনা জেলার রাজনীতিতেও শোরগোল ফেলে দিয়েছে। বিরোধী নেতৃত্বের বক্তব্য, কুকীর্তিতে জড়ানো শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের পড়ুয়া ও অভিভাবকরা গর্জে উঠবেন এটাই স্বাভাবিক।
শিশির মণ্ডল শুধু যে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত দাঁইহাট পুরসভার চেয়ারম্যানই ছিলেন না, তিন কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতাও করছেন। বাংলার শিক্ষক তিন। এহেন এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, চাকরির জন্য আবেদন করা অসহায় তরুণীকে সহবাসের প্রস্তাব দেওয়ার। এই সংক্রান্ত অডিও ও ভিডিও কথোপকথন গত ১ নভেম্বর সোশাল মিডিযায় ভাইরাল হয়।
কথোপকথনে পুরুষ কন্ঠের ব্যক্তি দাঁইহাট পুরসভার চেয়ারম্যান বলে দাবি করা হয় । যদি ভাইরাল হওয়া ওই অভিও- ভিডিওর সত্যতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা যাচাই করেনি। তবে ওই অভিও ভিডিওর কথোপকথন
থেকে সবাই জানতে পারেন, চাকরিপ্রার্থী তরুণীর বয়স শিক্ষক শিশির মণ্ডলের মেয়ের মতো। ২০২০ সালে স্নাতক হওয়া ওই তরুণী শিশির মণ্ডলকে কাকু সন্মোধন করে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আবেদন জানন। উল্টে ওই তরণীকে টাকার প্রলোভন ও সহবাসের প্রস্তাব দেওর অভিযোগ ওঠে শিশির মণ্ডলের বিরুদ্ধে।
যদিও শিশির বাবু ওই অডিও এবং ভিডিও কথোপকথন তাঁর নয় বলে দাবি করলেও বিরোধীদের পাশাপাশি নানা মহল নিন্দায় সরব হন। এরপরেই নড়েচড়ে বসে তৃণমুলের শীর্ষ নেতৃত্ব।স্ব য়ং তৃণমূল কংগ্রেসের
সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যেপাধ্যায়ের নির্দেশে শিশির মণ্ডলকে দাঁইইহাট পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হতে হয় ।
শিক্ষকতার মত মহান পেশায় থাকা শিশির মণ্ডলের এমন কুকীর্তি মনে নিতে পারেননি অগ্রদ্বীপ ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান, প্রাক্তন পড়ুয়া এবং অভিভাবকরা। তাই স্কুলের শিক্ষক পদ থেকেও শিশির মণ্ডলকে অপসারণের দাবিতে এদিন তাঁরা পোস্টার হাত বিদ্যালয়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। পোস্টার লেখা ছিল, 'শরীরের বিনিময়ে কাজ নয়, চাই ছাত্রী সুরক্ষা', 'ছাত্রীদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে', 'চরিত্রহীন তাড়াতে সমস্ত মানুষ এক হন।' একই দাবিতে বিক্ষোভকারীরা ডেপুটেশনও জমা দেন । বিক্ষোভের জেরে স্কুলে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে কাটোয়া থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অগ্রদ্বীপ ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পল্লব মণ্ডল জানিয়েছেন, অবিভাবকদের দাবিপত্রটি তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে তিনি স্কুল পরিচালন কমিটিতেও আলোচনা করবেন। এতকিছুর পরেও আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, উচ্চ কর্তৃপক্ষ শিশির মণ্ডলকে স্কুল থেকে অপসারিত না করলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবেন।
জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'পড়ুয়া ও অভিভাবকরা সঠিক দাবিতেই আন্দোলনে নেমেছেন। মেয়ের বয়সী তরুণীকে সহবাসের প্রস্তাব দেন, এমন ব্যক্তিকে কেউই স্কুলের
শিক্ষক হিসাবে মেনে নেবেন না।'