Kali Puja 2023: পাঁচশো থেকে সাড়ে পাঁচশো বছরের প্রাচীন এই কালী পুজো। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে বেশ রোমহর্ষক এক ইতিহাস। গায়ের রোম খাঁড়া করে দেওয়ার মতো সেই সব কাহিনী আজও ভীষণ চর্চায়। ফি বার কালীপুজো এলেই প্রাচীন এই মন্দিরটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এবারও তার অন্যথা হয়নি। সিঙ্গুরের ডাকাতকালী মন্দির ঘিরে রয়েছে এমনই নানা ইতিহাস।
হুগলির বৈদ্যবাটী-তারকেশ্বর রোডের পাশে পুরুষোত্তমপুর এলাকায় রয়েছে এই ডাকাতকালী মন্দির।
হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার সিঙ্গুর স্টেশনে নেমে হেঁটে অথবা টোটোয় চেপে মন্দিরে আসা যায়। প্রতিদিন হয় পুজো।
ডাকাতকালী মন্দির উন্নয়ন কমিটির সদস্য মদনমোহন কোলে জানান, কথিত আছে ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব দক্ষিণেশ্বরে থাকাকালীন একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। খবর পেয়ে সারদা মা কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর রওনা দেন পালকিতে। সেই সময় সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুর ছিল নির্জন বনাঞ্চল। এলাকাটি ছিল ডাকাতির জন্য কুখ্যাত। দক্ষিণেশ্বর যেতে গেলে ওই পথ দিয়েই যেতে হতো। আর অচেনা কোনও আগন্তুক সেখান দিয়ে গেলেই রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাতের খপ্পরে পড়তো। মা যখন ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই যাওয়ার পথে রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত মায়ের পথ আটকে দাঁড়ায়। ডাকাতির উদ্দেশ্যে মায়ের সারদা মায়ের পালকি তারা আটকালেও শেষমেশ আর ডাকাতি করা হয়নি।
সারদা মা কে স্পর্শ করার আগেই তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে যায় ডাকাত দল। কথিত রয়েছে, ওই ডাকাতদল নাকি মা সারদার পিছনে স্বয়ং মা কালীকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাঁদের তাকিয়ে থাকতে দেখে। এরপরেই মা সারদার কাছে ক্ষমা চায় ডাকাতদল। সন্ধে নামায় সেই রাতে ডাকাতদের আস্তানাতেই মা সারদাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। মা সারদাকে রাতে খেতে দেওয়া হয় চাল ও কড়াই ভাজা। শুধু তাই নয়, পরের দিন সকালে ওই ডাকাতদলই সারদা মাকে দক্ষিণেশ্বর মন্দির অবধি ছেড়েও আসে। এরপর সারদা মায়ের কথা মতো ডাকাতি ছেড়ে দেয় তারা।
আরও পড়ুন- সতীর বাম পায়ের গোড়ালি পড়েছিল এখানে! উগ্রতারা রূপে পূজিত হন মা বর্গভীমা
পরবর্তী সময়ে বর্ধমানের রাজার দান করা জমিতে তৈরি হয় ডাকাতকালী মন্দির। অতীতের রেওয়াজ মেনেই আজও কালীপুজোর দিনে মায়ের নৈবেদ্যয় চাল-কড়াই ভাজা দেওয়া হয়। কালীপুজোর দিন চার প্রহরে চারবার পুজো ও ছাগ বলি হয়। মায়ের ভোগে থাকে লুচি, পায়েস, ফল, খিচুড়ি, বিভিন্ন পদের ভাজা ও পোলাও।
কালীপুজোর দিন গঙ্গা থেকে গ্রামের তফসিলি ভুক্ত পরিবারের আনা জল দিয়ে মায়ের ঘটের জল পাল্টানো হয়। বছরের এই একদিন ঘটের জল পাল্টানো হয় মন্দিরের দরজা বন্ধ করে। কালীপুজোর পরের দিন খ্যানের পুজোর পর মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। পুরুষোত্তমপুর গ্রামে এই ডাকাতকালী মন্দির থাকার কারণে আশেপাশের জামিনবেড়িয়া, মল্লিকপুর প্রভৃতি গ্রামগুলিতে কোনও বাড়িতে কালীপুজো হয় না। এমনকী আশেপাশের গ্রামগুলির কোনও বাড়িতেই মা কালীর ছবি দেওয়া কোনও ক্যালেন্ডারও থাকে না বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।