অবশেষে জটিলতা কাটিয়ে এক মাস কুড়ি দিন পর গতকাল খুলে গেল ইসলামপুরের দাড়িভিট হাইস্কুল। যদিও এদিন স্কুল খোলার সময় ফের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সেপ্টেম্বর মাসে স্কুলে গুলির আঘাতে নিহত দুই যুবকের পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের দাবি না মানলে স্কুলের চাবি দেবেন না বলে বেঁকে বসেন। এর আগে তাঁরা জানিয়েছিলেন, শনিবার স্কুলের গেটের তালার চাবি দিয়ে দেবেন। শেষমেশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গেটের তালা খুলে স্কুল চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
দুই নিহতের পরিবার চাইছেন, প্রতিবছর ২০ সেপ্টেম্বর দাড়িভিট উচ্চ বিদ্যালয় ভাষা দিবস হিসেবে পালন করুক। পাশাপাশি "ভাষা শহিদ" রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণের বেদি তৈরি করে বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হোক। তাপসের বাবা বাদল বর্মণ ও রাজেশের বাবা নীলকমল সরকারের সঙ্গে গ্রামবাসীরাও একই দাবি জানিয়েছেন।
ইসলামপুরের মহকুমা শাসক মণীশ মিশ্রকে ঘিরে রয়েছেন গ্রামবাসীরা
২০ সেপ্টেম্বর এই স্কুলে উর্দু ও সংস্কৃত, দুই ভাষার দুই শিক্ষকের নিয়োগকে কেন্দ্র করে গন্ডগোলের সূত্রপাত। ওই দিন বিক্ষোভ চরমে পৌঁছয়। যার ফলে রহস্যজনকভাবে গুলিতে প্রাণ হারান ওই দুই যুবক। কার গুলিতে তাঁদের মৃত্যু হয়, সেই বিতর্কের এখনও সমাধান হয়নি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন দাড়িভিটের বাসিন্দারা। বিজেপি রাজ্যে ধর্মঘটেরও ডাক দেয়। দুর্গাপুজো পেরিয়ে গেলেও স্কুল খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। এর আগে একাধিকবার সভা হলেও স্কুল খোলা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি প্রশাসন।
অবশেষে ৮ নভেম্বর দুই নিহতের পরিবার ও গ্রামবাসীরা সিদ্ধান্ত নেন, শনিবার স্কুলের তালা খুলে দেওয়া হবে। সেইমত এদিন ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎই গ্রামবাসী ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা গেটের তালা খুলতে অস্বীকার করেন। এমনকী কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে স্কুল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
এদিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দাড়িভিটে দোলনচা নদীর ওপর সেতু গড়ার আশ্বাস দেন গ্রামবাসীদের
চাবি দিতে বেঁকে বসায় আলোচনা শুরু হয় প্রশাসনিক স্তরে। ঘটনাস্থলে যান ইসলামপুরের এসডিও মণীশ মিশ্র। গ্রামবাসীরা আলোচনা করে দাবিপত্র পেশ করেন প্রশাসনের কাছে। গ্রামবাসীদের দাবি, ২০ সেপ্টেম্বরের ঘটনার সিবিআই তদন্ত, গ্রেপ্তার হওয়া আটজন গ্রামবাসীর নিঃশর্তে মুক্তি, এবং স্কুলের প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা। প্রশাসন গ্রামবাসীদের দাবিপত্র গ্রহণ করলে তাঁরা স্কুলের চাবি দিতে সম্মত হন। যেনতেন প্রকারে স্কুল খুলতে তৎপর ছিল প্রশাসন। এদিকে এদিন বিকেলে দাড়িভিট গ্রামে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি দোলনচা নদী পরিদর্শন করেন। গ্রামবাসীদের আশ্বাস দেন সেতু নির্মাণের।