চিকিৎসায় গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ তুলে উত্তেজনা ছড়াল দার্জিলিং সদর হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মৃতার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। গোটা ঘটনায় দার্জিলিং সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, রবিবার রাতভর দার্জিলিং থানা ঘেরাও করে রাখেন স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা। গোটা ঘটনায় প্রশাসনিক মহলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে, কারণ সোমবারই পাহাড়ে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি রিপোর্ট চাইতে পারেন, তাই বিষয়টিতে নজর রেখেছে জেলা প্রশাসন।
১৬ জানুয়ারি প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে দার্জিলিংয়ের মঙ্গলপুরির বাসিন্দা দীপিকা থামি (২৬) হাসপাতালে ভরতি হন। অভিযোগ,এতদিন হাসপাতালে থাকলেও তার চিকিৎসা হয়নি। শনিবার রাতে ফের তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নার্স ও চিকিৎসকদের ডাকাডাকি করা হয়। কিন্তু অভিযোগ ঘন্টাখানেক ধরে ডাকাডাকি করা হলেও কাউকেই পাওয়া যায়নি একঘন্টা বাদে নার্সেরা তড়িঘড়ি তাঁকে লেবার রুমে নিয়ে যায়। সেখানেই প্রসবের সময় মৃত্যু হয় ওই গৃহবধূর। বাঁচনো যায়নি গর্ভের শিশুকেও।
আরও পড়ুন: বৈকুণ্ঠপুরের বনদুর্গার পূজায় দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠকের ছায়া
মৃত্যুর পরেই হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তার পরিজনেরা। কিছুক্ষনের মধ্যেই রণক্ষেত্র চেহারা নেয় গোটা হাসপাতাল চত্বর। ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় হাসপাতালে। তড়িঘড়ি পুলিশে ফোন করেন সুপার। এরই মাঝে প্রসূতি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পি উডেনের উপর হামলা চালায় প্রসূতির আত্মীয়রা। মাথা ফেটে গিয়ে ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন চিকিৎসক। ততক্ষণে বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন দার্জিলিং থানার আইসি। তড়িঘড়ি চিকিৎসককে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। সেখানে তাঁর চিকিৎসা করা হয়। পুলিশ ওই সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু রাতে গ্রামে খবর যেতেই ফের হাসপাতাল ঘেরাও করা হয়। অভিযুক্ত চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয়।
ঘটনার পর দুই পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানা গিয়েছে। গোটা ঘটনার নিন্দা করেছে প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। বিষয়টি নিয়ে তারা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবে বলে জানিয়েছে। দার্জিলিং সদর হাসপাতালের সুপার সৈকত প্রধান বলেন, "চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ সঠিক নয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই ওঁর শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। কাল অবস্থা আরও খারাপ হয়। এরপরেই মৃত্যু হয়। ওঁরা এসে হাসপাতাল ভাঙচুর করেন, চিকিৎসকদের মারধর করেন।" যদিও বিষয়টি নিয়ে রোগীর পরিজনদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।