তিন দশক ধরে পাহাড়ের পুরাতাত্বিক নিদর্শন খুঁজে চলেছেন তিনি। ঠান্ডা উপভোগ করার সঙ্গে পর্যটকরা যাতে পাহাড়ের ঐতিহ্যমণ্ডিত ভবনগুলোও দর্শন করেন, সেই চেষ্টাই তিনি করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে দিশা দিচ্ছেন পাহাড়ের পুরাতাত্বিক নিদর্শনগুলি রক্ষণাবেক্ষণের। অধিক ঠান্ডা অথবা ঘোর অশান্তি যাই হোক, পাহাড়কে আপন করে নিয়েছেন দার্জিলিং জাদুঘরের সিনিয়র কিউরেটর চন্দ্রনাথ দাস।
দার্জিলিংঃ ডাউন দ্য়া এজেস (Darjeeling: Down the Ages) গ্রন্থে দার্জিলিংয়ের ইতিকথার সঙ্গে পাহাড়ের ঐতিহাসিক ভবনগুলির পুরাকথা তুলে ধরেছেন চন্দ্রনাথবাবু। পাহাড়ে কোথায় কী পুরাতাত্বিক নিদর্শন রয়েছে তা খুঁজে বের করে এই বইতে স্থান দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই বইয়ের প্রচ্ছদের ছবিও তিনি এঁকেছেন। এমনকী যেসব ভবনের বর্ণনা রয়েছে সেগুলোর ছবিও স্কেচ করেছেন স্বয়ং লেখক। কীভাবে ১৮৩৯ সাল থেকে সিকিমের দিক থেকে দার্জিলিংয়ে মানুষজন ভিড় জমিয়েছেন, শহর গোড়াপত্তনের ইতিহাসও উল্লিখিত হয়েছে এই বইতে।
সিনিয়র কিউরেটর পদে চন্দ্রনাথ দাস যখন প্রথম দার্জিলিং-এ কাজে যোগ দেন সেদিন থেকেই তিনি ঐতিহ্যের সন্ধানে নেমে পড়েন। চন্দ্রনাথবাবুর কথায়, "বহু মনীষী এখানে এসে থেকেছেন। অনেকেরই বাসভবন রয়েছে দার্জিলিংয়ে। স্বামী বিবেকানন্দ চকবাজারের যে বাড়িতে থাকতেন, তা এখন নার্সিংহোম। সেই সংক্রান্ত গোড়ার কথা খুঁজছি। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কার্শিয়াংয়ে একটি বাড়িতে থাকতেন। সেই ইতিহাস ঘেঁটে দেখছি। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই এমন নানা ঐতিহাসিক ভবন খুঁজতে থাকি। আমার প্রকাশিত বইতে বেশ কিছু হেরিটেজ ভবনের কথা লিখেছি।"
গভর্ণর হাউস, সেন্ট অ্যান্ড্রিউ চার্চ, ঘুম বুদ্ধিষ্ট ওল্ড মনাস্ট্রি, আঞ্জুমান মসজিদ, টাউনহল, সেন্ট জোসেফ স্কুল, এসবের সূত্রপাত হয়েছিল ১৮৪০ থেকে ১৮৭৭ সালের মধ্যে। এছাড়াও মনীষীদের ভবনের উল্লেখ রয়েছে চন্দ্রনাথবাবুর গ্রন্থে। ঐতিহাসিক ভবনের মধ্যে উল্লেখ আছে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাড়ি, বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর বাসভবন, রবীন্দ্র ভবন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের বাড়ির। এই বাড়িতেই মত্যু হয় চিত্তরঞ্জন দাসের। এমন বুহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনের উল্লেখ আছে চন্দ্রনাথ দাসের বইতে। কালানুক্রমে এসব ঐতিহ্যশালী ভবনের অবলুপ্তি রোধ করতে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের হদিশও দিচ্ছেন চন্দ্রনাথ দাস।
চন্দ্রনাথবাবু বলেন, "দার্জিলিংয়ে বহুবার অশান্তি, গন্ডগোল হয়েছে। পাহাড়ে আগুন জ্বলেছে, গুলি চলেছে। দিনের পর দিন ধর্মঘট চলেছে। আমি কিন্তু কখনও ভাবিনি দার্জিলিং ছেড়ে চলে যাব। আঁকড়ে থাকি এই পাহাড়। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ পুরাতাত্বিক নিদর্শন সন্ধান করা আমার অন্যতম উদ্দেশ্য। এখনও খুঁজে চলেছি। কিছু ভবনের খোঁজ মিলেছে, কিন্তু তার প্রামাণ্য দলিল-দস্তাবেজ পাওয়া যাচ্ছে না।"