যাদবপুরে ছাত্রের মৃত্যু তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও পুলিশের আতসকাচে। আজ, বুধবার বিকেল পাঁচটায় লালবাজারে তলব করা হয়েছে যাদবপুরের ডিন অফ অফ স্টুডেন্টস রজত রায় ও রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু'কে।
ইউজিসি-র নির্দেশিকায় উল্লেখ থাকলেও কেন বিশ্ববিদ্যালয় হস্টেল এবং ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা নেই? মেন হস্টেলে প্রাক্তনীরা ঘর দখল করে রাখে? ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা? তা জানতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই শীর্ষ কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।
এর আগে ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়-কে দু'বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য অমিতাভ দত্ত-কেও।
আরও পড়ুন- যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যু, রাতভর জেরার পর গ্রেফতার আরও ৬
যাদবপুরে পড়ুয়া মৃত্য়ুর দায় কার? এই প্রশ্নেই তোলপাড় রাজ্য। তার মধ্য়েই র্যাগিং রুখতে রাজ্য সরকার সার্কুলার জারি করেছে। ২০০৭ সালে রাঘবন কমিটির সুপারিশ, ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবংইউজিসি-র একগুচ্ছ গাইডলাইন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং-রোগ সারাতে প্রায় দেড় দশক আগেই তৈরি হয়েছিল ওষুধ। কিন্তু, দেশের অন্য়তম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুরে যে সেই ওষুধ প্রয়োগই হয়নি, তা কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে পড়ুয়া মৃত্য়ুর মর্মান্তিক ঘটনা।
আরও পড়ুন- যাদবপুরে ব়্যাগিংয়ে পড়ুয়া মৃত্যু, আজই বড় সিদ্ধান্ত আচার্য সিভি আনন্দ বোসের?
ছাত্র মৃত্যুর পর অভিযোগ ছিল যে, গত বুধবারে হস্টেলের ঘটনা নিয়ে রাতেই ডিন অফ অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে ফোন করা হয়েছিল। তবে ওই ফোন তিনি রিসিভ করেননি। এরপর রজতবাবু বলেছিলেন যে, 'আমার কাছে ওইদিন রাত ১০টা বেজে ৫ মিনিট নাগাদ একটা ফোন এসেছিল। এক পড়ুয়া জানায় যে, একজন ছাত্রকে হস্টেলে থাকতে নিষেধ করা হচ্ছে। আমি তখন হস্টেল সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছিলাম। উনি ক্যাম্পাসেই থাকেন। আমিও সুপারকে ফোন করেছিলাম। যে পড়ুয়া আমাকে ফোন করেছিল তারও নাম বলেছিলাম। সুপারকে পুরো ঘটনার রিপোর্টও আমাকে দিতে বলেছিলাম। এরপর প্রায় ঘন্টা দু'য়েক পরে আমায় সুপার ফোন করে এক ছাত্রের পড়ে যাওয়া ও রক্তপাতের খবর দেন। আমি তখন গাড়ি করে চলে আসি। সেই সময় ফোন ধরতে পারিনি। তারপর থেকে হাসপাতালেই সেখানেই ছিলাম।' কেন বিষয়টির নজরদারিতে প্রায় দু'ঘন্টা লেগে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
মর্মান্তিক এই ঘটনার পর ইউজিসি-র তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুকে। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। পরে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তিনি। কেন তাঁকে ফোনে পাওয়া গেল না? জবাবে রেজিস্ট্রার দাবি করেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটিতে ছিলেন। উল্টে অনিয়মের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যহীনতাকেই দায়ী করেছিলেন তিনি।
দীর্ঘদিনের অনিয়মের বিষয়গুলি কেন কর্তৃপক্ষ জানতে পারেননি, বা রুখতে কোনও পদক্ষেপ করেননি তা নিয়েই নানা প্রশ্ন। ফলে বুধবার বিকেল পাঁচটায় লালবাজারে তলব করা হয়েছে যাদবপুরের ডিন অফ অফ স্টুডেন্টস রজত রায় ও রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু'কে।