Death of pregnant elephant by burning spear: স্বাধীনতা দিবসে, পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম শহর থেকে একটি হাতির পাল তাড়ানোর চেষ্টা করার সময় একটি জ্বলন্ত লোহার বর্শা নিক্ষেপ করার পরে একটি গর্ভবতী হাতি মারা গিয়েছে। দুটি বাছুর-সহ তিনটি হাতি পরিত্যক্ত সরকারি জমিতে আশ্রয় নিয়েছিল। শীঘ্রই, অনেক লোকের ভিড় করে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন। রাজ্যের বন বিভাগ 'হুলা পার্টি'-কে ডাকে। তারই মধ্যে, গ্রামবাসীদের একটি দল তিক্ষ্ণ ছোট বর্শা ব্যবহার করে পশুটিকে তাড়ানোর চেষ্টা চালায়। গত ১৫ আগস্ট গর্ভবতী ওই হাতির মৃত্যুর বিরুদ্ধে রাজ্যের বন দফতর পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে।
পাশাপাশি, বনদফতর গোটা ঘটনায় 'কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার' প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বনদফতর বলেছে যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রামে রাজ কলেজের কাছে এই ঘটনায় হুলা দলের সদস্যরা বা স্থানীয় লোকেরা বর্শা নিক্ষেপ করেছে কি না তা 'অস্পষ্ট'। যখন বর্শাটি দিয়ে হাতিটিকে আঘাত করা হয়েছিল, তখন সেই বর্শা হাতিটির পিঠে আটকে যায়। যার ফলে সেটি যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে এবং পড়ে যায়। বন দফতরের আধিকারিকরা এরপর হাতিটিকে নিয়ে যান। পরে সেটি মারা যায়। ময়নাতদন্ত পরীক্ষায় জানা যায় যে হাতিটি গর্ভবতী ছিল।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময়, পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেছেন, 'এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। আমরা হাতিকে আমাদের পরিবারের অংশ হিসাবে বিবেচনা করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই দুঃখিত। যারা এ কাজ করেছে, তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।' হাঁসদা বলেছেন যে তিনি ইতিমধ্যে এই ঘটনার বিষয়ে বনকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। হাঁসদা বলেছেন, 'যখনই কোনও শহুরে বা আধা-শহুরে এলাকা থেকে হাতি সরানোর অভিযান হয়, হাজার হাজার স্থানীয় মানুষ জড় হয়ে যান। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই ধরনের যে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বিশেষ করে তাঁদের বিরুদ্ধে যাঁরা এমন অভিযানের সময় ঘটনাস্থলের ৫০০ মিটারের মধ্যে ঢুকে পড়ছেন।'
কুর্মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতো, ঝাড়গ্রাম থেকে ফোনে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে রাজ্যের বনবিভাগ এই হাতি মৃত্যুর জন্য 'দায়ী। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। হুলা দল অপ্রশিক্ষিত যুবকদের নিয়ে তৈরি। এই হুলা দলকেই রাজ্যের বন বিভাগ হাতি তাড়ানোর জন্য নিযুক্ত করে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।' ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা, কুর্মি সমাজের সদস্যরা গোটা ঘটনায় বনবিভাগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ বনবিভাগের 'অব্যবস্থাপনা'-র জন্যই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। কুর্মি সমাজ তাদের সমাবেশে এই ঘটনায় বনমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। রাজেশ মাহাতো বলেন, 'যেসব বন্যপ্রাণীকে খাদ্যের সন্ধানে শহরাঞ্চল ও গ্রামে ঢুকতে বাধ্য করা হয়, তাদের জন্য রাজ্য সরকারের কোনও পরিকল্পনা নেই। মানুষ এবং হাতি উভয়ই মারা যাচ্ছে। বন্য প্রাণীরা কোথায় যাবে?'
আরও পড়ুন- আরজি কর কাণ্ডে শুরু থেকে সোচ্চার, শেষমেশ কোন মন্তব্যে ‘ভুল’ স্বীকার সুখেন্দুশেখর রায়ের?
ন্যাশনাল লিড ফর এলিফ্যান্ট কনজারভেশন, WWF-ইন্ডিয়ার অরিত্র ক্ষেত্রী, উল্লেখ করেছেন যে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণের জেলাগুলোতে মানুষ এবং হাতির সহাবস্থান উভয়েরই 'ক্ষতি' করে। তিনি বলেন, 'স্বল্পমেয়াদে, উত্তর পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের অন্যান্য অংশের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে, নিরাপদ প্রাণী পরিচালনা এবং প্রতিরোধ পদ্ধতি সম্পর্কে স্থানীয় হাতি খেদানোর দলগুলোকে সংবেদনশীল করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।' ক্ষেত্রী 'হাতি খেদানোর সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণ' এর ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে এই অঞ্চলে কার্যকর আবাসস্থল সমৃদ্ধকরণ করা দরকার। পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাতির প্রবেশ রোধ করার জন্য উপযুক্ত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থাও প্রয়োজন।'