অনুব্রত মণ্ডলের এ যাত্রায় দিল্লি যাওয়া আটকাতে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর বিরুদ্ধে শিবঠাকুর মণ্ডলের করা মামলা। মঙ্গলবার থেকেই নিজের জেলা দুবরাজপুর থানার কারাগারে বন্দি কেষ্ট। তৃণমূলের তরফে একদা গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান শিবঠাকুরকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। যদিও এসবকেই 'সাজানো ঘটনা' ও নাটক' বলে দাবি করেছে মামলাকারী শিবঠাকুরের কাকা দীপক মণ্ডল। গতকাল একই দাবি করেছিল রাজ্যের বিরোধী দলের নেতারাও।
শিবঠাকুরের দলবদলের ইচ্ছার খবর পেয়েই বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত তাঁকে তৃণমূল পার্টি অফিসে ডেকে দরজায় তালা দিয়ে গলা টিপে খুনের চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এমনকী সেই সময় অনুব্রতর নিরাপত্তা রক্ষী উপস্থিত থাকলেও তিনি নির্বিকার ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে দাবি করেছেন শিবঠাকুর মণ্ডল। তাঁর দাবি একুশে বিধানসভা ভোটের আগে এই ঘটনা ঘটেছিল। তাহলে কেন কেষ্টর গ্রেফতারির ৯৮ দিন পর থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ করলেন শিবঠাকুর? শিবঠাকুর ভয়ের কথা বললেও হঠাৎ কীভাবে ভয়মুক্ত হয়ে অভিযোগ দায়ের করলেন তা নিয়ে প্রস্ন উঠেছে।
এসব বিতর্কের মধ্যেই আগুনে ঘি ঢাললেন অনুব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর কাকা দীপক মণ্ডল। চাঁচাছোলা ভাষায় দীপকবাবুর বলেন, 'অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে শিবঠাকুরের আগাগোড়াই ভাল সম্পর্ক। ওদের কোনও বিরোধ নেই। অনুব্রতকে তিহাড় জেলে যাওয়া থেকে বাঁচাতেই শিবঠাকুর এসব করেছে। পুরটাই সাজানো ঘটনা, নাটক। আমার মনে হয় এই অভিযোগ করার জন্য ও (শিবঠাকুর মণ্ডল) প্রচুর টাকার নিয়েছে।'
এখানেই শেষ নয়। ভাইপো শিবঠাকুরের নামে পঞ্চায়েত প্রধান থাকাকালীন জুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন দীপক মণ্ডল। তাঁর দাবি, 'শিবঠাকুর একজন দুর্নীতিপরায়ণ মানুষ। প্রধান থাকতে ও বার্ধক্য ভাতা, সার্টিফিকেট বের করে দেওয়ার মতো বিষয়েও টাকা নিত। ১০০ দিনের কাজে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্কে টাকা ঢুলে সেখান থেকে পঞ্চাশ শতাংশ টাকা নিয়ে নিত।'
উ্লেখ্য, ২০১৩-য় তৃণমূল পরিচালিত বালিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন শিবঠাকুর মণ্ডল। আড়াই বছর পর, অনাস্থা এনে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক ৬ মাস পর, অনাস্থা এনে ফের প্রধান করা হয় শিবঠাকুরকে। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের আগে পর্যন্ত তৃণমূলের প্রধান ছিলেন তিনি।
এরপরই অনুব্রতর সঙ্গে শিবঠাকুরের ঝামেলা বাঁধে বলে দাবি তাঁর। ২০১৮-য় পঞ্চায়েতে টিকিট পাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়। দলের সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয়ে বলে অভিযোগ প্রাক্তন তৃণমূল প্রধানের। অভিযোগ, এরপর একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনার কথা শুনে অনুব্রত তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে মারধর করেন।