২০ জুন নয়, 'বাংলা দিবস' পালিত হোক ১লা বৈশাখ দিনটিতেই। এই মর্মেই বৃহস্পতিবার বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা। পাশাপাশি এই এই প্রস্তাব এনেছেন খাতায়কলমে বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীও। বিধায়ক সংখ্যার বিচারে স্পষ্ট যে এই প্রস্তাব পাস হয়ে যাবে বিধানসভায়। কিন্তু, তারপর? কী পরিণতি হতে চলেছে 'বাংলা দিবস' বিলের? শুরুতেই তা সাফ জানিয়ে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরে বিধানসভাকক্ষে বিতর্কসভাতেও একই কথা বলেছেন বিরোধী দলনেতা।
কী বলেছেন শুভেন্দু?
'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন তার কাটা মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রস্তাব কার্যকর হবে না। ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই পশ্চিমবঙ্গ তৈরির নেপথ্যে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদানকে মান্যতা না দেওয়ার জন্যই ১লা বৈশাখ বাংলা দিবস পালন করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রস্তাব বিধায়নসভা পাস হলেও রাজ্যপাল সই করবেন না। দিল্লিও ছাড়পত্র দেবে না। ফলে এর পরিণতি হবে রাজ্যের বাংলা নাম, বিধানপরিষদ গঠন, মুখ্যমন্ত্রী আচার্য হওয়ার মতো।'
পরে বিধানসভা কক্ষে শুভেন্দু বলেন, 'ইতিহাস বদলানো যাবে না। ২০জুনকেই বাংলা দিবস করার পক্ষে বিজেপি। আমরা একটু পরেই রাজভবনে যাচ্ছি, অনুরোধ করব যাতে উনি এই বিলে সই না করেন। প্রধানমন্ত্রীকেও আর্জি জানাবো যা ২০ জুনকেই বাংলা দিবস বলে পালন করা হয় এই দিনের ঐতিহ্যের কথা ভেবে।'
আরও পড়ুন- ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে বিজেপির ‘সুর’ মনে ধরেছে! নওশাদের প্রস্তাবে কীসের ইঙ্গিত?
'বাংলা দিবস' নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের পরিস্থিতি প্রকাশ্যে আসে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই ২০ জুন তারিখকে 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ওই দিনটি সমগ্র বাঙালি সমাজের কাছে দুঃখের দিন। ফলে রাজ্যের সম্প্রীতি ও শান্তির কথা ভেবে ১লা বৈশাখ দিনটি 'বাংলা দিবস' হিসাবে বেছে নেওয়া হোক। এ নিয়ে একটি কমিটিও তৈরি হয়। কমিটিও ১লা বৈশাখই রাজ্য দিবস পালনের পক্ষে সায় দিয়েছে।
এদিন শাসক দলের বিধায়ক, মন্ত্রীরা এদিন বিধানসভায় যে প্রস্তাব এনেছেন তাতেও বলা হয়েছে যে, ইংরাজ শাসক ১৯৪৭ সালের ৩ জুন ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। সে বছর ২০ জুন এবং ২৩ জুন যথাক্রমে বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগের যে ঘটনা ঘটেছিল তা 'দুঃখজনক পাদটীকামাত্র'। তাই ১ বৈশাখ দিনটিকে বাংলা দিবস বলে পালন করা হোক। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বাংলার মাটি বাংলার জল' গানটি রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে বিবেচিত হোক।
প্রতিবাদে মুখর বিজেপি। ২০ জুনই 'বাংলা দিবস' পালনের পক্ষে পদ্ম বাহিনী।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে 'বাংলা' করার জন্য বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। কিন্তু রাজ্যের নাম পরিবর্তন করতে গেলে সংসদেও তা পাশ করাতে হয়। কেন্দ্র নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই উদ্যোগ নেয়নি। মুখ্যমন্ত্রীই সব রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, এই বিল পাস হলেও তাতে সাক্ষর করেননি রাজ্যপাল। বিধানপরিষদ গঠনের ক্ষেত্রেও একই হয়েছিল। এবার তেমনই ঘটতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দিলেন শুভেন্দু অধিকারী।