আতঙ্কের ডেঙ্গু! এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৪ হাজার পার, কপালে ভাঁজ স্বাস্থ্য দফতরের। গত বৃহস্পতিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকাশিত পরিসংখ্যান রীতিমত চোখ কপালে তুলবে। ৪০ তম সপ্তাহের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে মাত্র ৭ দিনে রাজ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪হাজার ৬৭৮ জন।
শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার রাজ্যে ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যুর খবরও নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সব মিলিয়ে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত যা পরিসংখ্যান তাতে দেখা যাচ্ছে পুজোর আগে থেকে শুরু করে পুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে মোট ২৪ হাজার ৭০৮ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে চলতি বছরের যা পরিসংখ্যান তা বিগত বছরের সব হিসেব-নিকেশকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে পারে। শুক্রবারই ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর এক ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করে। সেখান থেকে যেটা উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে কম বয়সিদের মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রকোপ চলতি বছরে সর্বাধিক। কিন্তু কেন এই প্রবণতা?
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে প্রধানত DEN 3 স্ট্রেনকেই দুষছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, “শেষ এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি জেলার নির্দিষ্ট কতগুলি পুর এলাকায় লাফিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা”। DEN 3 স্ট্রেনের দাপটেই ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত, পুজোর আগে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা! চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে প্রধানত DEN 3 স্ট্রেনকেই দুষছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: < লক্ষ্মীপুজোর আয়োজনে দম ছুটেছে আম-আদমির, অগ্নিমূল্য বাজারের পকেটে ছ্যাঁকা! >
তথ্য বলছে গত ৫ বছরে এটাই সর্বোচ্চ। কলকাতার পাশাপাশি জেলাগুলিতেও লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যুর খবরও মিলেছে। সব মিলিয়ে পুজোর আগে করোনার দাপট কিছুটা কমতেই ডেঙ্গুর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের দাপটে কপালে ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের।
শুধু কলকাতা নয় জেলায় জেলায় চওড়া হচ্ছে ডেঙ্গুর থাবা। উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির একাধিক পুর এলাকাতে মিলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সন্ধান। চিকিৎসক সমাজের মতে কেবল পুরসভা উদ্যোগ নিলেই চলবে না। ডেঙ্গু রোধে নিজেদেরও সচেতন থাকতে হবে।করোনা কিছুটা টেস্ট ম্যাচের স্টাইলে ব্যাটিং করতেই টি-২০ ধাঁচে ঝোড়ো ইনিংস হাঁকাচ্ছে ডেঙ্গু।
ফি বছর রাজ্যে বর্ষার শেষে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া সহ বিভিন্ন পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এবারেও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। বর্ষার শেষে শহর এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা। কপালে চিন্তার ভাঁজ প্রশাসনের। কলকাতা পুরসভার একাধিক বোরোতে মিলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু কলকাতা নয়, একাধিক জেলাতেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে চলতি বছরের ডেঙ্গুর এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে আবহাওয়ার খাম-খেয়ালিকেই দায়ি করছেন চিকিৎসকরা। উত্তরপাড়ার বিখ্যাত চিকিৎসক ঐশ্বর্য্যদ্বীপ ঘোষ বলেন, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ থেকে ৪ গুন বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে প্রধানত DEN 3 স্ট্রেনকেই দুষছেন চিকিৎসকরা। ICMR-NICED, যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্তের নমুনা পরীক্ষার কাজ চলছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ নমুনায় প্রভাবশালী স্টেন হিসাবে DEN 3-এর অস্তিত্ব মিলেছে। DEN 3 তুলনামূলক-ভাবে একটি কম শক্তিশালী স্টেন হওয়ার কারণে, জন-স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর সংখ্যা সেভাবে বাড়বে না বলেই মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপের কারণে হতে পারে, যেগুলিকে ডেন ১, ডেন ২, ডেন ৩ এবং ডেন ৪ নামে চিহ্নিত করা যায়। ডেন ৩ হল সবচেয়ে সাধারণ স্ট্রেন৷
ICMR-NICED এর প্রধান শান্তা দত্ত বলেন, “আমরা এপ্রিল মাস থেকে ডেঙ্গুর নমূনা পরীক্ষার কাজ করছি, পরীক্ষা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে স্ট্রেনের সন্ধান পেয়েছি তা হল DEN 3, তারপর DEN 2 এবং DEN1″।
“যদিও এই স্ট্রেন ততটা গুরুতর নয়। তাও ডেঙ্গু আক্রান্তের ক্ষেত্রে চিকিৎসা এবং রোগীকে মনিটরিং করা বিশেষভাবে প্রয়োজন। উদ্বেগের বিষয়, যদি একজন রোগী যিনি আগে একটি নির্দিষ্ট স্ট্রেনে সংক্রামিত হয়ে থাকেন সেই সঙ্গে এখন এই সময় বিভিন্ন স্ট্রেনে আক্রান্ত হন,” সেক্ষেত্রে রোগীকে বাড়তি যত্ন ও চিকিৎসা একান্ত ভাবেই প্রয়োজন।
স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন ডিরেক্টর, অমিতা হাটি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে যে ডেঙ্গুর অন্যান্য স্ট্রেইনের তুলনায় DEN 2 বেশি প্রাণঘাতী। কিন্তু DEN 3 সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাই, পর্যাপ্ত সেরোটাইপিংয়ের পাশাপাশি, এই স্ট্রেনের মধ্যে কোনটি বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে তাও আমাদের বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে”।