রাজ্যে ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে ডেঙ্গু। শহর থেকে জেলা, মশাবাহিত এই রোগ বিদ্যুৎ গতিতে ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। জ্বর হলেই ডেঙ্গু আতঙ্ক তুঙ্গে উঠছে। মারাত্মক এই রোগ নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা? এই রোগের লক্ষ্ণণগুলি ঠিক কী কী? ডেঙ্গু হলে অনেকের রক্তেই প্লেটলেট কমে যায়। রক্তে প্লেটলেট বাড়াতে অনেকে পেঁপে পাতার রস খাওয়ার কথা বলে থাকেন। এই পরামর্শ কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে ডেঙ্গু সংক্রান্ত এমনই অজানা বহু প্রশ্নের উত্তর দিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাহুল জৈন।
রাজ্যে আতঙ্ক তুঙ্গে তুলেছে ডেঙ্গু। মশাবাহিত এই রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে শহর কলকাতায়। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, ডেঙ্গুতে রাজ্যে মৃত্যু-মিছিল জারি। কলকাতার পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে লাগোয়া হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা জেলাও। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২ নভেম্বর পর্যন্ত গোটা রাজ্যে মোট যতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার অর্ধেকেরও বেশি আক্রান্ত ছিলেন এই চার জেলাতেই। স্বাস্থ্য দফতর বাংলার সার্বিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। জেলাগুলিকে বিশেষভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়ছে। যে জায়গাগুলিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, সেখানে ডেঙ্গু চিকিৎসা, ফিভার ক্লিনিকগুলি ঠিক মতো চলছে কিনা তা দেখতে চিকিৎসকদের বিশেষ দল নজরদারি চালাচ্ছে।
জ্বর হলেই ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগতে শুরু করছেন অনেকে। এক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে তেমন উদ্বেগে না পড়লেও সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা। কলকতার বেলভিউ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাহুল জৈন ডেঙ্গু নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। যা থেকে সাধারণ মানুষ সচেতন হতে পারেন।
ডেঙ্গুর লক্ষ্ণণগুলি কী কী?
চিকিৎসক জৈন বলেন, ''জ্বর, হাত পায়ে ব্যথা, চোখের উপরে ব্যথা বা মাথা যন্ত্রণা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে গা গুলোনো ভাব বা বমি হচ্ছে। অনেকের ক্ষেত্রে ডায়েরিয়াও হয়। দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। প্রয়োজনে ডেঙ্গু পরীক্ষা করান।''
ডেঙ্গুর কোন স্টেজ প্রাণঘাতী হতে পারে?
চিকিৎসক জৈনের কথায়, ''৪-৫ দিনে জ্বর কমতে তাকে। তবে রোগের পঞ্চম দিনটি মারাত্মক। ওই দিনে রোগীরা বেশি অসুস্থ হন। এমনই অদ্ভুত অসুখ এটা। তিনটি স্টেজ থাকে ডেঙ্গুর। প্রথম স্টেজ থাকে চার থেকে পাঁচ দিন। খুব জ্বর থাকে। ১০৩ বা ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর উঠে যায়। হঠাৎ-হঠাৎ জ্বর বাড়ে। ক্রিটিকাল স্টেজে জ্বর কমতে থাকে বা জ্বর থাকে না। তখন কিন্তু মারাত্মক সময়। এটা ৫-৬ দিনের মাথায় হতে পারে। প্রস্রাব কমে যায়। কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, পেটে ব্যথা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ডায়েরিয়া হয়। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘামাচির মতো বেরোতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার মল, বমির সঙ্গে রক্ত বেরোতে পারে। এছাড়াও মাড়ি, নাক থেকে রক্ত বেরোতে পারে।''
প্লেটলেট বাড়াতে পেঁপে পাতার রস কতটা কার্যকরী?
এক্ষেত্রে এই চিকিৎসক বলেন, ''কোনও খাবারেই প্লেটলেট বাড়ে না। পেঁপে পাতার রস, কিউই খেলে প্লেটলেট বাড়ে না। কোনও গাইডলাইনেই এব্যাপারে কিছু বলা নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই বিষয়গুলি নিয়ে বড় কোনও স্টাডিও নেই। বরং পেঁপে পাতার রস খেলে বিপত্তি বাড়ে। যাঁরা খান তাঁরা বমি করেন। সবুজ মল হতে পারে। পেটে ব্যথা হয়। আমি বলব, দয়া করে এগুলো খাবেন না। কারণ আমাদের গাইডলাইনে এগুলো সম্পর্কে কিছু বলা নেই। বরং এসব খেয়ে বিপদ আরও বাড়তে পারে।''
ডেঙ্গু হলে কী খাবেন আর কী খাবেন না…জেনে নিন…
চিকিৎসক জৈনের পরামর্শ, ''বেশি করে জল খেতে হবে। তরল খাবার খেতে হবে। ভাজাভুজি, বা বেশি তেল-মশলা জাতীয় খাবার একেবারেই খাওয়া চলবে না।''
প্লেটলেট কি শরীরে নিজে থেকেই বেড়ে যায়?
ওই চিকিৎসক বলেন, ''ডেঙ্গুর ক্রিটিকাল স্টেজে রক্তে প্লেটলেট কমে যায়। রিকভারি স্টেজে নিজে নিজে প্লেটলেট বাড়তে শুরু করে। ১০ হাজারের নীচে প্লেটলেট নেমে গেলে কিংবা শরীরের কোনও অংশ থেকে রক্তপাত শুরু হলে প্লেটলেট দিতে হবে। তার আগে প্লেটলেট দিতে হয় না। এটা রাজ্য সরকারের গাইডলাইনেই বলা আছে।''
ডেঙ্গু হলে কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত? আগেভাগে খাবারের মাধ্যমে ডেঙ্গু এড়ানো সম্ভব? কী বলছেন ডায়েটিশিয়ানরা?
মশার কামড়েই ডেঙ্গু হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট ডায়েটিশিয়ান দীপান্বিতা সাহা মনে করেন, ''বাতাবি লেবু, আমলা, মুসুম্বির রস খাওয়া যেতে পারে। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরাও দ্রুত সুস্থ হতে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে পারেন। ঘরে পাতা টক দই দারুণ কার্যকরী। এছাড়াও ডাবের জল খাওয়া যেতে পারে।''