Advertisment

জমা জলেই ওঁত পেতে রয়েছে বিপদ, ডেঙ্গু দমনে পুরসভার বিশেষ তৎপরতা  

কেষ্টপুর, বাগুইআটি এবং চিনার পার্ক এলাকায় বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Dengue, Bidhannagar Municipal Corporation (BMC)

জমা জলেই ওঁত পেতে রয়েছে বিপদ, ডেঙ্গু দমনে পুরসভার বিশেষ তৎপরতা

গত কয়েক সপ্তাহে বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে এক ডজনের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘সংক্রমিত বেশিরভাগই কেষ্টপুর, বাগুইআটি এবং চিনার পার্ক অঞ্চলের বাসিন্দা’।

Advertisment

গত বছর রাজারহাট, কেষ্টপুর, সল্টলেক এবং চিনার পার্কের মত এলাকা থেকে ৪হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। পাশাপাশি সল্টলেকের একাধিক ব্লক থেকেও মিলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সন্ধান। সাধারণত জুলাই মাস থেকে বাড়তে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর এই দাপট প্রতি বছরই অব্যাহত থাকে। এদিকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই মেয়র ফিরহাদ হাকিম কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে চিঠি দিয়ে মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য সমস্ত থানার বাইরে বাজেয়াপ্ত গাড়িগুলিকে সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। এবিষয়ে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ‘বেশ কয়েকটি গাড়িকে থানার বাইরে থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে যেখানে কয়েক মাস ধরে গাড়িগুলি পড়ে ছিল। ধুলো সেখানে বৃষ্টির জল জমতে শুরু করে। কিছু গাড়ি এখনও রয়েছে। মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে’।

জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণ ভাবে দেখা দেয়। এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর্তারা কোন রকম ঝুঁকি নিতে নারাজ। গত বছর জেলায় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। ২০১৯ সালের ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে পিছনে ফেলে গত বছর মারাত্মক আকার ধারণ করে ডেঙ্গু। তাই চলতি বছর বর্ষার প্রথম থেকে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্যদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ১৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত বিধাননগর পুরনিগম এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭ থেকে ৬৫। এবিষয়ে এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, 'গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তার কারণে রাস্তার দশাও বেহাল। কোথাও কোথাও বড়-বড় গর্তে, জমছে জল। তা ছাড়া দুর্গাপুজো উপলক্ষে ইতিমধ্যেই প্যান্ডেল শুরু হয়েছে অনেক জায়গায়। সেই প্যান্ডেলের জন্যে খোঁড়া গর্তেও জল জমার আশঙ্কা রয়েছে।'

BMC স্বাস্থ্য বিভাগের সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘টাউনশিপের সমস্ত ৫২ টি ব্লকের সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তার পাশে এবং খালি প্লটে পড়ে থাকা বর্জ্য যাতে ডেঙ্গু-সৃষ্টিকারী মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য এই অভিযান চালানো হচ্ছে’। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার ডেঙ্গু রোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিয়েছেন। গত সাত দিনে, বিএমসি এলাকায় আটটি নতুন ডেঙ্গু সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার পর্যন্ত, জানুয়ারি থেকে বিএমসি এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫।  

এমন পরিস্থিতিতে সন্তানকে নিরাপদে রাখতে কালঘাম ছুটেছে বাবা-মায়েদের। কী বলছেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইন্দ্রনীল চৌধুরী। তাঁর কথায়, “গাঁটে ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা এবং গায়ে র‍্যাশের মত উপসর্গ দেখা দিলেই শিশুদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা এক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যায়। তবে দুর্বলতাটা বেশ কিছুদিন থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বর্ষাকালের শেষ থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এই সময়, চিকিৎসকদের কাছে বিভিন্ন ধরনের জ্বর নিয়ে রোগীর আসছেন। তার মধ্যে অনেকেই মশা বাহিত রোগে আক্রান্ত। যার মধ্যে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছেন”।  

বিশিষ্ট চিকিৎসক ঐশ্বর্যদ্বীপ ঘোষ জানিয়েছেন, “ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে ভয় পাবেন না। এখন জ্বর হলে, প্রথমে এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে। পরবর্তী সময় অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে হবে। আর প্লেটলেটের পরীক্ষা ভাল ল্যাব থেকে করতে হবে। না হলে ফলাফলে বিভ্রান্তি হতে পারে। তাঁর মতে, ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত চিহ্নিত হলে ওষুধ আছে। কিন্তু, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ এখনও নেই। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করেই, ডেঙ্গু রোগীকে সুস্থ করা হয়”। তাঁর কথায়, জ্বর হলেই আগে রক্ত পরীক্ষা করান, এই রোগকে কোন ভাবেই ফেলে রাখবেন না, দেরিতে চিকিৎসা শুরু হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে শুরু করেছে সেক্ষেত্রে সবটাই হাতের বাইরে চলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা যায়”।

Dengue
Advertisment