অদম্য ইচ্ছাশক্তিতেই জীবনের প্রথম সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় সাফল্য কিশোরীর। ক্যান্সারকে হেলায় উড়িয়েই এ যেন এক যুদ্ধজয়! শরীর বেগ দিলেও তাতে সায় ছিল না সামিনার। শারীরিক সমস্যাকে পাত্তাই দেননি তিনি। তাঁর জেদের কাছে কার্যত হার মেনেছে 'রাজরোগ'। মাধ্যমিকে সামিনার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তাঁর পরিবার। বাড়ি বয়ে গিয়ে কিশোরী সামিনা ও তাঁর পরিবারকে কুর্নিশ জানিয়ে এলেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও।
শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণব্যধি ক্যান্সার। তাতে কি? জীবন তো থেমে থাকে না। এই কথাটিই বারবার মনে রেখেছিলেন সামিনা। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম রামনাথপুর। এই গ্রামেরই এক প্রান্তে রয়েছে সামিনাদের বাড়ি। ছোট্ট দু’কুঠুরির ঘরে পরিবারের সবই বাস করেন। বাবা শেখ আলম পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। তিনি খেতমজুরির কাজ করেন। মা নূরজাহান বেগম সাধারণ গৃহবধূ। সামিনার দিদি আসলিমা বিবাহিতা।
ক্যান্সারে আক্রান্ত কিশোরী সামিনা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ রয়েছে সামিনার। তাঁর বাবা তাঁকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সম্পূর্ণ করে সামিনা ভর্তি হয় স্থানীয় বনবিবিতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। একের পর এক ক্লাস পেরিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ওঠে সামিনা।
তখনই শরীরটা বেগ দিতে শুরু করে। শারীরিক পরীক্ষায় দেখা যায় ক্যান্সারে আক্রান্ত সামিনা। তার পর থেকে টানা প্রায় তিন বছর ধরে তাঁর ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে। নিয়ম করে সামিনাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে 'কেমো থেরাপি' ও 'রেডিয়েশন থেরাপি' নিতে হয়। এর জন্য মাথার চুল প্রায় সবই উঠে গিয়েছে সামিনার। প্রথমটায় বিষয়টি নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও পরে তা সামলে ওঠেন কিশোরী।
আরও পড়ুন- প্রতিবন্ধকতাকে জয়! ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে ‘হিরো’ আলম
দশম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই মাধ্যমিকের জন্য পড়াশোনার সময় বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সামিনা। অদম্য জেদ দিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আজ সাফল্য ঝুলিতে ভরেছেন এই কিশোরী। সফলভাবে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছেন সামিনা। তাঁর এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিবারে সদস্যরা।
তাঁর শারীরিক অসুস্থতা সম্পর্কে সামিনা জানিয়েছে, তাঁর দুই কানের নিচে গলার অংশে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। চিকিৎসা চলছে ঠিকই, তবে তাঁর শরীর এখন ভালো যাচ্ছে না। জ্বর, গলায় ব্যথা আছে। ভাত গিলতেও সমস্যা হচ্ছে। তবে মাধ্যমিকে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হতে পেরে শারীরিক সব সমস্যাই যেন ফিকে মনে হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ‘শিল্পতো আগেই ভাগিয়েছিলেন, KK-র মৃত্যুর পর শিল্পীও ভাগালেন’, বেনজির আক্রমণ শুভেন্দুর
সামিনার এই সাফল্যের কথা জানতে পেরে তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারা। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুপ্রভাত চক্রবর্তী, জামালপুরের ওসি রাকেশ সিং, ব্লকের যুগ্ম বিডিও গৌতম দত্ত সামিনার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানান। এরই পাশাপাশি তঁর চিকিৎসা ও আগামী দিনে পড়াশোনার বিষয়েও যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।
মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, 'সামিনাই রোল মডেল। সবাই সামিনার পাশে দাঁড়াক, এটাই আমি চাইব।'' যুগ্ম বিডিও গৌতম দত্ত বলেন, ''সামিনার জীবন ও সাফল্য অনুসরণ যোগ্য। ওঁর চিকিৎসা ও আগামী দিনের পড়াশোনার ব্যাপারে যা সাহায্যের প্রয়োজন সেটা আমরা করব।'' এছাড়াও জামালপুরের বিধায়ক আলোক মাঝি ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খানও সামিনার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছেন।