ফের বিতর্কের শিরোনামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত স্বাস্থ্য সাথী কার্ড। কোনও হাসপাতাল গুরুতর জখম এক ব্যক্তিকে ভর্তি না-নেওয়ায় মৃত্যু হল ওই ব্যক্তির। ১৩ ঘণ্টার টানাপোড়েন শেষে বিনা চিকিত্সায় এই মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উত্তেজিত জনতা মৃতদেহ রাস্তায় ফেলে রেখেই বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। ঘটনার জেরে তীব্র উত্তেজনা ছড়াল দুর্গাপুরে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মৃতের পরিবারের কাছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড ছিল। কিন্তু, সেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ভরসায় আহত জখম নির্মল মণ্ডলকে ভর্তি নিতে চায়নি হাসপাতালগুলো। তাই নিয়েই বিভিন্ন হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে চলে ভর্তির চেষ্টা। এভাবেই বিনা চিকিৎসায় পেরিয়ে যায় ১৩ ঘণ্টা। তাতে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় বছর ৬২-র নির্মল মণ্ডলের।
এরপরই উত্তেজিত গ্রামবাসীরা মৃতদেহ রাস্তায় ফেলে রেখে তুমুল বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। রবিবার ভোররাত থেকে দুর্গাপুরের জব্বরপল্লিতে এই রাস্তা অবরোধের জেরে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ জব্বরপল্লি এলাকাতেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ওই প্রৌঢ়। ইস্পাত নগরীর আশিস মার্কেটে তাঁর একটি ঘড়ির দোকান আছে। শনিবার দুপুরে দোকান বন্ধ করে তিনি জব্বরপল্লির বাড়ি ফিরছিলেন। ঠিক তখনই একটি বাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে সাইকেল আরোহী নির্মল মণ্ডলকে।
এরপরই শুরু হয় নাটক। প্রথমে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় নির্মল মণ্ডলকে। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় অনাময় সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সেখান থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় ফের তাঁকে দুর্গাপুরে নিয়ে আসা হয়। একের পর এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা চলে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে বেড নেই। যন্ত্রপাতি নেই। আর, বেসরকারি সব হাসপাতালই ভর্তির জন্য টাকা চাইছিল। নতুন মেডিক্লেমের কার্ড চাইছিল। স্বাস্থ্য সাথীর কথা শুনতেই ভর্তি নিতে চায়নি। চিকিত্সক, নার্স থেকে হাসপাতাল কর্মী- সকলকে বিস্তর অনুরোধ করেও কোনও কাজের কাজ হয়নি। শেষে ভোর তিনটে নাগাদ মারা যান নির্মল মণ্ডল।
এরপর উত্তেজিত জনতা এই মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ আর এলাকার ব্যস্ততম রাস্তায় বাম্পার এবং ট্রাফিকের দাবিতে জব্বরপল্লি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। আটকে পড়ে সমস্ত যানবাহন। মৃতদেহ ফেলে রেখে বিক্ষোভে শামিল হন উত্তেজিত জনতা। দুর্ঘটনাস্থল কোন থানা এলাকায় পড়ে, তাই নিয়ে শুরু হয় দুর্গাপুর থানা ও লাউদোহা থানার দড়ি টানাটানি। অবরোধে যানবাহনের লম্বা লাইন পড়ে যায় রাস্তায়।