বাংলা সাহিত্যের জগতে জোড়া নক্ষত্রপতন ঘটল আজ। অব্যাহত রইল গত বছরের শেষ এবং এবছরের শুরু মিলিয়ে বাংলার মনিষীদের দিকশূন্যপুরের দিকে একের পর এক যাত্রা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নটা নাগাদ খবর এলো, বিরল সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন কবি পিনাকী ঠাকুর, বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। গত ২১ ডিসেম্বর ধরা পড়ে অসুখ, তারপর একাদিক্রমে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতাল, ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল, এবং অবশেষে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে।
এই দুঃসংবাদের রেশ কাটতে না কাটতেই খবর আসে, যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সাহিত্যিক দিব্যেন্দু পালিত। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই ভুগছিলেন তিনি। বুধবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, এবং বৃহস্পতিবার সকালে সেখানেই প্রয়াত হন তিনি।
আরও পড়ুন: এবছর না ফেরার দেশে চলে গেলেন যাঁরা
দুই নক্ষত্রের পতনে আজ সারাদিন শোকে মুহ্যমান বাংলার সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মহল। দিব্যেন্দুবাবুর প্রয়াণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে তাঁর শোকবার্তা পোস্ট করেন। অন্যদিকে পিনাকী ঠাকুরের স্মৃতিতে ফেসবুকে শোকজ্ঞাপন করেন কবি সুবোধ সরকার। আশির দশক থেকে লেখালিখি শুরু করলেও মূলত নব্বইয়ের দশকেই জনপ্রিয়তা লাভ করেন পিনাকী। 'হ্যাঁ রে শাশ্বত', 'চুম্বনের ক্ষত', বা ‘শরীরে কাচের টুকরো’-র মতো কাব্যগ্রন্থ তাঁর অমর সৃষ্টি। 'চুম্বনের ক্ষত'-র জন্য ২০১২ সালের আনন্দ পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়াও কৃত্তিবাস পুরস্কার ও বাংলা আকাদেমি পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছিলেন পিনাকী। আজ আদি বাসস্থান বাঁশবেড়িয়ার কাছে ত্রিবেণী শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে তাঁর।
অন্যদিকে দিব্যেন্দুবাবুর প্রয়াণে সাহিত্যিক আবুল বাশারের প্রতিক্রিয়া, "আমি অভিভাবক হারালাম। এই হারানো খুব কষ্টের। অনেক কিছু শেখার ছিল। বাবার মতো ছিলেন।" উপন্যাস, ছোট গল্প, কবিটা, প্রবন্ধ, লেখা এবং সম্পাদনা করা ছাড়াও দিব্যেন্দু পালিত দীর্ঘকাল আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন। তাঁর জন্ম ১৯৩৯ সালে, বিহারের ভাগলপুরে। ছাত্রজীবনেই লেখালেখির সূত্রপাত, যা চলে আজীবন। কলকাতায় স্নাতকোত্তর পড়াশোনার সময় চূড়ান্ত অভাবের দিনেও লেখা বন্ধ করেন নি।
তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে এমএ পাশ করার পর যোগ দেন সে সময়ের জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক 'হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড'-এ। এর পর বিপণন ও বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিভাগে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন ক্ল্যারিয়ন-ম্যাক্যান বিজ্ঞাপন এজেন্সি, আনন্দবাজার এবং দ্য স্টেটসম্যান-এ। পরে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগেও ছিলেন দীর্ঘদিন। তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা আজ সর্বজনবিদিত। ১৯৮৪ সালে 'সহযোদ্ধা' উপন্যাসের জন্য আনন্দ পুরস্কার পান তিনি, এবং এরপর ‘অনুভব’-এর জন্য ১৯৯৮ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার। এছাড়াও ১৯৯০ সালে বঙ্কিম পুরস্কারে সম্মানিত হন। উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে ‘ঘরবাড়ি’, ‘সোনালী জীবন’, ‘ঢেউ’, ‘সহযোদ্ধা’, ‘আমরা’, ‘অনুভব'।