Digha Rath Yatra,Mahishadal Rath Yatra: পুরী ও হুগলির মাহেশের পরেই উঠে আসে শতাব্দীপ্রাচীন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের রথের নাম। এবার সেই জেলায় দিঘায় জগন্নাথ ধামে রথযাত্রা আলাদা মাত্রা পেতে চলেছে। জেলার দিঘা ও মহিষাদলের রথযাত্রার প্রস্তুতিকে ঘিরে উন্মাদনা শুরু হয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি দিন পরেই রথযাত্রা, বিশেষ প্রস্তুতিতে মেতেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দারা।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের সহধর্মিণী ধর্মপ্রাণ রানি জানকী দেবী মহিষাদলের রথের সূচনা করেছিলেন। এরপর ১৮০৪ সালে রানির মৃত্যুর পর অল্পকালের জন্য মতিলাল পাঁড়ে মহিষাদলের রাজত্ব পান। সেই সময় তিনি একটি সুন্দর ১৭ চূড়ার রথ তৈরি করান। পরে ১৮৫২ সালে তৎকালীন রাজা লছমন প্রসাদ গর্গ বাহাদুর ওই ১৭ চূড়া রথের সংস্কার করার জন্য কলকাতা থেকে কয়েকজন চিনা কারিগরকে অনিয়েছিলেন। সেই সময় প্রায় চার হাজার টাকা খরচ করে তিনি রথের চারধারে চারটি মূর্তি বসিয়েছিলেন। ১৯১২ সালে স্থানীয় মিস্ত্রি মাধবচন্দ্র দে রথের সামনের কাঠের ঘোড়া দুটি তৈরি করেন।
প্রাচীনত্ম ও জনপ্রিয়তার নিরিখে পুরী ও মাহেশের পরই ঐতিহ্যের দিক থেকে উঠে আসে মহিষাদলের রথের কথা। সময় এগোলেও এখনও সেই আগের মতোই থেকে গেছে রথের প্রাচীন রীতিনীতি। প্রাচীন রীতি মেনেই এখনও রথের আগের দিন ঘটা করে পালন করা হয় লেত উৎসব। রাজ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রথে স্থাপন করা হয় রাজ কলস এবং বাঁধা হয় কাছি। মহিষাদলের রথের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এখানকার রথে চড়ে যান রাজপরিবারের কূলদেবতা শ্রী গোপাল জিউ এবং সঙ্গে যান জগন্নাথদেব। তবে যান না বলরাম ও সুভদ্রা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহিষাদলের রথের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ফলে রথ ও উল্টো রথের দিন ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ-প্রশাসন। এ’বছর রথযাত্রা ২৭ জুন। হাতে আর এক মাসের মত সময়। কাজেই আগাম প্রস্তুতিতে ব্যস্ত প্রশাসন ও রথযাত্রা কমিটি।
আরও পড়ুন- Kolkata News Live Updates: দু'বার তলবেও গরহাজির কেষ্ট, আজই অনুব্রতর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ পুলিশের?
মহিষাদলের বিধায়ক তিলককুমার চক্রবর্তী বলেন, "মহিষাদলের রথ প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। সেই রথের প্রস্তুতি ঘিরে মানুষের মধ্যে উন্মাদনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এবছর জেলায় আরও একটি রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে দিঘায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দিঘায় গড়ে ওঠা জগন্নাথ ধামে এবছর ধুমধামের সাথে রথযাত্রা পালিত হবে। ফলে জেলায় দুটি রথযাত্রাই যাতে সুন্দরভাবে আগত দর্শনার্থীরা দর্শন করতে পারে তার চেষ্টায় রয়েছি আমরা।"
মহিষাদল রাজ পরিবারের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ বলেন, "মহিষাদল রাজবাড়ির রথ এখন সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। সকলের মেলবন্ধনের মাধ্যমে সুন্দরভাবে রথযাত্রা পালন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এবছর জেলায় দুটি রথযাত্রাই আলাদা মাত্রা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এবছর দূর দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের কাছে দুটি রথযাত্রা দেখার সুযোগ মিলবে। ফলে রথযাত্রাকে ঘিরে মহিষাদলের পাশাপাশি জেলা জুড়ে উন্মাদনা শুরু হয়ে গিয়েছে।"
আরও পড়ুন- ISKCON: 'সোনার অধ্যায়' শুরুর পথে! কলকাতার রাজপথে কোন যুদ্ধবিমানের চাকায় চলবে ইসকনের রথ?
মহিষাদলের পাশাপাশি এবার সৈকত ভূমিতে চলবে দিঘার রথ। দিঘা জগন্নাথ ধাম উদ্বোধনের পর প্রথম রথযাত্রায় তিনি নিজে উপস্থিত থেকে রথের রশিতে টান দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রথ গড়ানোর আগে রাস্তা পরিস্কার করার জন্য সোনার ঝাড়ুর প্রয়োজন হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের টাকা দিয়ে সেই সোনার ঝাড়ু দিঘা জগন্নাথ ধাম কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছেন। ফলে এই বছর দিঘায় জগন্নাথ ধাম থেকে মাসি বাড়ি পর্যন্ত গড়বে রথ।
গত ৩১ মার্চ দিঘার জগন্নাথ ধামের দ্বার খুলে দেওয়ার পর থেকে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। ফলে রথযাত্রার দিন গুলিতে সেই ঢলের মাত্রা কয়েকশোগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এখন থেকে রথযাত্রার অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে প্রস্তুত হচ্ছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। দিঘার বালু মাটিতে গড়াবে জগন্নাথের রথের চাকা। যার প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। পৃথক তিনটি রথে ধ্বজা উড়িয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা যাবেন মাসির বাড়ি। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ইতিমধ্যে ৭৫ লক্ষ টাকা খরচে মাসির বাড়ির পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে। তিনটি পৃথক রথ নন্দীঘোষ, তালধ্বজ ও পদ্মধ্বজ প্রস্তুত। ২৭ জুন রথের রশিতে হাজার হাজার ভক্তের টানে প্রভু জগন্নাথ পৌঁছবেন মাসির বাড়ি।
আরও পড়ুন- Kolkata Weather Update today:উত্তরে ঝেঁপে বৃষ্টি, অস্বস্তিকর ভ্যাপসা গরমে সেদ্ধ দক্ষিণবঙ্গ! বর্ষা ঢুকছে কবে?
১২ জুন পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথদেবের পবিত্র স্নানযাত্রা। ১০৮টি কলসির জলে স্নান করবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। ওই দিন থেকে ১৫ দিন বন্ধ থাকবে জগন্নাথ-দর্শন। সন্ধ্যায় নতুন বেশে সাজানো হবে তিনজনকে। যেহেতু স্নানযাত্রার পর ভগবানের জ্বর আসে তাই ওই সময় দর্শন বন্ধ থাকবে। সেই জায়গায় দর্শনার্থীরা মদনমোহন বিগ্রহ দর্শন করতে পারবেন বলে জানান ধামের দায়িত্বে থাকা কলকাতা ইসকনের সহ সভাপতি রাধারমন দাস।