মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম সৈকতনগরী দিঘার 'মেরিন ড্রাইভ'। দিঘা, তাজপুর, মন্দারমণিকে এক সুতোয় বাঁধতে পুজোর আগেই দিঘার মুকুটে জুড়েছিল নতুন এই পালক। যা 'মেরিন ড্রাইভ' নামে পরিচিত হলেও পরে নাম বদলে তা 'দিঘা সৈকতসুন্দরী' করা হয়। মুম্বইয়ের ধাঁচে সমুদ্রের কিনারা বরাবর তৈরি এই রাস্তার আকর্ষণে দিঘা ছুটে গিয়েছেন বহু পর্যটক। কিন্তু মেরিন ড্রাইভে ছুটে চলার স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়েছে অচিরেই। পুজোর সময় রাজ্যের অন্যান্য জায়গা থেকে যাওয়া পর্যটকদের অনেকেই ওই খানা-খন্দে ভরা মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে গিয়ে ঘোরতর সমস্যার মধ্যে পড়েছেন।
বেহাল রাস্তায় আটকে গিয়েছে গাড়ি। খানায় ভরা রাস্তার দীর্ঘ যানজটে ফেঁসে গিয়ে সমুদ্র পাড় বরাবর গাড়ির লম্বা লাইনও চোখে পড়েছে। অভিযোগ, রাস্তার পুরো কাজ শেষ হওয়ার আগেই তা খুলে দেওয়া হয়েছিল। কীভাবে রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তা খুলে দেওয়া হল? তা নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকও সংশয়ে রয়েছেন। তবে মেরিন ড্রাইভের বেহাল দশার জন্য আপাতত পথটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তার পুরো কাজ শেষের পর ফের সেটি খুলে দেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর মিলেছে।
১৭৩ কোটি টাকা খরচে তৈরি ৩০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ তৈরি হয়েছে। এই লম্বা পথ যেন একসূত্রে বেঁধেছে সমুদ্র পাড়ের দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর এবং মন্দারমণিকে। পুজোর মুখে সেই মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমুদ্র পাড় বরাবর এই মেরিন ড্রাইভ দিয়ে পর্যটকরা বেড়ানোর দারুণ মজা উপভোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুজোর মরশুমে কাতারে-কাতারে ভিড় উপচে পড়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র তীরবর্তী পর্যটন কেন্দ্র গুলিতে। অনেকেই বেড়ানোর আনন্দ নিতে গিয়েছিলেন মেরিন ড্রাইভে।
তবে এক্ষেত্রে তাঁদের করুণ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পর্যটকদের অভিযোগ, মেরিন ড্রাইভ দিয়ে এসে শঙ্করপুরের কাছে পথের দশা অত্যন্ত বেহাল। রাস্তার বড় বড় গর্তে হেঁটে চলাও দায় হয়ে পড়েছিল। গাড়ি নিয়ে গেলে পদে পদে ছিল দুর্ঘটনার আশঙ্কা। রাস্তার এই বেহাল দশায় দিনের একটি বড় সময় ধরে দীর্ঘ যানজট হয়ে যাচ্ছিল। প্রশাসনের তরফেও এব্যাপারে সক্রিয় কোনও পদক্ষেপ না করাতে বাড়ছিল সমস্যা। এক কথায় মেরিন ড্রাইভের আনন্দ নিতে গিয়ে বেড়ানোর আনন্দটাই মাটি হয়ে যেতে বসেছিল পর্যটকদের। ঘোরতর এই সমস্যা বুঝেই শেষমেশ মেরিন ড্রাইভ সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। রাস্তা বন্ধ রাখার বোর্ডও ঝোলানো হয়েছে।
কলকাতা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা সুবীর বোস ও তাঁর স্ত্রী অনুরাধা বোস জানান, দিঘা অনেকবার এসেছেন তাঁরা। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিঘার মেরিন ড্রাইভের ছবি দেখে এই রাস্তায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন- বিজয়া সম্মিলনীতে ‘ব্রাত্য’ তাপস, ‘চাকরেরা বোধ হয় ডাক পান না’, অভিমানী বিধায়ক
বোস দম্পতি বলেন, ''ছবি দেখেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু এসে বিপদে পড়তে হয়। মাঝ রাস্তা থেকেই গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে হয়। অল্প দিনের মধ্যে রাস্তার অবস্থা এতটা খারাপ হতে পারে তা কল্পনা করতেও পারিনি।'' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর দিঘাকে গোয়ার মতো সাজিয়ে তোলার চেস্টা শুরু করেন। দিঘায় উন্নয়নের নানাবিধ কাজ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভের অবস্থা দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।