অতমারী পর্বের অবসানের পর চলতি বছর ছট পুজো ধূমধাম করে করার পরিকল্পনা ছিল বউবাজারের মদন দত্ত লেনের সাউ পরিবারের। গত ২ বছর কোভিড পরিস্থিতিতে নমো নমো করেই ছট পুজো সারতে হয়েছিল। এবার ছট পুজো ঘিরে এক আলাদাই উন্মাদনা ছিল সাউ পরিবারের। কিন্তু মুহূর্তেই সেই পরিকল্পনা যেন ঝাপসা হয়ে গিয়েছে।
গত ১৪ ই অক্টোবর ভোররাতেই ফাটল টের পেয়েছিলেন ১০টি বাড়ির বাসিন্দারা। আর তারপর থেকেই ঘরছাড়া মানুষগুলোর ঠিকানা এখন পাশের একটি হোটেল। ছট পুজোর আয়োজনে প্রশাসনের কাজে সাহায্যও চেয়েছে তারা। মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে ফাটলের পর থেকেই হোটেলে দিন কাটছে পরিবারগুলোর ।
ভোররাতেই ফাটল টের পেয়েছিলেন ১০টি বাড়ির বাসিন্দারা। তারপরই ঘরছাড়া একাধিক সেই বাড়ির বাসিন্দারা। ছট পুজোর আগেই মন খারাপ মদন দত্ত লেনের বাসিন্দাদের। অতিমারি পরিস্থিতিতে গত ২ বছর ছট পুজোয় সেভাবে আনন্দ করা হয়নি। এবার করোনার দাপট কম থাকায় ছট পুজো নিয়ে হাজারো প্ল্যানিং ছিল ওই অঞ্চলের অধিকাংশ বাসিন্দাদের।
মদনদত্ত লেনের বাসিন্দাদের বেশিরভাগেরই আদিবাড়ি আশে পাশের প্রতিবেশি রাজ্য। বংশ পরম্পরায় তারা রয়েছেন ওই অঞ্চলেই। দিওয়ালিতে যখন আলোর উৎসবে গা ভাসিয়েছেন তামাম ভারতবর্ষের মানুষ। তখন একরাশ অন্ধকার যেন তাদের গিলে খেয়েছে। সামনেই ছট পুজো। কীভাবে আয়োজন করবেন পুজোর? ভেবেই পাচ্ছেন না তারা। বেশিরভাগ পরিবার নুন্যতম দরকারি জিনিসপত্র নিয়েই ঘর ছেড়েছেন। পুজোর আয়োজনের অধিকাংশ সামগ্রীই রয়ে গিয়েছে বাড়িতে জানিয়েছেন অসহায় পরিবারগুলো।
আরও পড়ুন : < একাধিকবার CBI ডাক ফিরিয়েছেন, আজ ED দফতরে যাবেন সুকন্যা? >
সাউ পরিবারের অন্যতম সদস্য, পঙ্কজ সাউয়ের কথায়, “আমরা অনেক আগে থেকেই ছটের প্রস্তুতি শুরু করে দিই। কিন্তু এবার আমাদের বাড়ি ঘর নেই, তাই প্রস্তুতির কোন প্রশ্নই ওঠে না। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই অধিকাংশের ব্যবসা-কাজ বন্ধ। কোন রকমে হোটেলে ঘর বাড়ি ছেড়ে রয়েছি। কীভাবে পুজোর আয়োজন করব ভেবেই পাচ্ছি না”।
তার কথায়, “আমরা সেভাবে দিওয়ালিতে আনন্দ করতে পারিনি। সকলেই যখন আলোর উৎসবে মেতে উঠেছিলেন তখন আমরা একরাশ অন্ধকার অনিশ্চয়তার মধ্যে হোটেলের ঘরে দিন কাটিয়েছি”। স্থানীয় কাউন্সিলর এবং বিধায়ক আমাদের কিছু টাকাপয়সা, শাড়ি এবং পূজার সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেছেন। কিন্তু মনের ভিতর অজানা একটা আশঙ্কা কা করছে। এর মধ্যে কীভাবে আমরা ছট পুজোর আয়োজন করব ভেবেই পাচ্ছি না। আমরা প্রশাসনের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছি। প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এবারের পুজো আমাদের পক্ষে আয়োজন করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। শুধু আমরা নয়। আমাদের মত বেশ কয়েকটি পরিবার ছট পুজো নিয়ে চিন্তিত”।
মদন দত্ত লেনের বেশ কিছু পরিবার এবারের ছট উদযাপনের আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে করার পরিকল্পনাও করেছেন। ঘরছাড়া সৌরভ সাউয়ের কথায়, “পুজোর প্রস্তুতি ও তা সম্পূর্ণ করতে আমাদের একটা উপযুক্ত জায়গা দরকার এবং হোটেলগুলিতে তা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই আমরা অনেকেই ওই দিনে শহরের আমাদের আত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেখান থেকেই এবারের ছটপুজো আমাদের পালন করতে হবে”।
ভোররাতে বারিতে ফাটল দেখা দেওয়ায়, ভিটে মাটি ছেড়ে তড়িঘড়ি যাবেন কোথায় তাঁরা? সেই চিন্তাই কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে তাদের। ২০১৯ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই বউবাজারে বিপত্তি শুরু হয়। মাস পাঁচেক আগেই ঠিক পাশের রাস্তা দুর্গাপিতুরি লেনে একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরে। মুহূর্তে ঘরছাড়া হন একাধিক পরিবার। সেই স্মৃতিই আবারও ফিরে এল বউবাজারে। এবার ফাটল ঠিক তার পাশের লেন মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে। আবারও ভিটেমাটি ছাড়া অসংখ্য পরিবার। প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে ভিটে ছেড়ে আবারও হোটেলমুখো হয়েছেন মদন দত্ত লেনের অসহায় পরিবারগুলো।
এলাকারই এক বাসিন্দার কথায়, “বারবার মেট্রো রেলের গাফিলতির কারণে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বার বার আমাদের ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে হোটেলে। কবে আবার ঘরে ফিরব তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই! ক্ষতিপূরণ পেলেই কী সব কিছু মিটে গেল? বাড়িতে অসুস্থ ব্যক্তি, বাচ্চা , বয়স্করা রয়েছেন। কীভাবে আমরা দিন কাটাবো তা ভেবেই দিশাহীন অবস্থা আমাদের”। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, “যখনই এমন ঘটনা ঘটছে মেট্রো কর্তৃপক্ষে নড়েচড়ে বসছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের একই চেনা ছবি”। আমাদের সঙ্গে অনেকটা গিনিপিগের মত ব্যবহার করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ”।