গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা বা রথযাত্রার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে কিঞ্চিত স্বস্তি পেল বিজেপি। বৃহস্পতিবার বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চ তপব্রত চক্রবর্তীর সিঙ্গল বেঞ্চের বুধবারের রায়কে খারিজ না করে কেবল 'সংশোধন' (মডিফাই) করে দিয়েছেন। এবার এক নজরে জেনে নিন, আজ ঠিক কী বলল আদালত:
১) আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বিজেপির রথযাত্রার কর্মসূচিতে বুধবার যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তপব্রত চক্রবর্তীর সিঙ্গেল বেঞ্চ তা 'গ্রহণযোগ্য' নয়।
২) ১২ ডিসেম্বর বুধবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় কুমার দে, স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে বিজেপির তিন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। বিজেপি যাতে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা নামক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও আয়ত্তে থাকে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
আরও পড়ুন- পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসন রাজনীতি করছে, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাব: অমিত শাহ
৩) ১৪ ডিসেম্বর অর্থাৎ শুক্রবারের মধ্যে রাজ্য প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা জানাতে হবে।
৪) ১২ ডিসেম্বর অর্থাৎ বুধবার পর্যন্ত বিজেপি রথযাত্রা সংক্রান্ত কোনও কর্মসূচি অনুষ্ঠিত করতে পারবে না।
৫) আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে বিজেপির কর্মসূচির তিন চতুর্থাংশই সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ফলে, ততদিন পর্যন্ত রথযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ত বলে মন্তব্য করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
৬) কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও বিজেপি-র তরফ থেকে বারবার অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও, রাজ্য কেন উত্তর দেয়নি, প্রশ্ন তুলেছে আদালত। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য যথা সময়ে উত্তর দিলে আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হত না।
আরও পড়ুন- দিলীপ বলেন হ্যাঁ, কৈলাস বলেন না, ত্রিশঙ্কু অমিত শাহের সভা
প্রসঙ্গত, বুধবার বিজেপির রথ মামলা কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে উঠেছিল। বিজেপি কোচবিহারে এই কর্মসূচি করলে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হতে পারে বলে আদালতকে জানিয়েছিলেন কোচবিহারের পুলিশ সুপার। তাঁর দাবি, বিজেপির এই রথযাত্রায় সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছিল। পাশাপাশি, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তও দাবি করেছিলেন, বিজেপি এই কর্মসূচি রূপায়ন করলে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে স্বরাষ্ট্র সচিবকে চিঠি লিখেছিলেন কোচবিহারের জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপার। এছাড়া গোয়েন্দা সূত্রেও অনুরূপ রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন এজি। এরপরই ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বিজেপির রথযাত্রার কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। তবে, বিজেপির দাবি, গত ২৯ অক্টোবর থেকে প্রশাসনের শীর্ষ স্তর-সহ প্রায় সর্ব স্তরেই এই কর্মসূচির জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল দল। কিন্তু, রাজ্য প্রশাসন কোনও উত্তরই দেয়নি।
আরও পড়ুন- জমি দিয়েছেন অমিতের সভার জন্য, হাসিমুখে ত্যাগ স্বীকার কুন্ডু পরিবারের
এদিন বিজেপির পক্ষে সওয়াল করতে ওঠেন রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল তথা বিশিষ্ট আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র। তিনি বলেন, কোচবিহারের পুলিশ সুপার না হয় তাঁর এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিত অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু, রাজ্যের আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার অনুমতি চাইলেও, এখনও কোনও জবাব দেয়নি প্রশাসন। এই সওয়ালের পরই বৃহস্পতিবার মামলাটি ক্রমশ 'বিজেপির পক্ষে ঘুরতে থাকে' বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। তবে, এদিনের এই রায়ের পর উচ্চতর আদালত তথা এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের দরজা খোলাই রইল।