দুর্গাপুজোর পর আবারও মাতৃবন্দনায় সেজে উঠেছে আলোর শহর চন্দননগর। গঙ্গা তীরের এই শহরে প্রতিবছর জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমান। প্রতিমা থেকে মন্ডপ সজ্জা সেই সঙ্গে মায়াবী আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে গোটা শহর। প্রতিবছরই নিত্যনতুন আলোকসজ্জা দর্শনার্থীদের অবাক করে এবারও তার যেন কোন ব্যতিক্রম নেই। তবে পুজো-প্রতিমা-আলোকসজ্জার মাঝে এ এক যেন সম্পুর্ণ ভিন্ন রকমের খবর। যা আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
মাত্র ৫ বছর বয়স থেকেই প্রতিমা গড়েন পেশায় চিকিৎসক বিপ্লবেন্দু তালুকদার। ছোট বেলা দাদার সহযোগিতায় প্রতিমা গড়ার হাতেখড়ি। তার পর কেটে গিয়েছে ৪৩টা বছর। আর এই চারদশকের বেশি সময় ধরে নিজের হাতেই প্রতিমা তৈরির মত গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলেছেন তিনি। হাজারো কর্মব্যস্ততার ফাঁকে সময় বের করে চলে প্রতিমা তৈরি।
ভদ্রেশ্বর শান্তিনগরের বাসিন্দা চিকিৎসক বিপ্লবেন্দু তালুকদার। পেশায় চিকিৎসক। তাঁর হাতের তৈরি প্রতিমা দেখতে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ। পুজর চারদিন সকল ব্যস্ততা ভুলে পরিবারের সঙ্গে মাতৃবন্দনায় মেতে ওঠেন তিনি। পড়াশুনা চন্দননগরের কানাইলাল স্কুলে। পড়াশুনার পাঠ শেষ করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করার পর সেখানেই তিনি চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত। পাশাপাশি ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্লাড ব্যাঙ্কের স্টেট প্রোগ্রাম অফিসারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে বেরোন। ফিরতে ফিরতে রাত আটটা। এরপর একটু জিরিয়ে হাত লাগান প্রতিমা তৈরিতে।
বিপ্লবেন্দু বলেন, ‘প্রতিমা গড়ার মধ্যে এক অদ্ভুদ শান্তি খুঁজে পাই। পরিবারের সকলে আমার এই কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বিশেষ করে আমার স্ত্রী সব সময়ই আমাকে প্রতিমা গড়ায় উৎসাহিত করেন। আমি মনে করি এই প্রতিমা গড়া পুজোর মধ্যে দিয়ে ফ্যামিলি বণ্ডিং আরও গাঢ় হয়ে যায়। এটা একটা টিম ওয়ার্ক। প্রতিমা তৈরি থেকেই সারাবছরের রসদটা আমি খুঁজে পাই। আরও নিখুঁত প্রতিমা গড়াই আমার লক্ষ্য’। পুরো কাজের জন্য পরিবারকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি।
কাঠামোয় খড় বাঁধা থেকে মাটির প্রলেপ, রং করা থেকে ডাকের সাজে প্রতিমা সাজানো সবই নিজের হাতে করেন বিপ্লবেন্দু। স্ত্রী সঞ্চয়িতা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ও প্রতিমা তৈরির সব কাজটাই নিজের হাতেই করেন। এটাই ওকে শক্তি জোগায়। পুজোর কটা দিন বাড়িতে যেন প্রাণ ফিরে আসে। চক্ষুদানের পরেই যেন মায়ের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। পুজোর দিনগুলোয় প্রচুর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজন আসেন। দশমীর দিন মাকে বিদায় দিতে মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে’।